শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫ ২১ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫
ভারতীয় সেনাপ্রধানের বাংলাদেশ সফরের বিশ্লেষণ
ড. শকুন্তলা ভবানী
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩, ১১:০১ AM

গত কয়েক বছরে ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এই প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দু’দেশের রাষ্ট্রপতিদের পারস্পরিক সফর, প্রশিক্ষণ উদ্যোগ বাস্তবায়ন, সমবায় প্রশিক্ষণ অনুশীলন এবং মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ ত্রাণ এর মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়। ভারত দীর্ঘদিন যাবত বাংলাদেশের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে  মূল্যায়ন করে আসছে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সমর্থন করে এ সম্পর্ক আরও গভীর করার চেষ্টা করে। ভারতের বিখ্যাত ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ প্রোগ্রামে বাংলাদেশ একটি মূল মিত্র। ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ, গবেষণা ও প্রযুক্তি, সামরিক ও নিরাপত্তা, সমুদ্রবিষয়ক, জলবায়ু পরিবর্তন এবং টেকসই উন্নয়নসহ সবক্ষেত্রেই দুই দেশের মধ্যে যথেষ্ট সহযোগিতা রয়েছে।

৫ জুন সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডে প্রতিবেশী দেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করতে এবং দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করতে দুই দিনের সফরে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। জেনারেল পান্ডে সেনাপ্রধান হিসেবে দ্বিতীয়বার বাংলাদেশে সফর করছেন। গত বছরের জুলাইয়ে তিনি শীর্ষ পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো সেখানে যান।

দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করার উপায় বের করতে সেনাপ্রধান এই সফরে বাংলাদেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করবেন। সেনাপ্রধান সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার এবং  বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গেও আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ভারত সফর করেন এবং চেন্নাই অফিসার্স ট্রেনিং একাডেমিতে পাসিং আউট প্যারেড পর্যবেক্ষণ করেন। সেনাবাহিনীর তথ্যমতে, যৌথ সামরিক মহড়া এবং সিনিয়র সামরিক কমান্ডারদের ঘন ঘন সফরসহ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা কার্যক্রম দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করতে সহায়তা করে।

সেনাপ্রধানের সফর অবশ্য বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে; কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। নির্বাচনের আগাম নতুন ভিসা নীতি সাম্প্রতিক একটি ইস্যু। এটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে বাংলাদেশের প্রতি একের পর এক পদক্ষেপ নিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে অবজ্ঞা করে আসছে; ফলে ভারত এখন এসব কর্মকাণ্ডে অস্বস্তিতে পড়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান চাপ বাংলাদেশ সরকারকে চীনের কাছাকাছি ঠেলে দিতে পারে। তাই ভারত বাংলাদেশকে কৌশলগতভাবে সহায়তা করতে পারে। বাংলাদেশ পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার পথ অনুসরণ করলে প্রতিবেশী ভারতের জন্য কী অবশিষ্ট থাকবে?

উত্তর-পশ্চিম ভারতের নিরাপত্তা বজায় রাখতে এবং বাংলাদেশে ভারতীয় কৌশলগত ও বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষার জন্য ভারতের বাংলাদেশের হাসিনা সরকারের প্রয়োজন। এই সফরটি বাংলাদেশ এবং ভারতের ‘অসামান্য’ দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্কের সাথে সংযুক্ত বলে মনে হচ্ছে। সেনাপ্রধানের সফর দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে পারে; বিভিন্ন কৌশলগত উদ্বেগের বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে আরও সমন্বয় ও সহযোগিতার জন্য একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে।

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দু’দেশ ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করে। এই সফর পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করতে পারে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি করতে পারে। কিছু দুশ্চিন্তা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ ও ভারতকে অবশ্যই বিশ্বস্ত মিত্র হিসেবে সহযোগিতা করতে হবে। এই সফরের ফলে ভারত ও বাংলাদেশ তাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও মজবুত করেছে।

ভারত বাংলাদেশকে প্রতিরক্ষা পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য এরবং প্রতিরক্ষা প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করবে। ভারত বাংলাদেশি সামরিক বাহিনীকে প্রযুক্তিগত ও লজিস্টিক সহায়তার পাশাপাশি বিশেষায়িত প্রশিক্ষণও দেবে। দু’দেশের সশস্ত্র বাহিনী সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দু’দেশের সশস্ত্রবাহিনী একাধিক স্তরে একে অপরের সাথে সহযোগিতা ও সমন্বয় করে প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদাওে ভূমিকা রাখছে।

দ্বিপাক্ষিক সামরিক সহযোগিতার পরিপ্রেক্ষিতে, ভারত-বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি কর্মী প্রেরণ করেছে। সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের অটল অবস্থান সবধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই ভারতের নীতির সাথে সামঞ্জস্য। উত্তর-পূর্ব ভারতে বিদ্রোহের বর্তমান নিম্ন অবস্থানের কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের সাহায্যের জন্য প্রশংসা করেছেন এবং তাদের দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক ও বাণিজ্য জোরদার করার ওপর জোর দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ও ভারত জোটের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা উপাদানগুলোকে শক্তিশালী করতে প্রতিরক্ষা বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারে। সম্ভাব্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিরক্ষার দিকগুলো আরো বাড়ানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া উচিত। 

লেখক : সহকারী অধ্যাপক (কলকাতা) এবং দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষক

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত