ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বিচারে নামে গড়ে তুলেছেন ‘টর্চার সেল’। যেখান বিচার কার্যে অভিযুক্ত শিশু থেকে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানকে পেটানো হয়েছে। তার সিদ্ধান্ত না মানলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকিও দেন চেয়ারম্যান। এছাড়াও ৪২ একর সিকিস্তি জমি দখল করে গড়েছেন মাছের ঘের, গরুর খামার। যার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে নিচকাটা ও মাঝির হাওলা গ্রামের মানুষজন। আর এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করে মামলার শিকার হয়েছেন কয়েকজন। এ কারণে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এলাকাবাসী ভয়ে কথা বলতে পারছেন না। চেয়ারম্যানের ত্রাশের রাজত্ব থেকে পরিত্রাণ পেতে স্থানীয় সংসদ সদস্য কাছে গণস্বাক্ষরে অভিযোগ করেছে ওই দুই গ্রামের বাসিন্দারা। এলাকাবাসীর এসব অভিযোগ যাকে ঘিরে তিনি হলেন পটুয়াখালীর মৌডুবি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদ হাসান রাসেল।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ আগস্ট সংসদ সদস্য বরাবর করা অভিযোগপত্রে উল্লেখিত রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল নির্বাচিত হওয়ার পরপরই এলাকায় ত্রাশের রাজত্ব শুরু করেন। শুধু এই নয়, নিচকাটা ও মাঝির হাওলা গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রবাহমান খালটি দুই গ্রামকে আলাদা করে। আর এ সুযোগে চেয়ারম্যান পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ থেকে নদী পর্যন্ত ৩২ একর সিকিস্তি জমি মধ্যে মাছের ঘের করে। আরো ১০ একর সিকিস্তি জমিতে ইউপি চেয়ারম্যান করেছেন গরু খামার। যার কারণে এসব জমিতে এলাকাবাসী প্রবেশ করতে পারে না। ওই অভিযোগে আরো বলা হয় চেয়ারম্যানের দখল করা জমি ভূমিহীন ও অসহায় পরিবারদের বন্দোবস্ত দিলে চেয়ারম্যান রাসেল উচ্চ আদালতে রিট করে তা স্থগিত করে রাখেন।
শুধু তাই নয়, নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের ব্যবধানে ইউনিয়ন পরিষদকে চেয়ারম্যান টর্চার সেল বানিয়েছেন। বিচারের নামে যেখানে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানসহ সাধারণ মানুষকে পেটানো হয়েছে।
ইউপির সালিশ বৈঠক নিয়ে অনুসন্ধানে যা উঠে এলো...
শপথ গ্রহণ শেষে চেয়ারম্যান হিসেবে পরিষদের দায়িত্ব নেন মাহমুদ হাসান রাসেল। এরপর থেকে যতবার পরিষদে সালিশ-বিচার করেছেন তার অধিকাংশে বেধাঘাত করেছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ গঠন হওয়ার কিছুদিন পরে পরিষদে সালিশ বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা ফুল গাজীর ছেলে বশির গাজীকে বেধাঘাত দিয়েছে চৌকিদার। যা চেয়ারম্যান নির্দেশনা দেন। এক আলাপচারীতায় চেয়ারম্যানের ভয়ে বশির গাজী ক্যামেরা সামনে কথা বলতে রাজি হয়নি। অফক্যামেরায় বশির জানালেন- ‘তিন-চারদিন গলাচিপা চিকিৎসা করে এলাকায় আসার একদিন পরে ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বৈঠক হয়। সেখানে তাকে অপমান করছে। ঠিক কি ধরনের অপমান করা হয়েছে এমন প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, ওই তো বেধ দিয়েছে। বেধ দিয়ে তিনটা বারি দিছে। বারি জোরে দেয় নাই, অস্তে অস্তে জলিন চৌকিদার দিছে।
জমিজমা সংক্রান্ত ব্যাপারে মুঠোফোনে জনৈক ব্যাক্তিকে ধমকাচ্ছেন চেয়ারম্যান, এমন অডিও রেকর্ড প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ৪৯ সেকেন্ডের ওই রেকর্ডে শোনা যায় জনৈক ব্যাক্তিকে উদ্দেশ্য করে চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান রাসেল বলছেন; ‘আপনাকে লিখিত দেবে। আপনাকে রায় দিছে। তায় আপনি জমিতে গেলেন কেন? ওই শালারে আমি বাইন্দা মৌডুবিতে টানাইয়া হের পরে পিটামু। বদমাশি করার আর যায়গা পাওনা। ওই শোনার গুষ্টিগুলাই তুই চেনো আমাকে? ওইওই শালায় যেন পালায় না ঢুকে। যদি ওখানে আমি পাই সবগুলারে টাইন্না আইন্না বাজারে পিটামু। বদমাশির যায়গা পাওনা এলাকায় বইসা। ও যেন এলাকায় না থাকে।’ এরপরে গত বছরের ২৩ নভেম্বর বিবাহিত এক তরুণীকে উত্যক্ত ও কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বৈঠক বসানো হয়। সেখানে অভিযুক্ত ইমরানের বিচারের সিদ্ধান্ত হয়। ইমরানের বিচার করতে বাবাকে নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান। পরে বাবা জুতাপেটা করে ছেলেকে। এই অপমান সইতে না পেরে বাড়ি এসে বিষপান (কীটনাশক) করে ইমরান। পরে এ ধরনের অন্যায় করলে লাখ টাকা জরিমানা ও ছেলেকে কফিতে টানানো হবে বলে বাবা কালাম ফরাজীকে শাসিয়ে দিয়েছে চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান রাসেল।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মৌডুবি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান রাসেল বলেন, ‘আরএস-পিএস। এটা আমাদের পূর্ব পুরুষদের সম্পত্তি। কিছুটা আমাদের ভোগদখলে। বাকিটা আদালত থেকে এস্ট্রে অর্ডার আনা। আমার প্রতিপক্ষরা এসব করতে পারে। বাস্তবতা সাথে এটার কোন মিল নেই। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানকে বেধাঘাত প্রসঙ্গে বলেন; সালিশ বৈঠকে একটা বোড হয়। একা কোন সিদ্ধান্ত চেয়ারম্যান দিতে পারে না। আর এই সালিশ হয়েছে ইউপি গঠনের কিছুদিন পরে। মুঠোফোনের রেকর্ড বিষয়ে জানান, স্থানীয় বিচার ব্যবস্থায় আমরা বিভিন্ন ধরনের কথা বলতেই পারি। একজনকে যদি শাসন করতে না পারি তাহলে বিচার ব্যবস্থা চলবে কি করে। আমার এলাকায় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। একপর্যায় রেকর্ডটি সুপার এডিট বলে দাবী করেন তিনি।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সালেক মূহিদ বলেন, এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বাবু/জেএম