পরকিয়ার জেরে সহবাসের কথা বলে বাড়ির পাশে বাগানে নিয়ে স্ত্রী মমতাজ বেগমকে হত্যা করে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার চালায় স্বামী শাহ আলম।
সোমবার রাত ১১টা থেকে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার মধ্যে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার মুসুল্লিয়াবাদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে মহিপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাত আড়াইটার দিকে মমতাজের স্বামী শাহ আলমকে পাশের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে সব স্বীকার করেন শাহ আলম।
মমতাজের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি খন্দকার আবুল খায়ের।
শাহ আলমের বরাত দিয়ে ওসি আবুল খায়ের জানান, ৩৫ বছরে মমতাজ শাহ আলম দম্পত্তির সংসারে দুটি সন্তান রয়েছে। যাদেরকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই সংসারে তাদের নাতিও রয়েছে। কিন্তু গত প্রায় বছর খানেক আগ থেকে সংসারে অভাব অনটন দেখা দিলে দাম্পত্য জীবনে কলহের শুরু হয় তাদের মধ্যে। স্বামীর আয়ের উৎস বন্ধ হলে ৩৪ মাস আগে থেকে মমতাজ পরকিয়ায় লিপ্ত হয়। পর্যটন এরিয়া হওয়ায় একাধিক পুরুষের সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে পরেন মমতাজ। বিষয়টি শাহ আলম জানতে পারলে মমতাজকে হত্যার পরিকল্পনা শুরু করেন। কখনও পানিতে ডুবিয়ে আবার কখনও বিদ্যুৎতের শর্ট দিয়ে। কিন্তু মমতাজকে হত্যা চেষ্টায় ব্যর্থ হয়।
ওসি জানান, এরপর গত কয়েকদিন ধরে মমতাজকে গলায় ফাস লাগিয়ে হত্যার ছক আকে। সেই অনুযায়ী একটি ওড়না ক্রয় করে সেটিকে কেটে ছোট করে সব সময় সাথে রাখতেন যাতে মমতাজ কিছু বুজতে না পারে। এবং পুকুর-পাড়ের বাগানের স্থানটিও আগে থেকে প্রন্তুত করে রাখছিলেন।
মূলত অন্য পুরুষের সাথে সহবাস করার বিষয়টি শাহ আলম কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। যে কারণে তার মাথায় মমতাজকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা আসে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে জানান শাহ আলম।
পুলিশকে শাহ আলম জানিয়েছেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সোমবার রাত ১১টার দিকে মমতাজকে অনেক বুজিয়ে শুনিয়ে আদর যত্ন করে সহবাসের জন্য রাজি করাতে সক্ষম হন শাহ আলম। তিনি পুলিশকে জানান, বাসায় যেহেতু ছেলে, ছেলের বউ এবং নাতিরা আছে সেই অজুহাত দেখিয়ে বাগানের মধ্যে যেতে রাজি করান মমতাজকে। যেই কথা সেই কাজ। ঘর থেকে বের হয়ে স্বামী স্ত্রী মিলে সেই বাগানে যান। তার পূর্ব পরিকল্পনা চিহ্নিত স্থানে সহবাসে মিলিত হন।
সহবাসের শেষ পর্যায়ে মমতাজ যখন ক্লান্ত ফিল করছিল ঠিক তখনই শাহ আলম তার সাথে থাকা ওড়না দিয়ে মমতাজের মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে মমতাজের গলায় ওড়না পেচিয়ে পাশের পুকুরে ভাসিয়ে দিয়ে বাড়িতে গিয়ে ভিজা লুঙ্গি পাল্টিয়ে শুকনো লুঙ্গি পড়ে পার্শ্ববর্তী তার ভাইর ছেলে শহিদুল চৌকিদারের বাড়িতে গিয়ে উঠে। তিনি আরও বলেন, তোর চাচির সাথে ঝগড়া করে এসেছি। তোর চাচি বিষের বোতল নিয়ে বিষ পানের জন্য ঘর থেকে বের হয়ে গেছে। এ খবর শহিদুল তার চাচার ছেলে অর্থাৎ শাহ আলমের ছেলে রফিকুলকে মোবাইল ফোনে জানালে বাড়ির লোকজন সবাই মমতাজকে খোঁজাখুঁজি শুরু করলে পুকুরের পাড়ে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
পুলিশ জানায়, মমতাজের মুখে আঘাতের চিহ্ন দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিক রাত আড়াইটার দিকে পাশের বাড়ি থেকে শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করলে সাথে সাথে পুরো ঘটনা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন।
ওসি আবুল খায়ের জানান, মমতাজের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আসামিকে আমরা আদালতে প্রেরণের উদ্যোগ নিয়েছি।
বাবু/জেএম