বৃহস্পতিবার ৩ জুলাই ২০২৫ ১৯ আষাঢ় ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ৩ জুলাই ২০২৫
অগ্নিঝুঁকিতে খুলনার ১৫ মার্কেট
খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৮ মে, ২০২৩, ১০:২৪ AM

খুলনায় অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে অন্তত ১৫টি মার্কেট। যথেষ্ট নির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকা, সরুপথ, অল্প জায়গায় ঘিঞ্জি দোকানপাটসহ নানা কারণে ছোট দুর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে ফায়ার সার্ভিস ও ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, খুলনার বড় বাজারসংলগ্ন খান জাহান আলী হকার্স মার্কেটের দুই পাশে ছোট বড় দোকানের মাঝে পাঁচ থেকে ছয় ফুট প্রশস্ত সরু গলিপথ। পুরো হকার্স মার্কেটেই এমন সরুপথ আর ঘিঞ্জি দোকানপাটে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকে ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনা। এর ঠিক পাশেই খুলনা বড় বাজারের চিত্রও প্রায় একই রকম। শুধু এ দুটি মার্কেট নয়, নগরীর নিক্সন মার্কেট, নান্নু সোহরাওয়ার্দী বিপণি বিতান, হেরাজ মার্কেট, ভৈরব স্ট্যান্ড রোডের বাজারসহ অন্তত ১৫টি মার্কেটকে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস।

এসব মার্কেটের সরুপথে নেই ফয়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের সুযোগ, নেই ব্যবসায়ী বা ক্রেতাদের নিরাপদে বের হওয়ার উপায়; অগ্নি নির্বাপণের যথেষ্ট ব্যবস্থাও নেই। তাই ঝুঁকি নিয়েই দিন পার করছেন এসব মার্কেটের ব্যবসায়ী, দোকানদার ও শ্রমিকরা।

হকার্স মার্কেটে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ব্যবসা করেন মো. আল আমিন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপদে ব্যবসা করতে চাই। কিন্তু এখানে যে পথ ঠিকভাবে দুজন একসঙ্গে চলতে পারে না। সব সময় মানুষের আনাগোনা থাকে। এখন পথ বড় করারও তো কোনো উপায় নেই। অন্য কোথাও চলে যাবো, সেটাও সম্ভব নয়। ব্যবসা না করেও তো থাকতে পারি না। ফায়ার সার্ভিস থেকে আমাদের নিরাপত্তার জন্য যন্ত্রপাতি কিনতে বলেছে। আমরা সেগুলো কিনবো। মার্কেট সমিতির পক্ষ থেকেও মার্কেটের বিভিন্ন স্থানে আগুন নেভানোর মেশিন বসানোর কথা রয়েছে। তবে তাতেও কি ঝুঁকি কমবে?’

এ হকার্স মার্কেটেই চার মাস আগে এক অগ্নিকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে সাইফুল নামে এক শ্রমিক বলেন, রাত ১১টার দিকে মার্কেটের প্রায় সব দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। এমন সময় হঠাৎ ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখা যায়। এ মার্কেটে বেশ কয়েকটি কেমিক্যালের দোকান আছে। কপাল ভালো ছিল আমাদের, আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই ফায়ার সার্ভিস নিভিয়ে ফেলে। একবার আগুন ছড়িয়ে পড়লে পুরো মার্কেট পুড়ে শেষ হয়ে যেতো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন এসব ব্যবসাকেন্দ্রকে অগ্নি নিরাপত্তার আওতায় আনতে সিটি করপোরেশন, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক কাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘খুলনা শহরের বিভিন্ন দফতরের সমন্বয়হীনতার কারণে এসব মার্কেটকে অগ্নিনিরাপত্তা দেয়া যাচ্ছে না। আমি মনে করি, সিটি করপোরেশন, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য যেসব দফতর আছে, তাদের সমন্বিত পরিকল্পনা করতে হবে। তাতে দুর্ভোগ কমে আসবে।’

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মামুন মাহমুদ বলেন, ‘খুলনায় অন্তত ১৫টি মার্কেটকে আমরা অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে জানতে পেরেছি। এসব মার্কেটের মূল সমস্যা সরুপথ। যে পথ দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। আমাদের পরামর্শ থাকবে এই সড়কগুলো প্রশস্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। আর আমরা নিয়মিত এসব মার্কেটের ব্যবসায়ী, দোকান কর্মচারী ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রতিটি মার্কেট ও এর আশপাশে জলাধার সংরক্ষণেরও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, গত এক বছরে খুলনার বড় বাজার এলাকায় অন্তত চারটি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। যখন আগুন লাগে, তখন এসব মার্কেটের যেসব পানির রিজার্ভার আছে; সেখান থেকে খুব একটা উপকার পাওয়া যায় না। এজন্য সবস্থানেই জলাধার সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। 

-বাবু/ সাদরিনা
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  মার্কেট   খুলনা  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত