সোমবার ৭ জুলাই ২০২৫ ২৩ আষাঢ় ১৪৩২
সোমবার ৭ জুলাই ২০২৫
বিএনপির ষড়যন্ত্রের রাজনীতি কাম্য নয়
ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
প্রকাশ: রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩, ৩:৩১ PM

বিএনপি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি বিতর্কিত দল। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চর্চাকে ব্যাহত করতে তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৪ বছরের কঠোর পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রকে ব্যাহত করে অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় আসতে বিএনপি মরিয়া হয়ে উঠেছে। অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় আসতে তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের পন্থা অবলম্বন করেছে এবং করতেছে।কখনো  জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করে, নির্বাচন বর্জন করে, কখনো সরকার এবং সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীদের নিয়ে সমালোচনা করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট করার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ গণতন্ত্র এবং জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ সরকার এবং গণতন্ত্রমনা সচেতন বাঙালিদের জন্য বিএনপির বিভিন্ন সময়ে অবলম্বনকৃত সব পন্থা ব্যবহার করেও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিনষ্ট করার তাদের যে অসাধু উদ্দেশ্য তা কোনোভাবেই সফল হচ্ছে না। স্বাধীনতার এবং জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে তাদের সব ধরনের অপপ্রচার এবং অপপ্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় তারা তাদের রাজনীতির কৌশল বদলে দিয়েছে। তারা এখন রাজনীতির নতুন পন্থা অবলম্বন করেছে। অবলম্বনকৃত রাজনীতির এই পন্থায় তাদের রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের সফল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। আর এরই ধারাবাহিকতায় তারা লবিস্ট নিয়োগ করে ৬ কংগ্রেসম্যানের মাধ্যমে জাতিসংঘের শান্তিমিশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার অপপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ভাবছে যে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং শান্তি-শৃঙ্খলা মূলত সেনাবাহিনীর দ্বারা স্বাভাবিক রয়েছে। বিএনপি বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে  বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করেও দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অস্বাভাবিক করে তাদের অপরাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে মূলত এই সেনাবাহিনীর একান্ত প্রচেষ্টার ফলে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে গড়া বাহিনী। তারা দেশের গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা এবং দেশের মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন নিশ্চিত করণে সদা সচেষ্ট। দেশকে এবং দেশের মানুষকে নিয়ে সবধরনের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্র ও চক্রান্ত রুখে দিতে তারা সদা প্রস্তুত।
শুধু অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা নয় বরং আন্তর্জাতিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশের গৌরব আমাদের সুশৃঙ্খল এই সেনাবাহিনী। জাতিসংঘের শান্তিমিশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণে বাংলাদেশের রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। দেশের ক্রান্তিলগ্নে নিজেদের জীবন বাজি রেখে জনগণের পাশে বন্ধু হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। নানা সময়ে দেশের অভ্যন্তরে জনমানুষের যা কল্যাণকর, মঙ্গলজনক সেখানে প্রয়োজনমতো পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সেনাবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা। বিশ্বমানবতা প্রতিষ্ঠায় আমাদের শান্তিরক্ষী বাহিনীর রয়েছে অসামান্য অবদান। কারণ ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি,  গোষ্ঠী রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে বিচিত্র রাজনৈতিক আদর্শ। এসব সামাজিক ভেদাভেদ এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যকে পিছনে ফেলে সকলকে নিয়ে সহাবস্থান নিশ্চিত করছেন শান্তিরক্ষীরা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রায় দুইশত আর্মাড পারসোনাল ক্যারিয়ার, অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যানবাহন নিয়ে তাদের অপারেশন পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা মিশন এলাকায় বিবদমান দলকে নিরস্ত্রীকরণ, মাইন অপসারণ, সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তা প্রদান, সড়ক ও জনপথ এবং স্থাপনা তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। কঙ্গো, মালি, সুদান, সাউথ সুদান, সাহারা, লেবানন, হাইতি এবং পূর্ব তিমুরে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল নাম।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই অর্জন যা আজ পুরো বিশ্বে বহুল সমাদৃত তা একদিনেই তৈরি হয়ে যায়নি। এর পিছনে অনেক সময় দিতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে। তাদেরকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে  তুলতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার বিনিয়োগ করেছে কোটি কোটি টাকা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার হলো একমাত্র সরকার  যে কিনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা এবং জনগণের শান্তিপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করণে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে গড়ে তুলেছে সফল এক সেনাবাহিনী যা আজ বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশের সম্মান ও খ্যাতি আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরতে ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ সরকারের এই সেনাবাহিনী। যে  সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে দেশকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গৌরবের সাথে তুলে ধরেছে তাদের প্রশংসা না করে বরং তাদের বিরোধিতা করা এবং তাদেরকে নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র করার মতো ঘৃণ্য কাজ করছে বিএনপি। যার ফলে এই দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে তীব্র প্রতিবাদ ব্যক্ত করছি। রাজনৈতিক আদর্শহীন বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন ক্ষমতার  লোভে অন্ধ হয়ে এখন তারা সাদাকে কালো আর কালোকে সাদা করে অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দৌড়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে।  তাদের বর্তমান রাজনীতি মূলত আমাদেও সেনাবাহিনী তথা সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে। কেননা বিএনপি দেখছে যে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে এবং দিকনির্দেশনায়  সেনাবাহিনীর সদস্যরা আজ মানসম্মত জীবন ও শান্তিপূর্ণ জীবন পরিচালনা করছে। আর সেনাবাহিনীর সদস্যরা যদি শান্তিপূর্ণ জীবন পরিচালনা করে তাহলে দেশে অশান্তির সৃষ্টি করবে কীভাবে? আর  দেশে অশান্তি সৃষ্টি কওে দেশ এবং দেশের মানুষকে অশান্ত করতে না পারলে বিএনপির অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসার তো কোনো পথই তৈরি হবে না। এই জন্যে বিএনপির বর্তমান রাজনীতি এখন সেনাবাহিনী এবং সেনবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা লবিং করে রিপাবলিকান ৬ কংগ্রেসম্যানকে দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের  প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং তার সদস্যদের শান্তিরক্ষী মিশনে নিষেধাজ্ঞা দিতে অনুরোধ করিয়েছেন। এর একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের অনুরোধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং তার সদস্যদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেয় তাহলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আর শান্তিরক্ষী মিশনে অংশ নিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে মানসম্মত জীবন পরিচালনা করতে সক্ষম হবে না। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতেও তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আর এমন হলে সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অভাব হবে যা পরিশেষে দেশের পরিবেশকে অশান্ত করে তুলবে। আর দেশের পরিবেশ অশান্ত হলে বিএনপি পিছনের দরজা দিয়ে অবৈধভাবে পূর্বের ন্যায় ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। দেশের গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হতে বিএনপি এখন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাজনীতি পরিচালনা করছে। ক্ষমতার লোভে কতটা অন্ধ হলে আন্তর্জাতিকভাবে সফল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও রাজনীতি করতে পারে বিএনপির মতো একটা দল তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। বিএনপির এই অপরাজনীতি সত্যিকার অর্থে ন্যক্কারজনক। কিন্তু বিএনপি মূলত এখন বোকার স্বর্গে বাস করছেন।

বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে তারা গোপনে যতই অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে ততই বাংলাদেশের জনসাধারণের সমর্থন তারা হারাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে আর চায় না। বিএনপি জানে যে বাংলাদেশের মানুষ তাদেরকে এখন আর চায় না; তাই তারা গণতান্ত্রিক পন্থায় না হেঁটে বরং হাঁটছে ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্তের পথে। বিএনপি বুঝে গিয়েছে যে, জনগণের সমর্থন তাদের পিছনে নেই এবং জনগণের সমর্থন নিয়ে তারা কোনোদিনও ক্ষমতায় আসার কোনো সুযোগ নেই। তাই তারা বেছে নিয়েছে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন রকম আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্রে।

অপরদিকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, গণতন্ত্র, জনগণের সমর্থন ও ক্ষমতায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশেকে এবং বাংলাদেশের মানুষের জীবনকে উন্নয়নের স্বার্থে ১৯৭৫-এ ১৫ আগস্টে হারিয়েছে নিজের পরিবারের সবাইকে এবং নিজের জীবনের সকল সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়েছে। বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক চর্চা এবং শান্তি-শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনধারা অব্যাহত রাখতে। যতদিন আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে এই  দেশ ততদিন পথ হারাবে না এই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলদেশ। বিএনপি যতই বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের সরকার এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন রকম অভ্যন্তরীণ ও  আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে লিপ্ত হবে ততই শক্ত হস্তে প্রতিহত করা হবে তাদের। কারণ ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে এবং ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় কোনো ধরনের অপরাজনীতিবিদ এবং ষড়যন্ত্রকারীদের ঠাঁই হবে না। শক্ত হস্তে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করে বাংলাদেশের শান্তি শৃঙ্খলা ধরে রেখে বাংলাদেশকে একটি আদর্শ উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে শেখ হাসিনার সরকার বদ্ধপরিকর।

লেখক : ট্রেজারার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

-বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত