গায়ে জ্বর আর শরীর ব্যথা হলেই যেন এখন মৃত্যুর আতঙ্ক কক্সবাজারে। সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও কক্সবাজারেও তার ব্যতিক্রম নয়। গত ৮ মাসেই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১২ হাজার ৯২৪ জন। মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। সাধারণত ডেঙ্গু শুরু হয় বর্ষা থেকে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হলেও এবারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে জুলাই থেকে।
সেই কারণে সর্বোচ্চ সংখা রোগী আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজারে গত আগষ্ট মাসে ৫ হাজার ৫৯১ জনের ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়েছে। এর মধ্যে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক-এফডিএমএন বা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি ৯০ শতাংশ। সীমান্ত এলাকার ক্যাম্পগুলোয় মশার বিস্তারের সুযোগ বেশি থাকার পাশাপাশি ভাষাগতভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা করতে না পারায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে ডেঙ্গুর শঙ্কা বাড়ছে।
পর্যটন জেলা কক্সবাজার সিভিল সার্জনের কার্যালয় বলছে, উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোয় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করে। ক্যাম্পগুলোয় ঘনবসতিপূর্ণ বসবাস, নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থা, অপ্রবহমান খাল ও জলাশয়,পলিথিনের ত্রিপল, ছাদে তৈরি ঘর ডেঙ্গু মশার বংশবিস্তারে ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া ভিন্ন ভাষার পত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারের সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সম্পৃক্ত হতে না পারায় ক্যাম্পে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে বলে মনে করছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেয়া তথ্যে দেখাগেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১২ হাজার ৯২৪ জন। । তাদের মধ্যে ১১ হাজার ১১৬ জনই (রোহিঙ্গাদের ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পসংলগ্ন রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাসিন্দা (হোস্ট কমিউনিটি)। এর মধ্যে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়া ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ১০৮৭। বাংলাদেশী ৮৮৫, রোহিঙ্গা ২৩৭ জন। পুরো কক্সবাজারে ৮ মাসে ১৩ জনের মৃত্যুর সংখ্যায় ১১ জনই রোহিঙ্গা।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহ ফাহিম আহমাদ ফয়সাল বলেন, ‘ডেঙ্গু একসময় আরবান এলাকার রোগ হলেও বর্তমানে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। ঢাকার পর কক্সবাজারে ডেঙ্গু বিস্তার বেড়ে যাওয়ার একাধিক কারণ রয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ক্যাম্পে খুবই ঘনবসতিপূর্ণভাবে বসবাস করে। তাছাড়া ক্যাম্পগুলোর জলাধার, ড্রেনেজ সিস্টেম, অপ্রবহমান জলাধার এবং ক্যাম্পের ঘরবাড়ি ও পানির ট্যাংকগুলোর কারণে ডেঙ্গু মশার প্রজনন ঝুঁকি বেশি। আবার ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহর থেকে পর্যটকের আগমনের কারণেও কক্সবাজারে ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেড়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজের সিভিল সার্জন বিপাশ খিসা বলেন, ঢাকার পর কক্সবাজারকে ডেঙ্গু জোন বলা যাচ্ছে না। তবে কক্সবাজারে ‘ডেঙ্গু মোকাবেলায় আমরা জেলা প্রশাসনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছি। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে অন্যান্য দপ্তরও যদি সচেতনতা চালায় তাহলে ডেঙ্গুর তীব্রতা কমে আসবে।
বাবু/জেএম