মঙ্গলবার ৮ জুলাই ২০২৫ ২৪ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার ৮ জুলাই ২০২৫
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর ভীড়, বেড়েছে সেবার মান
আনিছুর রহমান শামীম, শ্রীপুর (গাজীপুর)
প্রকাশ: রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১২:২৪ PM

ময়লা-আবর্জনা ও মেডিকেল বর্জ্যের দুর্গন্ধে হাসপাতালটিতে টেকা যেত না। দিনে গরু-ছাগল চড়ে বেড়াত হাসপাতালের সীমানার ভিতর। চিকিৎসক-নার্সরা বেশিদিন থাকতে চাইতেন না এ সরকারি হাসপাতালে।

গত দুই বছরে বদলে গেছে হাসপাতালের পরিবেশ। ভেতরে ঢুকতেই শত শত রোগীর দীর্ঘ লাইন। ঝকঝকে হয়ে উঠেছে হাসপাতালের ভেতর-বাহির। সবুজে ছেয়ে গেছে চারপাশ। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বসেছে সিসিটিভি ক্যামেরা। ভালো সেবা পাওয়ায় উপজেলার ছাড়াও আশেপাশের কাপাসিয়া, গফরগাঁও এবং ভালুকা উপজেলা সীমানা থেকে রোগী আসছে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। স্বাভাবিক প্রসবেও সুনাম কুড়িয়েছে হাসপাতালটি। চিকিৎসক-নার্সরা এখন আর হাসপাতাল ছাড়তে চান না। তাঁদের থাকার জন্য আবাসিক ভবনগুলোও নতুনভাবে সাজানো হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলার প্রায় ৮ লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বিভিন্ন অনিয়ম অবহেলার কারণে ভোগান্তিতে ছিলেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। সামান্য অসুস্থ্য হলেও রোগীদের  গাজীপুর জেলা সদর হাসপাতাল যেতে হতো। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিত্র এটি। শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রনয় কুমার দাস যোগদানের পর দুই বছরে হাসপাতালের চিত্র পাল্টে দিয়েছেন।  

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বহির্বিভাগে ২ লাখ ৭ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। একই সময়ে অন্তর্বিভাগে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮ হাজার ৯০০ এবং জরুরী বিভাগে ২৫ হাজার ৮০০ জন। ২০২০ সালে বহির্বিভাগে সেবা নিয়েছেন ৯৪ হাজার ৭২১ জন। একই সময়ে অন্তর্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭ হাজার ৭৪৮ এবং জরুরী বিভাগে ১৪ হাজার ৭২৫ জন। দুই বছরের ব্যবধানে হাসপাতালে বেড়েছে স্বাভাবিক প্রসবের সংখ্যাও। ২০২০ সালে এ হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ৬১৩ জন এবং সিজার হয়েছে ৯ জন প্রসূতির। ২০২২ সালে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ৭০৩ জন এবং সিজার হয়েছে ১২৪ জন গর্ভবতীর।

বেড়েছে হাসপাতালের রাজস্ব আয়। ২০২১ সালে রাজস্ব আয় ছিলো ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৪ টাকা। ২০২২  সালে রাজস্ব আয় দাঁড়ায় ২২লাখ ৪৫ হাজার ৫৮৬ টাকা। বর্তমানে ২০২৩  সালের জুলাই মাস পর্যন্ত এ আয় ১৭ লাখ ৬৫ হাজার ৭৯৪ টাকা।

সরেজমিনে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রায় ৫ একর জমির ওপর স্থাপিত হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে ঝকঝকে পরিবেশ। হাসপাতালে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে জরুরী বিভাগ। সুন্দর বিশ্রামাগার। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল্য তালিকা টানানো রয়েছে দেয়ালে এবং সীমানা প্রাচীরের ভিতরের চারপাশে রোপন করা হয়েছে ফলদ-বনজ, ঔষধিসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ। হাসপাতাল চত্বর যেন একটা ছোটখাটো পার্ক। রয়েছে কয়েক’শ ফুল ও ফলের গাছ।

এ হাসপাতালে রয়েছে গাইনি কনসালট্যান্ট। স্বাভাবিক প্রসব বাড়াতে গর্ভবতী নারীদের নিয়ে নিয়মিত সমাবেশের আয়োজন করা হয়। মাসে ৭০ থেকে ৮০ টি স্বাভাবিক প্রসব হচ্ছে হাসপাতালে। হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখতে বিভিন্ন স্থানে ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়েছে।  

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রনয় কুমার দাস জানান, বর্তমানে ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ডেন্টাল ইউনিট, স্বাভাবিক প্রসব, সির্জার, অপারেশন, প্যাথলজি, ফার্মেসি, করোনা টেস্ট ও করোনার টিকা, ডেঙ্গু পরীক্ষা, গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য এএনসি কর্নার, ইপিআই বা টিকাদান কর্মসূচি চালু রয়েছে। নন কমিউনিকেবল ডিজিজের জন্য রয়েছে আলাদা এনসিডিসি কর্নার। রয়েছে গর্ভবতী মায়েদের জন্য এনসি কর্নার ও পিএনসি কর্নার। শিশুদের জন্য রয়েছে আইএমসিআই কর্নার। যেখানে মা ও শিশুদের পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন করা হয়। চালু রয়েছে ব্রেস্ট ফিডিং ব্যবস্থা এবং ডে কেয়ার সেন্টার। ভায়া সেন্টারের  মাধ্যমে  ৩০ বছর বা তার উপরের বয়সের মহিলাদের জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও স্কিনিং টেস্ট করা হয়। কিশোর কৈশোর বান্ধব সেবা কেন্দ্র, ডেন্টাল বিভাগ, নাক, কান, গলা, মেডিসিন শিশু, অর্থোপেডিক এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও কমিউনিটি ভিশন সেন্টার রোগীদের জন্য এক নতুন সংযোজন। 

শ্রীপুর উপজেলার বলদীঘাট থেকে হাসপাতালে মাকে ভর্তি করেছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানান, তিন দিন আগে মাকে ভর্তি করেছিলাম। এখানকার চিকিৎসক ও নার্সরা অনেক আন্তরিক। হাসপাতাল থেকে ওষুধ দেওয়াসহ নিয়মিত খোঁজখবর নিয়েছে। হাসপাতালের পরিবেশটাও অনেক সুন্দর।

পৌর এলাকার আবু সাঈদ তার বোনকে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। তিনি জানান, আগে  অনেক ঔষধ বাহির থেকে কিনে আনতে হতো। এখন প্রায় সব ধরনের ঔষধ হাসপাতাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে। স্বল্প খরচে বিভিন্ন পরীক্ষা- নিরীক্ষাও করা যাচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরো বলেন, হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে আলাদা করে পরিকল্পনা করে সেগুলো বাস্তবায়ন করেছি। এ কাজে সহকর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ সবাই সহযোগিতা করেছেন।

হাসপাতালে সেবার মান বাড়লেও এখনো কিছু সংকট রয়ে গেছে। যে কারণে মানুষ এখনো অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যা উন্নীতকরন এবং ভবন বাড়ানো জরুরী। ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট সরবরাহ কম থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। পরিষ্কার পরিছন্নতা কর্মী, স্টোর কিপার, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার জরুরী। ৩১ শয্যার এই হাসপাতাল ২০১২ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। প্রশাসনিক অনুমোদন মিললেও ৫০ শয্যার আর্থিক সহায়তা ও জনবল পাওয়া যায়নি। এ হাসপাতালে চিকিৎসক থাকার কথা ২৮ জন, আছেন ২২ জন। ২৬ জন নার্সের মধ্যে আছেন ২৫ জন। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ৮৮ জন এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ১৯টি পদের মধ্যে ১০টিই শূন্য।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ খাইরুজ্জামান   বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে অনেক চিকিৎসকই কাজ করতে চান না। উল্টো পরিবেশ শ্রীপুরে। এই হাসপাতালে ডাঃ প্রণয় আসার পরে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে। সেবার পরিধি বেড়েছে। কোয়ালিটি বাড়ানোর জন্য আমি নিজেও দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে শ্রীপুরবাসীর যে চাওয়া তা পূরন করার জন্য আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই।

বাবু/এ.এস
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  শ্রীপুর   স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত