সোমবার ৭ জুলাই ২০২৫ ২৩ আষাঢ় ১৪৩২
সোমবার ৭ জুলাই ২০২৫
স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত মানুষ
পদায়নের এক বছরেও কর্মস্থলে পা পড়েনি তিন চিকিৎসকের
মাহমুদ হাসান, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী)
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৩:৫৭ PM
এক বছর আগে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার তিন ইউনিয়নের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তিনজন চিকিৎসক (সহকারী সার্জন) পদায়ণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, তাদের কাছ থেকে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়াতো দূরের কথা, কর্মস্থলে একদিনের জন্যও পা পড়েনি কারও। ফলে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন মানুষ।    

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পদায়ণ অনুযায়ী সহকারী সার্জন হিসেবে ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ডা. তরিকুল ইসলাম, বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ডা. নোমান পারভেজ এবং চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডা. নূর উদ্দিন যোগদান করেন। 

ওই তিন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে থেকে পাওয়া তথ্যমতে, যোগদানের এক বছর অতিবাহিত হলেও রাঙ্গাবালীর  নির্ধারিত তিন কর্মস্থলে তিন চিকিৎসক যাননি কখনো। তাই তাদের কাছ থেকে সেখানকার কোন মানুষ কাঙ্খিত সেবাও পায়নি। স্থানীয়রা জানান, তিনজন ডাক্তার যে (চিকিৎসক) দেওয়া হয়েছে, এমনটাই তাদের জানা নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পদায়ণকৃত ডা. নূর উদ্দিন বলেন, ‘ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত যাওয়া হয় না।’ তথ্য রয়েছে আপনি কর্মস্থলে কখনোই যাননি? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখন কিছু বলতে হলে অফিসে আসেন, গলাচিপা।’    

জানা গেছে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক না যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা উঠলে চলতি বছরের ২৯ মার্চ একটি অফিস আদেশও হয়। গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ওই অফিস আদেশে বলা হয়, প্রতিমাসে দুই-তিন সপ্তাহে উপজেলা পরিষদ বহিঃবিভাগে শনি ও রবিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা ডা. তরিকুল ইসলাম ও বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা ডা. নোমান পারভেজ চিকিৎসা সেবা প্রদান করবেন। এই অফিস আদেশের পরও তাদের কারও দেখা মেলেনি কর্ম এলাকায় । বরংচো খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটের অজুহাত দেখাচ্ছেন। 

এদিকে আরও জানা গেছে, এক বছরের বেশি সময় কর্মস্থলে না এসেই সম্প্রতি বিদায় নিয়েছেন একজন চিকিৎসক।  তিনি হলেন ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পদায়ণ থাকা ডা. তরিকুল ইসলাম। উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি ঢাকার বারডেম একাডেমির একটি কোর্সে যোগ দিবেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর তাকে ছোটবাইশদিয়া কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে  ছাড়পত্র দেওয়া হয়। 

গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (রাঙ্গাবালীর দায়িত্বে) ডা. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমি চলতি বছরের মে মাসে আসছি। আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করছি। রোগী দেখার জন্য ওখানে কোন ব্যবস্থা নেই। ওনারা ব্যবস্থা করলে ডাক্তাররা যাবে। তারা বললো ব্যবস্থা করে আমাদের জানাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গলাচিপা ও রাঙ্গাবালীর মানুষের সেবা দিতে আমাদের পোস্টেট ডাক্তার রয়েছে মাত্র একজন। সাব সেন্টারের ডাক্তাররা যদি এখানে সেবা না দেয়, তাহলেতো এখানে সমস্যা। এমনে ডাক্তাররা মাঝে মাঝে যায়। একেবারে যে যায় না, তা নয়। আমাদের সরকারি প্রোগ্রামে ক্যাম্পের মাধ্যমে রোগীগুলো দেখা হয়।’ 
 
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যেহেতু এখানে এখনো হাসপাতাল নেই। হাসপাতালের কাজ চলছে। তাই রাঙ্গাবালীবাসীর জন্য নিয়মিত ডাক্তার প্রয়োজন। সিভিল সার্জন মহোদয় ও গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে আমার কথা হয়েছে। আমারা  সেমিপাকা একটি টিনশেড ঘর ডাক্তারদের জন্য প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছি।’ 

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হওয়া এই উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণাধীন হওয়ায় নদী ও সাগর বেষ্টিত দ্বীপটির মানুষ আধুনিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। এখানে নেই বেসরকারি আধুনিকমানের কোন চিকিৎসা কেন্দ্র। তাই চিকিৎসা সেবার জন্য নদীপথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় তাদের পার্শ্ববর্তী উপজেলা গলাচিপা ও কলাপাড়া  কিংবা জেলা শহরে পটুয়াখালীতে।

বাবু/জেএম
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত