সোমবার ২৩ জুন ২০২৫ ৯ আষাঢ় ১৪৩২
সোমবার ২৩ জুন ২০২৫
মানিকগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু
আমিনুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ
প্রকাশ: বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০২৩, ৭:৪৯ PM
কর্তব্যরত চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল অপারেশনে নাসরিন আক্তার নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। ৩ সন্তানের জননী ওই প্রসূতি ঘিওর উপজেলার নয়াচর গ্রামের ব্যবসায়ী রিপন মিয়া স্ত্রী।

মানিকগঞ্জের বলাকা জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর পর ক্লিনিক মালিক, কর্মকর্তা কর্মচারী ও চিকিৎসক পলাতক রয়েছে। 

জানা গেছে, গত সোমবার দুপুরে চিকিৎসক ওসমান গনির তত্বাবধানে বলাকা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয় নাসরিন বেগম (৩২)। ওই দিন বিকেল ৫টার দিকে অপারেশন করেন চিকিৎসক মো. ওসমান গনি। অপারেশন করার সময় রোগীর রক্তনালী কেটে যাওয়ার পর তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হসাপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় প্রসূতি নাসরিন বেগম। 

বুধবার সকাল ১১টার দিকে বলাকা জেনারেল হাসাপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ রুমগুলো তালা দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাপাত্তা হয়ে গেছে। হাসপাতালটিতে কোন রোগী, চিকিৎসক, নার্স বা অন্যান্য কোন স্টাফ নেই। এরপর দুপুর ১টার দিকে নিহত নাসরিন বেগমের পিতার বাড়িতে সদর উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বলাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের মাধ্যমে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে আপস-মীমাংসার চেষ্টা করছে। 

নিহত নাসরিন বেগমের স্বামী রিপন মিয়া জানান, ‘অপারেশনের সময় আমার স্ত্রীর রক্তনালী কেটে ফেলেছিল। অপারেশনে যে সমস্যা হয়েছে সেটা আমাদের জানায়নি। কয়েক ব্যাগ রক্ত দেয়ার পর সন্দেহ হলে আমি বার বার জিজ্ঞাসা করার পর বলেছে। পরে আমার স্ত্রীকে এনাম মেডিকেলে রেফার্ড করে। এনাম মেডিকেলের চিকিৎসকরা বলেছে, রক্তনারী কেটে ফেলায় প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে। এ কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এখন তিনটা সন্তান নিয়ে আমি খুব বিপদে পড়েছি। আমি এই অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার বিচার চাই।’

এদিকে অভিযুক্ত চিকিৎসক ওসমান গনি ভুল চিকিৎসার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, অপারেশনের আগে ডা. মোসলেম উদ্দিন আল্ট্রাসনোগ্রাম করে রিপোর্ট দিয়েছিল। তার রিপোর্টে লেখা ছিলা একরকম আর রোগীর বাস্তব অবস্থা ছিল অন্যরকম। যেকারণে রোগীর প্রকৃত অবস্থা জানা যায়নি। এ কারণে অপারেশনে একটু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আল্ট্রা রিপোর্টে রোগীর প্রকৃত অবস্থা জানা গেলে এমন জটিল রোগীদের আমরা অপারেশন না করে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করি। 

ডা. মোসলেম উদ্দিন বলেন, আল্ট্রা রিপোর্ট সঠিক ছিল। সব  রোগীর প্লাসেন্টা এক রকম অবস্থায় থাকে না। প্লাসেন্টা সমস্যার কারণে এত ব্লিডিং হয় না। রক্তবাহী মোটা নালী কেটে গেলে ব্লিডিং আর থামানো যায় না। হয়তো এক্ষেত্রে এই সমস্যা হয়েছে। সিভিল সার্জন অফিস থেকে তদন্ত কমিটি করে উনারা হয়তো একটা রিপোর্ট তৈরি করতে পারবে।

বলাকা জেনারেল হাসাপতালের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, ডাক্তারের কারণে রোগী মারা গেছে। এখানে হাসপাতালের কোন গাফলতি নেই। রোগীর সেবা প্রদানে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। এই রোগীর মৃত্যুর দায় ডাক্তারকেই নিতে হবে। 

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা: মো. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, রোগীর লোকজন আমাদের কাছে অভিযোগ করলে তদন্তপূর্বক  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রউফ সরকার বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাবু/জেএম
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত