চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলীতে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ছুরিকাঘাতে আজাদ (৩০) নামে এক নৈশ প্রহরী খুনের ঘটনায় মূল আসামি রাজীব ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৭ ।
গ্রেপ্তাররা হলো- হালিশহর থানার মো. আবুল হাসেমের ছেলে আবু তাহের রাজীব (২৩), লক্ষ্মীপুর জেলার সদর থানার আনোয়ার হোসেনের ছেলে দেলোয়ার হোসেন জয় (২৭) ও হালিশহর থানার মো. ইব্রাহিমের ছেলে রায়হান সজীব (২২) ও নয়াবাজার এলাকার আবুল হাসেমের ছেলে আবুল হাসনাত রানা (৩০)।
র্যাব-৭, চট্টগ্রামের সিনিঃ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নুরুল আবছার বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, নিহত আজাদের স্ত্রী বাদী হয়ে ৪ জনকে এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩/৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের ১৫ ঘণ্টার মধ্যে অভিযান চালিয়ে রাঙামাটি জেলার কোতোয়ালী থানাধীন একটি আবাসিক এলাকার হোটেল থেকে মামলার মূল আসামি রাজী ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে নগরীর কদমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে আরও এক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পূর্বশত্রুতার জের ধরে রবিবার ভোর আনুমানিক সাড়ে চারটায় নয়াবাজার চৌরাস্তা এলাকায় আজাদকে তার বাসার গলির মুখে ওঁৎপেতে থাকা যুবকরা উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। গুরুতর আহতাবস্থায় আজাদকে সিএনজি অটোরিকশায় করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে আজাদ তার ওপর হামলাকারী ওসমান, আবুল হাসান রাজু, ফয়সাল আহম্মদ চৌধুরী ওরফে রিহান ফয়াসাল চৌধুরী ও আবু তাহের রাজিব নামে চার জনের নাম বলে গেছেন। হাসপাতালে পৌছানোর পর দ্রুত চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা সেবা দেয়া শুরু করলেও আজাদকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
ঘটনার পর হত্যাকারীদের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, চসিক প্যানেল মেয়র-১ আব্দুর সবুর লিটনের ছোটভাই নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা খোকনের অনুশারি বলে প্রচার চালানো হয়। যদিও হত্যার শিকার আজাদের বাসস্থান ও হত্যাকাণ্ডের স্থান ১২ নম্বর সরাই পাড়া ওয়ার্ড এলাকায়। এই বিষয়ে প্যানেল মেয়র আব্দুর সবুর লিটন বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, "আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলছে, ইতিমধ্যে মূল হোতাসহ হত্যাকারীরা গ্রেফতার হয়েছে৷ সুতরাং রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য আমি কিংবা আমার পরিবারের সদস্যের নাম জড়ানোকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা হিসেবে প্রতিয়মান হয়েছে৷" হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি যে বা যাঁরা "উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে" চাপিয়ে হত্যাকারীদের রক্ষা করার চেষ্টা করেছিল তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছে প্যানেল মেয়র আব্দুর সবুর লিটন৷
নিহত আজাদের বড় ভাই মফিজুর রহমান বাংলাদেশ বুলেটিনকে জানিয়েছিলেন, এলাকার একটি ঠিকাদার রহিমের মালিকানাধিন খালি জায়গায় নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করতেন নিহত আজাদ ও মফিজ। শনিবার মধ্যরাতে সেই জায়গার এক যুবককে প্রস্রাব করতে দেখে মফিজ বাধা দেন। ওই সময় আজাদ ও তার বড় ভাই ওই যুবককে বকাঝকা করে। সেই যুবককে মফিজ একটি চড়ও দেন। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে ওই যুবক ফোন করে রাজু, ফয়সালসহ সাত আটজন যুবককে ডেকে নিয়ে আসে। রাতে যে যার মত করে চলেও যায়। তবে সেই জের ধরে রবিবার ভোরে ফজরের নামাজের পরপর নিজ বাসার গলির মুখে আজাদকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
এদিকে সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, শুধুমাত্র শনিবারের প্রশ্রাব করার ঘটনার জেরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি৷ নিহত আজাদের সাথে হামলাকারীদের এলাকার ফুটপাথের চাঁদা আদায়ের বিরোধ আরো পুরনো। আজাদ দারোয়ানির কাজ করলেও সে এবং অন্যান্যরা নয়াবাজার মোড়ের ভাসমান দোকান থেকে নিয়মিত টাকা পেতো৷ যদিও আজাদের পরিবারের দাবি সে চাঁদাবাজি করেনি বরং রাতে মালামাল পাহারা দেয়ার বিনিময়ে তাদেরকে টাকা দেয়া হতো৷ দীর্ঘদিন যাবৎ সেই টাকা আদায়ের ক্ষেত্রতে ভাগ বসায় স্থানীয় আরেকটি পক্ষ৷ এক পর্যায়ে আজাদ কোনঠাসা হয়ে যায়। শনিবার রাতে খোলা জায়গাতে প্রশ্রাব করা নিয়ে দারোয়ান মফিজের সাথে যুবকের কথাকাটার এক পর্যায়ে নিহত আজাদ ও তার বড় ভাই সেই ছেলেটিকে বেশ গাল মন্দ করে৷
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলছে, মূলত ঐ ছেলে যাদের সাথে উঠাবসা করে তাদের সাথেই আজাদের ফুটপাথের টাকা আদায় নিয়ে বিরোধ চলছিলো৷ এর আগেও একাধিকবার আজাদের সাথে হামলাকারীদের বাকবিতণ্ডা হয়েছে বলে জানা গেছে৷ মূলত ফুটপাথের টাকার ইস্যু থেকে সৃষ্ট বিরোধের জেরেই আজাদ হামলার শিকার হয়।
বাবু/জেএম