চট্টগ্রামের কাট্টলী সার্কেলের এসিল্যান্ড ওমর ফারুকের অনঢ় সিদ্ধান্তে অবশেষে রক্ষা পাচ্ছে শতবর্ষী একটি পুকুর৷ আকবর শাহ থানাধীন উত্তর কাট্টলী এলাকায় পেশী শক্তির জোরে প্রকাশ্য দিবালোকে শতবর্ষী পুকুর ভরাট করছিল একটি চক্র৷ এই অবৈধ পুকুর ভরাটের সংবাদ পেয়ে কাট্টলী সার্কেলের এসিল্যান্ড ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷ এসময় তিনি অবৈধ পুকুর ভরাট বন্ধের পাশাপাশি ভরাটকৃত বালি অপসারণ করে পুকুরটি পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন৷ এসিল্যান্ড'র এমন সিদ্ধান্ত স্থানীয় বাসিন্দারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন৷ তবে পুকুর ভরাটের জড়িত মিজানুর রহমান স্কেবেটর দিয়ে দ্রুত ভরাটকৃত বালি অপসারণ করার কথা দিলেও বাস্তবে সেটা যথাযথভাবে পালন করছেনা মর্মে অভিযোগ উঠেছে।
গত কিছুদিন যাবৎ উত্তর কাট্টলী বরদা বিশ্বাস সড়কের ছোট কালীবাড়ি পুকুর নামে পরিচিত শতবর্ষী পুকুর ভরাটে সরাসরি অর্থ ব্যয় ও জনবল নিয়োগ করছেন মিজানুর রহমান (৩৭) নামের এক ব্যক্তি। উত্তর কাট্টলী চৌধুরী বাড়ির জনৈক জালাল হোসেনের ছেলে মিজান কতৃক এই পুকুর ভরাটের খবরটি জানতে পেরে মঙ্গলবার (১৯ জুন) ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে অবৈধ পুকুর ভরাট বন্ধ করেন কাট্টলী সার্কেলের এসিল্যান্ড ওমর ফারুক৷
এই বিষয়ে কাট্টলী সার্কেলের এসিল্যান্ড ওমর ফারুক বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, পুকুর ভরাট, পাহাড় কাটা বন্ধে আমাদের সম্মানিত জেলা প্রশাসক স্যারের কঠোর দিকনির্দেশনা রয়েছে৷ আমি আমার কাট্টলী সার্কেল এলাকায় এই ধরনের সকল অপতৎপরতা বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছি৷ মঙ্গলবার সকালে পুকুর ভরাটের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যাই৷ সরেজমিন পুকুর ভরাটের বিষয়টি দেখতে পেয়ে ভরাটের কাজে জড়িত জনৈক মিজানকে তাৎক্ষণিক পুকুর ভরাট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। এবং দ্রুত পুকুরে ভরাটকৃত বালি অপসারণ করে পুকুরটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সময় বেঁধে দিয়েছি৷ আশাকরি এই সময়ের মধ্যে পুকুরটি পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া হবে। যদি সেটি না হয় তাহলে আরো কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে৷
বুধবার (২০ জুন) সরেজমিন সেই পুকুর পরিদর্শনে গেলে ৪-৫ জন শ্রমিককে বালি অপসারণের কাজ করতে দেখা গেছে। যদিও মিজান স্কেবেটর দিয়ে দ্রুত সব বালি অপসারণ করবে মর্মে অঙ্গীকার করেছিলেন৷ এসময় স্থানীয়রা এসি ল্যান্ডের তড়িৎ পদক্ষেপের প্রশংসা করে প্রতিবেদকের কাছে বলেন, “এসিল্যান্ড স্যার নিজে এসে মিজানকে পুকুর থেকে সব বালি অপসারণ করতে নির্দেশ দিয়ে গেছেন৷ মিজান স্কেবেটর দিয়ে সব বালি অপসারণ করবে বলে কথাও দেয়৷ তবে গতকাল ও আজ দুই দিনে সে কোন স্কেবেটর আনেনি৷ দুই চারজন লেবার দিয়ে পুকুরে ফেলা বালি নাড়াচাড়া করে ছবি তুলতে দেখা গেছে৷” এলাকাবাসীর আশঙ্কা মিজান কৌশলে কালক্ষেপণ করে ঈদের ছুটিতে বড় কোন কাণ্ড ঘটানোর পাঁয়তারা করছে।
এই বিষয়ে পুকুর ভরাটকারী মিজানের সাথে ফের যোগাযোগ করলে তিনি বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, গতকাল (১৯ জুন) বৃষ্টির কারণে পুকুরের পাড় নরম হয়ে যাওয়ায় স্কেবেটর নামানো সম্ভব হচ্ছে না৷ তাই লেবার দিয়ে অপসারণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।” মিজান স্কেবেটর ভাড়া করেছিল উল্লেখ করে বলেন, “আমাকে তিনদিন সময় দেয়া হয়েছে। আমি এই সময়ের মধ্যে পুকুরটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবো।”
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে পুকুর ভরাট কাজে জড়িত মিজান প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেছিলেন পুকুরটি মালিক পক্ষের অনুরোধে শ্মশানে যাতায়াতের জন্য পুকুরের পাড়ে বালি দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেছিলেন, “এই কাজের বিষয়টি স্থানীয় আকবর শাহ থানা, কাউন্সিলরসহ সমাজের সবাই জানে।” এসময় তিনি নিজে ঠিকাদারি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন৷ তবে এই বিষয়টি কোন ভাবেই অবগত ছিলেন না আকবর শাহ থানা পুলিশ৷ পুকুর ভরাটে জড়িত সে যেই হোক, এলাকায় পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাবেন বলে জানান আকবর শাহ থানার ওসি ওয়ালী উদ্দিন। তিনি বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, যেহেতু এসিল্যান্ড এই বিষয়ে কিছু নির্দেশ দিয়েছেন আমরা সেটিকে বাস্তবায়ন করতে তৎপর থাকবো। ওয়ার্ড কাউন্সিলর নেছার আহমেদ মঞ্জু আলোচিত পুকুর ভরাটের বিষয়টি একেবারেই অবগত নন বলে জানান৷ তিনি বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, যে কারণেই ভরাট করুক না কেন, পুকুর ভরাটের কোন সুযোগ নেই৷ তিনি জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান৷

মঙ্গলবার (১৯ জুন) দুপুরে শতবর্ষী পুকুর রক্ষায় মানববন্ধন সহ নানান প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে স্থানীয়রা। এলাকার বাসিন্দারা এ সময় পুকুর ভরাটে জড়িতদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন৷ স্থানীয়দের অভিযোগ শ্মশান, মন্দিরের নামে রাস্তা নির্মাণের নামে মূলত পুকুরটি ভরাট করে একটি চক্র জমি বিক্রির পাঁয়তারা করছে। নানান অপকৌশলে ইতিমধ্যে মিজান সংখ্যালঘু পরিবারের পূর্বপুরুষের ভিটা বাড়ি কিনছে। আর এসবের প্রতিবাদ করায় মিজান তার দলবল নিয়ে বিভিন্নজনকে মারধরের পাশাপাশি মেরে ফেলার হুমকি ধমকি দিচ্ছে৷ রবিবার (১৮ জুন) আকবর শাহ থানায় মিজানুর রহমান, পাপ্পু সেন ও প্রীতম সেন ঘরে ঢুকে সন্তান ও ননদকে মারধর ও ভাঙচুর ও অকথ্য ভাষায় গালি দেওয়ার বিষয়ে সাধারণ ডায়রি করেছেন লাকী মজুমদার নামের এক বাসিন্দা৷