# প্রতিদিন উঠছে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা
# ব্যবসায়ীদের দেয়া হচ্ছে হুমকি, করা হচ্ছে মারপিট
রাজধানীর খিলগাঁও থানার পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে এর প্রধান হলো নুর হোসেন নুর ও তার সহযোগী আলমাস। পণ্যের ছোট ভ্যান, লেগুনা, অটো এবং অস্থায়ী দোকান থেকে শুরু করে এমন কোন বিষয় নাই যেখান থেকে চাঁদা উঠাচ্ছে না। প্রতিদিন ১০০ থেকে শুরু করে কোন কোন ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে। কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে পুলিশের ভয়ভীতি দেখায় এমনকি মারপিটও করে। পুলিশের সোর্স পরিচয় দেয়া এই দুই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
খিলগাঁও থানার ওসি মনির হোসেন মোল্লা তাদের চেনেন না বলে জানিয়ে বলেন, আমি তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির মূল হোতা নুর হোসেন নুর। আর তার সহযোগী হলো আলমাস। পুরো খিলগাঁও থানা চষে বেড়ায় এরা। মেরাদিয়া থেকে সিপাহীবাগ, মাদারটেক থেকে নন্দিপাড়া এমন কোন এলাকা নাই যে এলাকায় তারা যায় না। ছোট পন্যের ভ্যান গাড়ি, অস্থায়ী দোকান সবখান থেকেই চাঁদা উঠান।
তারা জানান, ভ্যান থেকে প্রতিদিন হিসেবে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে কখনো ২০০/৩০০ টাকা পর্যন্ত নেয়। অস্থায়ী দোকানগুলো থেকে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা করে নেয়। এছাড়া লেগুনা, অটো, অটোর স্ট্যান্ড, গ্যারেজ, রিকশা গ্যারেজ, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, এভাবে পুরো খিলগাঁও থানা এলাকায় চাঁদাবাজি করছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, নুর হোসেনের সঙ্গে পুলিশের বিশেষ সখ্যতা রয়েছে। তাছাড়া পুরো এলাকা জুড়ে এভাবে কেউ পুলিশের নামে টাকা উঠাতে পারে না। তাকে টাকা না দিলে কেউ রেহাই পায় না। কেউ টাকা দিতে না চাইলে তাকে নানা হুমকি এমনকি মারপিটও করে।
ভুত্তভোগীদের অভিযোগ, প্রতিদিন এভাবে কমপক্ষে ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত উঠায়। তাহলে প্রতিমাসে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদাবাজি করছে এই নুর।
দশতলা এলাকার ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আশরাফ হোসেন বলেন, পূর্বের ওসি থাকাকালীন সময়ে বেশ কয়েকবার এটি নিয়ে বলা হলেও কর্ণপাত করেননি। সম্প্রতি তিনি বদলি হয়ে গেছেন। নতুন ওসি যোগদান করায় তার দৌরাত্ম্য কমবে বলে মনে হলেও তার দৌরাত্ম্য কমেনি বরং আগের মতই বেপরোয়া।
মেরাদিয়া এলাকার ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন বলেন, সকালে সবজির ভ্যান নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ানোর পরপরই চলে আসে নুরুর লোক। কমপক্ষে ১০০ টাকা না দিলে মারপিট শুরু করে। ভয়ে তারা টাকা দিয়েও দেন।
সেলিম জানান, অনেক সময় ২০০ টাকাও চায়। তার চাহিদার টাকা না দিলেই সেই দিন আর দাঁড়ানোই যাবেনা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৬ মাস ধরে সবজির ব্যবসায় প্রতিদিনি তাকে টাকা দিতে হচ্ছে।
পোড়াবাড়ি এলাকার মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল হক বলেন, সকালে মাছ নিয়ে রাস্তায় বসেন। ১০ টা ১১ টার মধ্যে উঠেও যান। কিন্তু সকালে বসামাত্র নুরুর লোক এসে ২০০ কোনদিন ৩০০ নিয়ে যায়।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা ছোট ব্যবসায়ী এভাবে টাকা দিতেও পারিনা। কিন্তু তারা জোর করে এসে নিয়ে যায়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিস্কুট ফ্যাক্টরির মালিক বলেন, প্রতিদিন তাকে ৫০০ টাকা দিতে হয়। না দিলে পুলিশের ভয় দেখায়। ভয়েই সবাই তাকে টাকা দেয়। পুলিশকে না দিয়ে সে কি আর একা খেতে পারে এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।
অটো গ্যারেজ দেখাশুনা করে উজ্জ্বল বলেন, রাস্তায় অটো চললে তাকে প্রতিদিন টাকা দিতে হবে আবার গ্যারেজের জন্যও টাকা দিতে হবে। টাকা না দিলেই সে ঝামেলা করে, পুলিশ আনে।
তিনি বলেন, পুলিশের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে। প্রতিদিন খিলগাঁও থেকে দেড় দুই লাখ টাকা উঠায়। তাহলে মাসে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা।
পুলিশের নাম করে দিনের পর দিন এভাবে চাঁদা উঠানোয় অনেক ব্যবসায়ীর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। চাঁদা না দিলে মারপিটসহ মাদকের মামলায় ফাঁসানোর হুমকিতে ব্যবসায়ীরা ক্ষোভে ফুঁসছে। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
এদিকে নুর হোসেন নুরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
-বাবু/এ.এস