ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের ঘোলখার গ্রামের কাজী আসলামের বাড়ির উঠানটি গেলবছরও এ সময় খালি পড়েছিল। এবার সেখানে নেটের ঘের দিয়ে তিনি পুঁইশাক, লালশাক, ডাঁটা, কলমিশাক ও ঢেঁড়স আবাদ করেছেন।
সোমবার বিকেলে কাজী আসলামের বাড়ি গিয়ে তার সাথে কথা হলে তিনি বাংলাদেশ বুলেটিনকে জানান, স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে তাকে সার, নেট, ফলের চারা ও সাত ধরনের সবজি বীজ দেয়া হয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তিনি এখানে বাগান তৈরি করেছেন। নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে তিনি এখান থেকে কিছু শাকসবজি বিক্রি করে পাঁচ হাজার টাকাও আয় করেছেন।
ধরখার ইউনিয়নের কাজী আসলাম, মো. সাইফুল ইসলাম, কাজী শাহাবুদ্দিন ও হাবিবুর রহমানসহ ষাটজন কৃষক বাড়ির আশপাশের ফাঁকা জায়গায় শাকসবজির চাষ করছেন। উৎপাদিত ফসলে নিজেদের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাড়তি উপার্জনেরও রাস্তা তৈরি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ‘দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনায় অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’ স্থাপনের কাজ শুরু করে কৃষি বিভাগ। এ প্রকল্পের আওতায় আখাউড়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় এ পর্যন্ত মোট ২৯১টি পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করেছেন।
কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, প্রত্যেক পরিবারকে বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের সবজির বীজ, সার, ফলের চারা, নেট, বীজ সংরক্ষণের পাত্র, বাগানে পানি দেয়ার ঝাঁঝরিসহ অন্যান্য উপকরণ বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। পরিত্যক্ত জমিতে কৃষকরা মৌসুমের শুরুতে মুলাশাক, লালশাক, পাটশাক, পুঁইশাক, লাউ, পালংশাক, শিম, ডাঁটা, ধনিয়া ও কলমি শাকসহ নানা প্রজাতির সবজি চাষ করছেন।
কাজী আসলামের স্ত্রী বলেন, ‘আমার বাড়ির উঠানটি অনেক দিন ধরে পতিত ছিল। সেই পতিত জায়গায় আমি আর আমার স্বামী মিলে সবজির বাগান করেছি। এই বাগান করার পর আমি বাজার থেকে আর কোনো শাকসবজি কিনি নাই। বরং অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করেছি। আমার সবজি বিষমুক্ত হওয়ায় আশপাশের লোকজন বাড়ি এসে সবজি কিনে নিয়ে যান।’
এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহানা বেগম বলেন, পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপনে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। সারা বছর যাতে একজন কৃষক সবজি উৎপাদন করতে পারে সেজন্য সার, বীজ, বেড়াসহ সার্বিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের মাঠ পযার্য়ের উপসহকারী কৃষি অফিসাররা কৃষকদের এ বাগান স্থাপন ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে সব সময় সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।’এতে কৃষকের নিজের যে পুষ্টি দরকার, বাগানে উৎপাদিত সবজি দিয়েই তা পূরণ হচ্ছে। সেই সঙ্গে অধিক যে শাকসবজি উৎপাদন করছে সেটা বিক্রি করে বেশকিছু মুনাফাও পাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন,পতিত জমিতে চাষাবাদের যে চর্চা স্থানীয়দের মধ্যে শুরু হয়েছে, তার ফলে কৃষকরা নিজেরাই সবচি চাষ চালিয়ে যাবেন। আর কৃষি বিভাগ তাদের পাশে থাকবে সব সময়।
বাবু/জেএম