প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বর্তমান বিশ্বের পুরোনো শাসকদের একজন। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পদ মিলে ২১ বছর দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় আছেন। তবে তিনি মুসলিমপ্রধান দেশের শাসকদের মতো নন, যাঁরা অনির্বাচিত বা প্রশ্নবিদ্ধ পথে নির্বাচিত। এ পর্যন্ত তিনি দুবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেছেন, তিন দফা গণভোটের মুখোমুখি হয়েছেন, পার্লামেন্ট ও স্থানীয় পর্যায়ের আরও প্রায় সাতটি নির্বাচন সামাল দিয়েছেন। মুসলিম বিশ্বে এমন রাজনীতিবিদ বেশি নেই। তবে এবার কড়া চ্যালেঞ্জের মুখেও ছিলেন। তাঁর নির্বাচিত হওয়া না হওয়া ভূরাজনীতিরও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হয়ে উঠেছিল।
জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও সময়টা তুরস্কের জন্য বাড়তি গুরুত্বের। কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে দেশটির নবযাত্রার ১০০ বছর হচ্ছে ২০২৩-এ। এরদোয়ান এ রকম একটা ঐতিহাসিক উপলক্ষ বিজয় দিয়েই উদ্যাপন করতে চাইছেন। তবে আসন্ন নির্বাচন কেবল প্রেসিডেন্ট পদে হচ্ছে না, ৬০০ সদস্যের পার্লামেন্টের জন্যও হচ্ছে। যেহেতু ২০১৭ থেকে দেশটির নির্বাহী প্রধান প্রেসিডেন্ট, এ কারণে জল্পনাকল্পনার কেন্দ্রে ছিলেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা। তুরস্কে যদিও জনপ্রতিনিধিদের শাসন চলছে, তবে এরদোয়ানের গত দুই দশকের শাসনের সারসংকলন এভাবেও করা হয় যে দেশটির মানুষ এক ব্যক্তিনির্ভর কেন্দ্রীভূত শাসন বেশি পছন্দ করছে। ঠিক এ কারণেই নিজ দল আক পার্টির চেয়ে এরদোয়ান নিজ ভাবমূর্তির ওপর নির্বাচনে বেশি ভরসা করছেন। ক্ষমতার প্রাথমিক দিনগুলোতে সামাজিক নিরাপত্তামূলক অনেক কর্মসূচি ছিল তাঁর। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও বাড়াতে পেরেছিলেন। এখন সেই তরঙ্গ ধীর হয়ে গেছে মূল্যস্ফীতি ও দুর্যোগে। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট পদের লড়াইয়ে বিরোধী হোমল্যান্ড পার্টির মুহরারম ইনজে প্রার্থী হওয়ায় এরদোয়ানের খানিক সুবিধা হচ্ছে।
২০১৮ সালে তারা প্রায় ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, যা নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি। এরদোয়ান সম্পর্কে কৌতুক করে বলা হয়, নিজ দেশের বাইরের মুসলমানদের কাছে তিনি বেশি জনপ্রিয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমদের বড় এক অংশ মনে করে, এরদোয়ানকে তাদের দরকার। তাঁর মধ্যে তারা একজন শক্তিশালী ‘মুসলিম শাসকে’র ছবি দেখে। বিভিন্ন স্বৈরাচারী পুতুল শাসকদের অধীন থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে মুসলমানরা হয়তো এ রকম মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া দেখান। তবে তুরস্ক এ মুহূর্তে প্রকৃতই বুদ্ধিমত্তার প্রেসিডেন্ট চায়। যদিও তুরস্কের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নেই। নির্মাণ খাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা বিপদে ফেলেছে তাদের। দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে লিরার দরও বেশ পড়ে গেছে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারির জঘন্য ভূমিকম্প কেবল ৪৮ হাজার মানুষের জীবনই কেড়ে নেয়নি, সম্পদের টানাটানিতেও ফেলেছে। এ দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে সমাজে অসন্তোষ আছে। এ দুর্যোগ ১২ বছর পুরোনো সিরিয়ার শরণার্থীদের দুর্ভোগও বাড়িয়েছে এবং স্থানীয় সমাজে শরণার্থীবিরোধী মনোভাবও বাড়াচ্ছে।
তবে সুন্নি মুসলিমদের কাছে এরদোয়ান অর্থনৈতিক বিবেচনার বাইরে বাড়তি কিছু। প্রচুর নাটক-সিনেমার মাধ্যমে জীবন্ত করে তোলা অটোমান ঐতিহ্যের স্মৃতি বুকে নিয়ে তাঁরা মনে করছেন, এরদোয়ান তুরস্ককে অতীত ‘সাম্রাজ্যে’র দাপট এনে দিতে সক্ষম। এ রকম মনোভাবের ওপর দাঁড়িয়েই তিনি সিরিয়া, লিবিয়া ও আজারবাইজানের পরিস্থিতিতে নাক গলিয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পছন্দসই নানা দলকে সহায়তা দিয়েছেন। তবে ভক্ত ও ভোটারদের কাছে এরদোয়ানের প্রতিপক্ষ কেমেল কিলিচদারওলুর আলেভি মুসলমান পরিচয়ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এও সত্য, ব্যক্তিগত ইমেজে এরদোয়ানের শক্তপোক্ত যে ভাবমূর্তি রয়েছে, কেমেলের সেখানে ঘাটতি আছে। দেশটির প্রচারমাধ্যমেও এরদোয়ানের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ স্পষ্ট টের পাওয়ার মতো।
নির্বাচনের প্রথম দফার ব্যবধানটি এরদোয়ানের জন্য এখনো অতিক্রম অযোগ্য স্তরে যায়নি। হয় তো সে কারণেই ভূমিকম্পকে অজুহাত করে তিনি নির্বাচন পিছিয়ে দেননি। বরং দলীয় এমপিদের বড় এক অংশকে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকায় পাঠিয়েছেন পুনর্বাসন উদ্যোগ তদারকির জন্য। অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে এরদোয়ান জানেন, ভূমিকম্পই এ নির্বাচনের প্রচারণার প্রধান বিষয় হয়ে থাকবে, যেখানে এ মুহূর্তে অন্তত পাঁচ লাখ নতুন বাড়িঘর দরকার। অনেক দিন ধরে নির্মাণ খাত তুরস্কের অর্থনীতির প্রধান এক স্তম্ভ হলেও সর্বশেষ ভূমিকম্পে শীর্ণ কাঠির মতো বাড়িঘরের পড়ে যাওয়া দেখাল, এ খাতে নজরদারির অভাব ও দুর্নীতি কত প্রবল ছিল। অথচ ঐতিহাসিকভাবে ভূমিকম্পপ্রবণ এদেশে নির্মাণ খাতে দুর্নীতি বন্ধ করার পুরোনো আকুতি রয়েছে। রাষ্ট্র সে প্রবণতা সামাল দিতে ব্যর্থ হলেও ভূমিকম্পের পর দুর্গত অঞ্চলের জন্য দেশটির সামাজিক সাড়া অভিবাদন পাওয়ার মতো ছিল। তুরস্ক যদিও প্রায় ইউরোপীয় এক দেশ এবং ন্যাটোর সদস্য, কিন্তু পশ্চিমারা এরদোয়ানকে নিয়ে গত দুই দশক খুব বেশি সুখে ছিল না। সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে রাশিয়াকে সাহায্য এবং সুইডেনের ন্যাটোভুক্তিতে আপত্তি দেখিয়ে এরদোয়ান বেশ বিরক্ত করেছেন ইউরোপের যুক্তরাষ্ট্রপন্থিদের। আক পার্টি আবার ক্ষমতায় থেকে গেলে তুরস্কের ইইউভুক্তি যে আরেক দফা পিছিয়ে যাবে, সেটা প্রায় নিশ্চিত করে ভাবছিল তারা। এরদোয়ান ন্যাটোতে থাকার পরও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে বিশ্বজুড়ে বহুবার ভিন্নমত পোষণ করেছেন। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে রুশদের সঙ্গে তুরস্কের বাণিজ্য বেশ বেড়েছে। উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানে এরদোয়ানকে হাজির হতে দেখে ফ্রান্সও বিরক্ত। এরদোয়ানের এ সাহস দেশে-বিদেশে তাঁর দেশের স্বতন্ত্র এক সাহসী ভাবমূর্তি তৈরি করেছে। সম্প্রতি তিনি মধ্যপ্রাচ্যে পুরোনো প্রতিপক্ষ সৌদি আরবের সঙ্গেও বিস্ময়করভাবে বিরোধ মিটিয়ে ফেলেছেন। তাঁর আমলে সমরাস্ত্র খাতে তুরস্ক বেশ এগিয়েছে।
তবে এসব অর্জনের বিপরীতে পশ্চিমারা মে মাসে পরিবর্তন দেখতে চেয়েছিল। আমেরিকার প্রথম সারির প্রায় সব কাগজে তুরস্কের পরিস্থিতির নির্মোহ বিশ্লেষণের চেয়ে এরদোয়ানের নিন্দাই বেশি মেলেছে। তবে তারা এও জানে, এরদোয়ান বহু নির্বাচন করা মানুষ এবং তিনি জানেন কীভাবে জিতে আসতে হয়, ফিরে দাঁড়াতে হয়। ২০ বছর ধরে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার দলের সদর দপ্তরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলছেন, আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতা যে তারই সেটা নিশ্চিত। অন্যদিকে, তার প্রতিপক্ষ কামাল কুলুচদারুলুর জন্য এই নির্বাচনে জয় পাওয়ার জন্য সব হিসেব মিলে গেছে বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে। কিন্তু ভোটের অসম্পূর্ণ ফলাফলের জন্য প্রথম রাউন্ডে তিনি প্রেসিডেন্টের পেছনে পড়ে গেছেন। প্রথম ধাপে এরদোয়ান পেয়েছেন ৪৯.৪ শতাংশ ভোট, তার প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ৪৫ শতাংশ এরও কম ভোট। প্রথম পর্বে জিততে হলে প্রার্থীদের অন্যূন ৫০ শতাংশ ভোট পেতে হবে। এরদোয়ানের নেতৃত্বাধীন জোটও পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার দেয়া প্রাথমিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা যাচ্ছে। ফলে নির্বাচনে দ্বিতীয় দফা ভোটে যেতে এই ফলাফল তাকে উৎসাহ জোগাতে পারে।
২০১৬ সালে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর এরদোয়ান নাটকীয়ভাবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছেন। গত কয়েক মাস ধরে তুরস্কের বিভিন্ন বিরোধী দল একত্রিত হয়ে প্রবলভাবে চেষ্টা করেছে তার শাসনের অবসান ঘটাতে। এবারের এই নির্বাচনটি পশ্চিমা দেশগুলো খুব ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কারণ কুলুচদারুলু তুরস্কে গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি তার নেটো মিত্রদের সাথে সুসম্পর্কের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সরকার পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে তার পতনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছে। পাশাপাশি এরদোয়ান অনেক পোলস্টারের ভবিষ্যদ্বাণীকে মিথ্যে প্রমাণ করেছেন, যারা বলেছিলেন যে নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী এগিয়ে থাকবেন এবং এমনকি প্রথম ধাপেই সরাসরি জয়লাভ করতে পারেন।
কামাল আতাতুর্কের হাতে আধুনিক তুর্কি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পর তুর্কি সমাজ এখন যে কতটা বিভক্ত, ভোটের এই ফলাফল সেটাই নিশ্চিত করছে যদিও। উত্তর সিরিয়া পরিস্থিতির জেরে রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের যে আঁতাত হয়েছে, তা এরই মধ্যে পূর্ণমাত্রার সম্পর্কের দিকে গেছে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক খাতে। এক্ষেত্রে তিনটি প্রভাবক কাজ করছে। তুরস্কের ওপর রাশিয়া ধীরলয়ে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। রাশিয়াকে বন্ধুভাবাপন্ন মনে করার মাত্রা তুরস্কের জনগণের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে। আটলান্টিকের পারে বাড়ছে দ্বন্দ্ব; ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনৈক্য দেখা দিয়েছে। একসময় পশ্চিমা জোটে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। এটাই তুরস্কের প্রাচ্যমুখী কৌশল গ্রহণের কারণ। তুরস্ক ইউরেশীয় ঐক্যের দিকে যাবেÑ এমন সম্ভাবনা প্রবল।
এই মুহূর্তে সিরিয়া ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা তুরস্কের জন্য অপরিহার্য। কুর্দি সংকটের পাশাপাশি আরো অনেক চ্যালেঞ্জ তাঁকে মোকাবেলা করতে হবে। একদিকে তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নিয়ে খুবই সন্দিহান। অন্যদিকে ভূ-রাজনৈতিক কারণে সিরিয়ার পুনর্গঠনে রাশিয়ার প্রভাবের ব্যাপারে সতর্ক। মোদ্দা কথা হলো, এরদোয়ান বরাবর একলা পথিক; তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক উন্নয়নের জোরালো চেষ্টা করেছেন তিনি। দেশের স্বার্থে নাছোড়বান্দা এই রুশ নেতাকে নিজের মতো ভেবে এরদোয়ান যদি তাঁকে এক ঐতিহাসিক মানব হিসেবে দেখেন, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। এর কারণ সম্ভবত এই যে বিশ্বনেতাদের মধ্যে একমাত্র পুতিন তাঁকে সমান সমান অংশীদারির প্রস্তাব দিয়েছেন। পশ্চিমা জোটের যেসব নেতার সঙ্গে এরদোয়ানের সম্পর্ক আছে, তাঁরা তাঁকে অবজ্ঞা করেছেন এবং কিনারে ঠেলে দিয়েছেন। পশ্চিমা বিশ্লেষকরা তুরস্কের নির্বাচনে তাঁর পরাজয় চেয়েছিলেন। যদিও তারা ব্যর্থ হয়েছেন, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়।
এরদোয়ানের নেতৃত্বাধীন তুরস্ক বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রবল বাধা সৃষ্টি করেছে বলে পশ্চিমের যে অভিযোগ ছিল সেটাও আবার মিথ্যা প্রমাণিত হল। গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অদ্ভুত সব ফল পাওয়া যায়। ভারতের ক্ষমতাসীন দল ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে মাত্র ৩১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। গতবছর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইমানুয়েল ম্যাখোঁ প্রথম দফায় পেয়েছিলেন ২৪ শতাংশ ভোট; প্রথম দফায় ৫০ শতাংশ ভোট পাওয়া খুবই কঠিন। তুরস্কের নির্বাচনে রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের অসাধারণ বিজয়ের তাৎপর্য সম্পর্কে অত্যুক্তি করা কঠিন। যা-ই হোক, এরদোয়ানের এবারের সরকারের পররাষ্ট্রনীতি কেমন হতে পারে? মোটা দাগে বড় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা আছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক জটিলতার মধ্যে তুরস্কের স্বার্থ রক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার নীতিই তিনি অব্যাহত রাখবেন। পশ্চিমের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সংকটগ্রস্ত। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক জটিল হয়ে আছে, সহজে এর সমাধান হওয়ার নয়। ইসরায়েলের সঙ্গে মিটমাট করার কোনো ইচ্ছাই তাঁর নেই। অথচ সেটা না করলে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক মসৃণ হবে না। নির্বাচনের আগে তাঁর বিরুদ্ধে মার্কিন গণমাধ্যম ও বিশ্লেষক সংস্থাগুলো যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছিল, তাতে ইহুদি লবির সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি কোনোভাবেই তাঁর ভোলার কথা নয়। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ইসরায়েলের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তুরস্ক-ইসরায়েল সম্পর্কোন্নয়ন সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা এরদোয়ান ভাববেন একেবারে শেষ সময়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানো বা ন্যাটো থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় তাঁর নেই। ইউরোপের প্রযুক্তি, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ওপর তুরস্কের নির্ভরতা অনেকখানি। তুরস্কের অভিজাত শ্রেণি ঐতিহ্যগতভাবে পশ্চিমপিন্থ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গেও বিরোধে জড়াতে চায় না তারা। এসবের মধ্যেই এরদোয়ান তাঁর প্রাচ্যমুখী কর্মকাণ্ড বজায় রাখবেন এটাই তুরস্কসহ বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা।
লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট
-বাবু/এ.এস