পাহাড়ী ঢলে বগুড়ার যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে তিন বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনটের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঢলের পানির স্রোতে একটি স্পার বাঁধের প্রায় ২০ মিটার ধসে গেছে। নিমজ্জিত হয়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সারিয়াকান্দি উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদীর বাম অংশের নিচু এলাকার বসতবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ি, কর্নিবাড়ি, বোহাইল, কাজলা, চন্দনবাইশা, সারিয়াকান্দি সদর, হাটশেরপুর, কুতুবপুর, ও কামালপুর ইউনিয়নের প্রায় ১২২টি চরের বাড়িঘরে পানি উঠেছে।
সোনাতলা উপজেলার তেকানী-চুকাইনগর ও পাকুল্ল্যা ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের মধ্যে রয়েছে চুকাইনগর, ভিকানের পাড়া, মোহনপুর, সরলিয়া, খাবুলিয়া, খাটিয়ামারি, সুজাইতপুর, রাধাকান্তপুর, আচারের পাড়া, পূর্ব সুজাইতপুর। এছাড়া ধুনটের অল্প কিছু যমুনা নদীর অংশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
সারিয়াকান্দির কর্নিবাড়ি ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন দীপন বলেন, আমার ইউনিয়নে কমপক্ষে ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পাশের বোহাইল ইউনিয়নেও অন্তত চার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান খান।
উজানের ঢলের পানিতে চরাঞ্চলে অন্তত ২৪টি বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। ওই সব বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা চরের উঁচু আশ্রয়স্থলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামসহ একাধিক সরকারি কর্মকর্তারা সারিয়াকান্দি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে, বুধবার থেকে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর চলে আসে। এ নদীর বিপৎসীমা ধরা হয় ১৬ দশমিক ২৫ মিটার। শুক্রবার বেলা সকাল ৬ টার তথ্য মতে পানি ১৬ দশমিক ৩৯ মিটার উঁচু দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশের বাঙালী নদীর বিপৎসীমা ধরা হয় ১৫ দশমিক ৪০ মিটার। এ নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১৪ দশমিক ৪৭ মিটার উঁচুতে বইছে বন্যার পানি।
উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, যমুনা নদীর পানি এখন বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তিন উপজেলার চরের সব এলাকায় পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আগামী তিন থেকে চার দিন পানি বাড়বে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে চরবাসীদের বাঁধের দিকে আশ্রয় নিতে হবে।
তবে সমস্যা হয়েছে হাসনাপাড়া স্পার-২ বাঁধে। গত বুধবার রাতে আকস্মিকভাবে বাঁধের প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত ধসে গেছে। এছাড়া কাজলা, কামালপুর ইউনিয়নেও নদীভাঙন রয়েছে।
হুমায়ুন কবির আরও বলেন, আমরা এসব স্থানে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। আর পানি একেবারে নেমে গেলে হাসনাপাড়া স্পারে স্থায়ীভাবে কাজ করা হবে।
বাবু/জেএম