এরশাদ সরকারের পতনের পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিএনপির দখলে ছিল নেত্রকোনা-৩ এই সংসদীয় আসন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করায় আসনটি হারাতে হয়। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি নির্বাচন করলেও প্রার্থীর গ্রহণ যোগ্যতা না থাকায় হেরে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো ভুল করতে চায় না বিএনপি। আসন ফিরে পেতে এখন থেকেই মাঠে বেশ তৎপর একাধিক নেতাকর্মী। তবে এই আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলের দখলে নেই এই আসনের নির্বাচনীয় মাঠ। এই আসনে আওয়ামী লীগের দলটিতে রয়েছে বহুদলীয় কোন্দল।
এই আসনের আটপাড়া উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই উপজেলায়। এই উপজেলার সাধারণ জনগণ বলছেন এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল এমপি এই উপজেলায় কোনো প্রকার কাজ করেননি। তার নির্বাচিত আমলে এই উপজেলার মানুষ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। তারা আরও জানান, এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল এমপিকে মনোনয়ন দিলে এই আসনটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকবে।
সাধারণ মানুষের তথ্যমতে, এই আসনটি বিএনপির ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। সোমবার (১২ জুন) আটপাড়া উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি এই উপজেলায় অর্থাৎ এই আসনটিতে।
নেত্রকোনা -৩ আসনটি স্বাধীনতার পর থেকেই বেশিরভাগ সময় আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও এই আসনটি বিএনপির ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত লাভ করে। এই আসনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ১৫ বছরে তেমন কোনো দৃশ্যমাণ উন্নয়ন হয়নি। এই আসন থেকে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মঞ্জুর কাদের কোরাইশী, তার আমলে কিছু উন্নয়ন হলেও ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার। তার আমলে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০১৮ সালে এই আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এমপি, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই আসনে কোনো প্রকার উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বলে জানিয়েছেন এই আসনের সাধারণ জনগণ। তারা জানান সব চেয়ে অবহেলিত এই বর্তমান সময়ে।
কেন্দুয়া ও আটপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতারা জানান, তারা এই আসনের বর্তমান এমপির আমলে বেশি অবহেলিত। তারা জানান, এই আসনে কিছু হাইব্রিড আওয়ামী লীগের কারণে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আটপাড়া- কেন্দুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ।
নির্বাচনে গেলে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলাল।
এরই মধ্যে মাঠে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন বর্তমান এমপি অসীম কুমার উকিল। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরছেন তিনি। তবে এর আগে এই এমপিকে মাঠে তেমন দেখা যায়নি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সমাবেশ ও আলোচনা সভায় তিনি এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা ২০১৪ সালের সরকারকে ‘অবৈধ সরকার’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। আর ২০১৮ সালের সরকারকে তাঁরা ‘আগের রাতের ভোট ডাকাতির সরকার’ হিসেবে উল্লেখ করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা (বিএনপি) বর্তমানে কিছু দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সফল হলে দলটি নির্বাচনে যাবে।
বিএনপির দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলাল বলেন, ‘বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের প্রত্যাশা করছি আমি। এলাকার উন্নয়নে জনগণের জন্য কাজ করেছি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থেকেছি। ফলে তাদের সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, যা এখনো বহাল। আগামী নির্বাচনে বিএনপি আমাকেই দলীয় মনোনয়ন দেবে বলে আমি বিশ্বাসী।
তিনি আরও বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি থেকে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরা হয়েছে। সেই দাবি সফল করতে এখন কাজ করছি। দলই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দেবে বলে আমি আশাবাদী।
নির্বাচন বিষয়ে ভাবনা জানতে চাওয়া হয় বেশ কয়েকজন ভোটারের কাছে তারা বলেন, বিগত নির্বাচনে তাঁরা সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। এবার হারানো ভোটাধিকার ফিরে পেতে চান। কেননা সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারায় তাঁরা অবহেলিত, ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত, এলাকার উন্নয়ন থেকে তারা বঞ্চিত। সব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে তারা জিম্মি। তাই ভোটারদের প্রত্যাশা, শুধু ভোটের সময় নয়, নির্বাচিত এমপি সারা বছরই তাঁদের গ্রাম-মহল্লায় আসবেন।
বাবু/জেএম