ভারতের ৭টি প্রদেশ অরুণাচল, মেঘালয়, আসাম, মনিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড জাতিগত, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের কারণে একত্রে সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত। আর এ সেভেন সিস্টার্সের অন্যতম প্রবেশদ্বার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর। ভৌগলিক কারণে ভারতের এ অংশ এতদিন বিভিন্ন পণ্যের সংস্থানের জন্য বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এ কারণেই গড়ে ওঠে দেশের দ্বিতীয় বৃহওম শতভাগ রপ্তানিমুখী আখাউড়া স্থলবন্দর। বর্তমানে আগরতলায় রেলপথ স্থাপনের কারণে কমে গেছে আখাউড়া বন্দরের রপ্তানি। তবে এ বন্দর দিয়ে বেড়েছে যাত্রী পারাপার।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভৌগোলিক অবস্থানের জন্যই আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার ক্রমশ বাড়ছে। বন্দর থেকে সীমান্ত পার হলেই আগরতলা শহর। আর সেখান থেকে বিমানবন্দর ও রেলওয়ে স্টেশন খুব কাছে। ফলে পূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ যাত্রী চিকিৎসা কিংবা ভ্রমণের জন্য ভারত যেতে আখাউড়া স্থলবন্দরটি ব্যবহার করেন। এজন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও যাত্রীসেবা বাড়ালে আখাউড়া স্থলবন্দরটিও সরকারের জন্য অনেক লাভজনক হবে। পাশাপাশি বেনাপোল বন্দরের ওপরও চাপ কমবে।
শনিবার (৫ আগষ্ট) দুপুরে ইমিগ্রেশন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় ১১/১২শ যাত্রী যাতায়াত করেন। যার অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে ভারতে যান।
স্থল শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা যায়, আখাউড়া আন্তর্জাতিক কাস্টম-ইমিগ্রেশন হয়ে ভারতে ভ্রমণকারী দেশি-বিদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীদের কাছ থেকে ভ্রমণ করবাবদ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাসে ১ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত শুধু মাত্র স্থলবন্দরের সোনালী ব্যাংক বুথ থেকে এক মাসে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে এক কোটি ৫১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।নতুন অর্থবছরে যাত্রীপ্রতি সরকার নির্ধারিত ১০০০ টাকা ভ্রমণকর আদায় করে থাকে। এই সময়ে ১৭ হাজার ৪৭জন যাত্রী ভারতে গমন করেন। জুলাই মাসে যেসব যাত্রী ভারতে প্রবেশ করেছে তাদের ৯০ শতাংশ বাংলাদেশি এবং ১০ শতাংশ ভারতসহ অন্যান্য দেশের নাগরিক রয়েছে।
ভারতে গমনের জন্য ইমিগ্রেশনে অপেক্ষমান চট্টগ্রামের বাসিন্দা মো. উবাইদুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন চট্টগ্রামের সাথে ট্রেনে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো তাই ভারত যেতে এ পথটাই পছন্দ। তবে এখানে কিছু সমস্যা রয়েছে। পর্যটককে আকৃষ্ট করতে হলে এ জায়গাগুলোতে আরও কাজ করতে হবে বলে মনে করি। যেমন এ বন্দরে অবকাঠামোর কিছু দুর্বলতা আছে। অবকাঠামো আরও উন্নত করা উচিত। কারণ আমাদের পাশ্ববর্তী ভারত ইমিগ্রেশনে সুযোগ সুবিধা অনেক ভালো। আমরাও চাই ভারতের নাগরিকরা যখন এদেশে আসে তখন তারাও বলুক আমাদের ইমিগ্রেশনের অবকাঠামো ও সেবা অনেক ভালো।
আরেক যাত্রী নরসিংদীর বাসিন্দা শফিকুর রহমান জানান, তার বাবা অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। এর আগেও তিনি দুইবার এ পথে ভারতের গিয়েছেন। প্রতিদিন এক হাজারের বেশি লোক এ চেক পোষ্ট দিয়ে যাতায়াত করে। এই সংখ্যাটা বাড়তে থাকলে এ বন্দরটি লাভজনক বন্দর হতে পারে। যাত্রী সংখ্যা বেশি হলেও এখানে বসার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নাই। ওয়াশ রুম নাই। বৃষ্টি হলে দাঁড়ানোর মত পর্যন্ত জায়গা নাই। দ্রুত এসব সমস্যা দূর করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
আখাউড়া ইমিগ্রেশন ইনচার্জ হাসান আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, যাতায়াত সুবিধা ভালো থাকায় এ ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার বেড়েছে কয়েক গুন। আমাদের ইমিগ্রেশন ভবনটি পুরাতন তবে ইতিমধ্যে ভবনের কিছু সংস্কার কাজ করিয়েছি। আর কিছু সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়গুলি আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। আশা করছি খুব শিগগিরই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। যাত্রীর চাপ থাকার পরও আমরা যাত্রীদের আন্তরিকভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ খান বলেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর আখাউড়া। দিন দিন এপথে যাত্রী পারাপার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে সরকারেরও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বন্দরের অবকাঠামোর কিছু সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যা সমাধান হলে এই স্থলপথ হবে যাত্রীদের প্রথম পছন্দ।
বাবু/জেএম