মঙ্গলবার ৮ জুলাই ২০২৫ ২৪ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার ৮ জুলাই ২০২৫
তালগাছ গুলোই আমার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবে পৃথিবীর বুকে
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১:২১ PM

প্রথম দেখায় মনে হবে এ যেন তাল গাছের রাজ্য। রেলপথের দুই পাশে অসংখ্য তাল গাছের সারি। প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে রয়েছে ৫ হাজারের বেশি তাল গাছ। এ এক নয়নাভিরাম মন জুড়ানো দৃশ্য।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের রামধননগর গ্রামের বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী আলী আকবর খান। প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করার কথা চিন্তা করে বৃক্ষপ্রেমী এই মানুষটি নিজ হাতে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে একাই লাগিয়েছেন পাঁচ হাজারেরও বেশি তালগাছ। ২০০৫ সালে তিনি তালবীজ সংগ্রহ ও বপনের কাজ শুরু করেন। ১৮ বছরের ব্যবধানে সেগুলো আজ বড় গাছ।

সংসার জীবনে বৃক্ষপ্রেমী আলী আকবর খান স্ত্রী ও দুই ছেলে মোবারক আলী খান ও ছোট ছেলে আলীবরদি খান ওরফে সোহেল খানকে নিয়ে তার সংসার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একদিকে তিতাস নদীর ওপর দিয়ে ব্রিজ ও ডাবল রেললাইন, অন্যদিকে খড়মপুর মাজার শরিফ। সেখানেই বিস্তৃত আঁকাবাঁকা রেলপথের পাশে আলী আকবরের লাগানো সারি সারি তালগাছ। রেলপথে যতটুকু চোখ যায়, শুধু তালগাছ আর তালগাছ। দুপুরের তপ্ত রোডে ক্লান্ত মানুষ শুইয়ে বসে তালগাছের নিচে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়।

এখানেই শেষ নয়, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলী আকবরের লাগানো গাছ ছড়িয়ে রয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে বিভিন্ন মাজার এলাকায়। সিলেট শাহজালাল মাজার, হবিগঞ্জ জেলার মুড়াবন এলাকার সৈয়দ নাসির উদ্দিন শাহ মাজার, চট্টগ্রামের আমানত শাহ (রহ.) মাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের দৌলতবাড়ী দরবার শরিফ, আখাউড়া আজমপুর এলাকার শাহ সুফী হজরত রাজা মিয়া চিশতি (রহ.) পীর সাবেহের মাজারসহ বিভিন্ন মাজারে তিনি লাগিয়েছেন বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এ ছাড়া বিভিন্ন মন্দির, কবরস্থান, স্কুল, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় বকুল, কৃষ্ণচূড়াসহ নানা প্রজাতির গাছও লাগিয়েছেন তিনি।

আকবর আলীর ছোট ছেলে আলীবরদি খান বলেন, ‘বাবা গাছ লাগাতে অনেক পছন্দ করেন। তার দীর্ঘ পরিশ্রমের ফলে গাছগুলো দৃশ্যমান। এসব গাছ কাটতে বা কাউকে ডালপালা ভাঙতে দেখলেও বাবা খুব কষ্ট পান।’

আলী আকবরের চাচাতো ভাই কুদ্দুস খান আখাউড়া উত্তর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। তিনি বলেন, ‘আকবর ভাই যখন তালবীজ লাগাতে শুরু করলেন, অনেকে হাসিঠাট্টা করেছে। কেউ কেউ পাগল বলেছে। কিন্তু ভাইকে থামিয়ে রাখা যায়নি। এখন সবাই তার সুফল পাচ্ছেন।’

আলী আকবর খান বলেন, ‘কৃষিকাজ করতাম। তার ফাঁকে ফাঁকে এই গাছগুলো লাগিয়েছি। এক দিন পৃথিবীতে আমি থাকব না, তবে আমার লাগানো গাছগুলো রয়ে যাবে। আর এগুলোই আমার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবে পৃথিবীর বুকে।’

গাছ রোপনের ভাবনা কি করে হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপনের কথা ভাবতেন তিনি। সেই ভাবনা থেকেই বন্ধু হিরালাল শাহের পরামর্শে সিদ্ধান্ত নেন, তখন মাত্রই চালু হওয়া আখাউড়ার আজমপুর বাইপাস রেললাইন থেকে কোড্ডা বাইপাস লিংক পর্যন্ত এলাকায় পরিবেশবান্ধব তালগাছ লাগাবেন। ২০০৫ সালেই তিনি তালবীজ সংগ্রহ ও বপনের কাজ শুরু করেন।

কাজটি অবশ্য সহজ ছিল না। বিশেষ করে তালবীজ সংগ্রহের জন্য তাকে ছুটতে হয়েছে জেলার সব জায়গায়। বীজ সংগ্রহ করে নিয়ে বপন করতেন রেললাইনের পাশে। সেই বীজ থেকে যখন চারা হয়েছে, তখন আলী আকবরের পরিশ্রম হয়ে যায় দ্বিগুণ। চারাগুলোকে পরিচর্যা করে পূর্ণ গাছে রূপান্তরিত হওয়া পর্যন্ত সময়ে রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে। সেই পরিশ্রমের ‘মিষ্টি ফল’ আজ দৃশ্যমান- রেললাইনের ধারে সারি বেঁধে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পাঁচ হাজার তালগাছ তৈরি করেছে এক অনন্য পরিবেশ।

আখাউড়া উপজেলা থেকে সদ্য বিদায়ী বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহানা বেগম বলেন, তালগাছ এখন বিলুপ্তির পথে। কোনো কিছু পাওয়ার আশা না করে তালগাছ লাগানো নিঃসন্দেহে মহৎ কাজ। সরকার আলী আকবর খানের লাগানো তালগাছগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। গত জুনে আখাউড়া উপজেলা কৃষি অফিস তাঁকে আর্থিক সম্মাননা জানায়। তবে অসুস্থতার কারণে তিনি নিজে আসতে পারেননি, ছেলে এসেছিলেন। এমন আলী আকবর বাংলার প্রতিটি ঘরে জন্ম নিক।

বাবু/এ.এস
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত