পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নে বেলুয়া নদীর উপর অবস্থিত অর্ধশত বছরের বেশি সময়ের ঐতিহ্যবাহী এক ভাসমান বাজার। সূর্যের আলো ফুটতেই শুরু হয় ভাসমান বাজার। আবার সূর্যের তাপ বাড়ার আগেই শেষ হয়ে যায় এই হাঁট। পণ্য বিক্রি করতে ও কিনতে নৌকায় ভিড় জমান ক্রেতা-বিক্রেতারা। পণ্য বিক্রি হলে খালি নৌকা নিয়ে বাড়ি ফেরে বিক্রেতারা। আর ক্রেতারা নৌকা ভরে পণ্য কিনে নিয়ে যান।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দাবি সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও প্রসারিত হবে। এদিকে সংশ্লিষ্ট জেলা ব্যবসায়ী সমিতি বলছে, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়ন করা গেলে বাড়বে সবজি রপ্তানি।
সরেজমিনে দেখা যায় বেলুয়া নদী পিরোজপুর জেলার দুইটি ও গোপালগঞ্জের একটি উপজেলাকে বিভক্ত করেছে। এই নদীর পশ্চিম পাড়ে নাজিরপুর উপজেলার কলার দোয়ানিয়া ইউনিয়ন, পূর্ব পাড়ে নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়ন আর উত্তরে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলা এবং উত্তর পূর্বে রয়েছে নাজিরপুরের কাশ্মীর। এই কাশ্মীরকে ঘিরেই ঐতিহ্যবাহী বাজারটি বসে শত বছরের বেশি সময় ধরে। কাক ডাকা ভোরে ভাসতে ভাসতে শুরু হওয়া এই বাজার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শেষও হয়ে যায়। নদীপথে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বৈঠাকাটা বাজার সংলগ্ন বেলুয়া নদীতে সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার বসে এই ভাসমান হাট।

সকাল ৭টার মধ্যেই এই ভাসমান হাট সরগরম হয়ে ওঠে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা ট্রলার ও বড় নৌকা নিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে কৃষিপণ্য বেগুন, মরিচ, আলু, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, করল্লা, কচু ও নানা জাতের ঋতুকালীন শাকসবজি ও চারা ক্রয় করেন। কৃষকেরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দরদাম করেন। হাঁটের এক পাশে রয়েছে ধান, চাল, মুড়ি ও নারকেলের হাট। এই অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা হয়।
পিরোজপুর, নাজিরপুর, নেছারাবাদ, চিতলমারী, মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন স্থানের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য এ বাজারে নিয়ে এসে পাইকারি বিক্রি করেন। নদীর মধ্যে প্রতিটি সবজি ভরা নৌকা যেন মনে হয় একটি দোকান ঘর। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার লোকজন দৃষ্টিনন্দন এ ভাসমান বাজার দেখতে আসেন।
ব্যবসায়ী ইউসুফ শেখ বলেন, ভোরেই এ বাজারে কেনা-বেচা শুরু হয়। আমরা বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করে এখানে এনে বিক্রি করি। বর্তমানে ১৪০০ টাকা মণে কুমড়া বিক্রি করছি। অনেক ক্রেতা রয়েছে যারা দরদাম করছে, দামে পছন্দ হলে দিয়ে দেব।
সবজি বিক্রেতা কবির হোসেন বলেন, আমাদের এই বৈঠাকাটা বাজার ভোরে শুরু হয় ৮টা-৯টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এখানে দূর-দূরান্ত থেকে বহু ব্যবসায়ীরা আসেন। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় আমাদের অসুবিধায় পড়তে হয়। দক্ষিণ অঞ্চল ও উত্তর অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় এই বাজার থেকে পণ্য নিয়ে বিক্রেতারা চলে যান। যোগাযোগ ব্যবস্থায় সমস্যায় থাকার কারনে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের বর্তমানে দুরবস্থা। সড়ক ব্যবস্থা যদি একটু ভালো হতো তাহলে আরও দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসতো। বর্তমানে নৌকাই আমাদের একমাত্র ভরসা।
বাবু/এ.এস