রবিবার ৬ জুলাই ২০২৫ ২২ আষাঢ় ১৪৩২
রবিবার ৬ জুলাই ২০২৫
বিএম ডিপো ট্র্যাজেডি: হয়নি বিচার, মেলেনি ক্ষতিপূরণ
কামরুজ্জামান রনি, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩, ৮:২৫ PM
সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে বাংলাদেশের ইতিহাসের ভয়াবহ বিষ্ফোরণের এক বছর পূর্তি হলো। গত বছরের ৪ জুন বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিষ্ফোরণে ৫১ জন নিহত হয় এবং প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক আহত হয়। বিএম ডিপোতে বিষ্ফোরণের একটি বছর পেরিয়ে গেলেও আজো সেদিনের ঘটনা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি৷ ফলে এক বছরেও হয়নি বিচার। একই সাথে সেদিনের ঘটনায় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তরা পায়নি ন্যায্য ক্ষতিপূরণ আর তাদের অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সেদিনের ঘটনায় আহত একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সব কাগজপত্র জমা নিলেও চিকিৎসার পর আর কোন সাহায্য মেলেনি। আদৌ কোন ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে কি না সেটাও নিশ্চিত কোন আশা পাচ্ছি না।

যদিও বিষ্ফোরণের পর হতাহতরা চিকিৎসাধীন সময়ে বিএম ডিপোর মালিকদের কারো দেখা পায়নি। তবে সে সময় চট্টগ্রামের সর্বস্থরের জনগণ মানবিক সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলো। অথচ দেশের শ্রম আইন অনুসারে সব আহত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেয়া বাধ্যতামূলক।  দুর্ঘটনার পর বিএম ডিপো যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কয়েক জনকে কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। তবে বেশীর ভাগ ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া প্রতিশ্রুতির বস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের। 

এদিকে বিএম ডিপো দুর্ঘটনায় আহত-নিহতদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম যুব ট্রেড ইউনিয়ন নেটওয়ার্ক। উক্ত ঘটনার ১ বৎসর পূর্তিতে চট্টগ্রাম যুব ট্রেড ইউনিয়ন নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে রবিবার বেলা ৪টায় এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়।  বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ মিয়ার সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক শ্রমিকনেতা ফজলুল কবির মিন্টুর সঞ্চালনায় উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচীতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিলস এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার পাহাড়ি ভাটাচার্য, এডভোকেট ইকবাল হোসেন, লতফিন্নানাহার সোনিয়া, জাবেদ আলম, মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, নাজমা আকতার, নূর আলম, মোহাম্মদ হানিফ, জাহেদ উদ্দিন শাহিন, হুমাইয়ুন কবির, নার্গিস আলম।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, দুর্ঘটনার পর পর চট্টগ্রামের স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এবং বিএম কন্টেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত বিবৃতি এবং বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা, মারাত্মক আহত প্রত্যেক শ্রমিককে ৬ লক্ষ টাকা এবং অন্যান্য আহতদের কমপক্ষে ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে ডিএনএ টেস্টে চিহ্নিত না হওয়ার অজুহাতে এখনো ৭/৮ জন নিহত শ্রমিকের পরিবারকে কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। এছাড়া আহতদের বড় একটা অংশ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পায়নি। আহতদের ৩৬ জন ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় বিগত ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিল। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক উক্ত ৩৬ জনের তালিকা বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানোর পরেও অদ্যাবধি অনেক আহত শ্রমিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পায়নি। বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের সাথে আহত শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও তারা সুনির্দিষ্ট কোন জবাব না দিয়ে বিভিন্নভাবে সময় ক্ষেপণ ও হয়রানি করছে। শ্রম আইনের ১২৩ ধারা অনুসারে চূড়ান্ত পাওনা বা ক্ষতিপূরণের টাকা সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক হলেও দীর্ঘ ১ বৎসর সময়েও শ্রমিকেরা তাদের পাওনা পাচ্ছেনা।

তাছাড়া আইএলও কনভেনশন ১২১, বাংলাদেশ শ্রম আইন ১৫১ ধারা এবং তফশীল ৫ অনুসারে আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা ও সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বেতন প্রদানের কথা উল্লেখ থাকলেও আহত শ্রমিকেরা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর থেকে আর কোন ধরণের চিকিৎসা সহযোগিতা পায়নি।

আহত শ্রমিকদের অনেকের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, অনেকে কানে শুনতে পায়না, অনেকে পায়ের উপর ভর দিয়ে বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।  ফলে তাদের প্রায় সবাইকে পঙ্গুত্বের জীবন বরণ করে নিতে হচ্ছে এবং বিগত ১ বৎসর যাবৎ তারা আয়-রোজগারহীন অবস্থায় জীবন যাপন করতেছে। আবার তাদের প্রায় প্রত্যককে চিকিৎসা বাবদ মাসে ৭/৮ হাজার টাকা করে খরচ করতে হচ্ছে। যা আয়-রোজগারহীন এসকল অসহায় শ্রমিকদের পক্ষে যোগাড় করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই চট্টগ্রাম যুব ট্রেড ইউনিয়ন নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে নিহত অচিহ্নিত শ্রমিকদের দ্রুত চিহ্নিত করে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাদের পরিবার প্রতি ১০ লক্ষ টাকা, মারাত্মক আহতদের ৬ লক্ষ টাকা এবং অন্যান্য আহতদের ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং আহতরা পূর্ণাঙ্গ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য চট্টগ্রাম যুব ট্রেড ইউনিয়ন নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানানো হয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, অবিলম্বে এও দাবি কার্যকর না হলে চট্টগ্রাম যুব ট্রেড ইউনিয়ন নেটওয়ার্ক ভবিষ্যতে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের শ্রমিক ও নাগরিক সমাজকে সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। এই বিষয়ে বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি। 
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত