বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫ ২৬ আষাঢ় ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
অক্টোবর : আন্দোলন বনাম উন্নয়ন
ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৩, ৫:২৩ PM

বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে কখনও বিরোধী দলে, কখনও সরকারে থেকে দেশ গঠনে অনন্য অবদান রেখে চলেছে মাটি ও মানুষের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। ভাষা আন্দোলন, গণ-আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধÑ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের পাতার পরতে পরতে একটিই নাম আওয়ামী লীগ। সবপর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের হার না মানা নেতৃত্ব। এই দলের নেতাকর্মীদের ত্যাগ তিতিক্ষা ও অঙ্গীকারদীপ্ত সংগ্রামী ভূমিকা ইতিহাসবিদিত। আওয়ামী লীগ মানেই বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার নতুন নতুন ইতিহাস রচনা।

একযুগের অধিক এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশকে আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এই নতুন বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পূর্ণাঙ্গ আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক দেশ গড়ে তুলতে তিনি একের পর এক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে চলেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দীর্ঘ সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশের যেসব উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল তা ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের চূরান্ত পর্যায় অর্জন  এই অক্টোবরে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্ভোধনের মাধ্যমে।

তবে চমৎকার একটা বিষয় হচ্ছে, এই অক্টোবর মাসে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে নেওয়া ১৫টি মেগাপ্রকল্পের মধ্যে ৫টি মেগাপ্রকল্প। এই গুরুত্বপূর্ণ ৫ মেগাপ্রকল্প হচ্ছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনাল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্যানেল।

এই ১৫ মেগাপ্রকল্পের মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু ও রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের একবছর পেরিয়ে গেছে। আর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করা হয়েছে গত দুই সেপ্টেম্বর। আর গত ৫ অক্টোবর ২০২৩-এ উদ্বোধন করা হয়েছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

আজ ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধন করতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের অন্য তিন প্রকল্পও উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় সাপেক্ষে উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। তিন প্রকল্প হচ্ছে ১. খুলনা-মংলা  রেলপ্রকল্প, ২. দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্প, ৩. আখাউড়া-আগরতলা আন্তঃদেশীয় রেলপথ প্রকল্প। দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এরইমধ্যে মেট্রোরেল নিয়মিত চলাচল করছে। আর ২৩ অক্টোবর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। এরইমধ্যে এ অংশে পরীক্ষামূলক চলাচল করছে। এ রেলপথ উদ্বোধনের পরে ঢাকাবাসীকে  উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে মেট্রোরেলে লাগবে মাত্র ৩৮ মিনিট।

এদিকে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের মূলকাজ শেষ। এ প্রকল্পের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোবর। এ প্রকল্পের মাধ্যমে টানেলের যুগে প্রবশ করবে বাংলাদেশ। ৭ অক্টোবরে চালু হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল ভবনও এখন দৃশ্যমান। চলছে অভ্যন্তরীণ সাজ-সজ্জার কাজ। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হলে বাড়বে উড়োজাহাজ চলাচল ও যাত্রীসেবার মান। এ টার্মিনাল পুরোদমে চালু হলে এর মাধ্যমে উন্নয়নশীল বাংলাদেশের সংকেত বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে যাবে। পাশাপাশি ২২ অক্টোবর তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবনে ১৪০টি সেতু, ১২টি ওভারপাস ও যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র (ভিআইসি) উদ্বোধন করা হবে।

সড়ক, রেল, সেতুতে সংযুক্ত গোটা বাংলাদেশ। নিজেদের অর্থে বানানো পদ্মাসেতু তো এখন আমাদেও গৌরবের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে স্যাটেলাইট যুগে, সাবমেরিন যুগে,  মেট্রোরেল যুগে, এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ে যুগে, পারমাণবিক শক্তির যুগে, প্রবেশ করতে যাচ্ছে টানেল যুগে। ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন এ মাসেই চলার কথা থাকলেও বন্যার কারণে তা হয় তো কিছুটা পিছিয়ে যাবে। তবে খুব বেশি যে পেছাবে না, তা বলাই যায়। ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আংশিক চালু হয়েছে। পুরোটা চালু হলে যানজট নিরসনে তা দারুণ ভূমিকা রাখবে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন অন্য মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় অক্টোবরকে বলা যায় উন্নয়নের মাস।

অপরদিকে উন্নয়নের মাস এই অক্টোবরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি, জনসমর্থনহীন এবং সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি অতীতের ন্যায় জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করার জন্য মাঠে নামার ইঙ্গিত দিয়েছে। এই সন্ত্রাসী দল বিএনপি সরসকার পতনের একদফা আন্দোলন করছে গত জুলাই মাস থেকেই। সমাবেশ, কনভেনশন, রোডমার্চের মতো কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি দেশজুড়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর কথা বলে জ্বালাও-পোড়াও করে মানুষ হত্যার চেষ্টা করছে। তারা এখন আন্দোলনে মরণকামড় দেওয়ার কথা ভাবছে। তারা আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে ঢাকা অচলের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে এই অক্টোবরের।

আগামী ১৮ অক্টোবর ঢাকায় জনসমাবেশ করবে এই বিএনপি। বিএনপির সূত্রগুলোর বরাতে জানা গিয়েছে, ১৮ অক্টোবরের জনসমাবেশ থেকেই আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। শারদীয় দুর্গোৎসবের কারণে একটু বিরতি দিয়ে অক্টোবরের শেষদিকে আসতে পারে নতুন কর্মসূচি। তাতে থাকতে পারে সরকার পতনের আলটিমেটামও। আর দাবি আদায়ে অবরোধ, ঘেরাও, অসহযোগ, অবস্থানের মত কর্মসূচিও আসতে পারে। তবে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে আলটিমেটাম দিয়ে জনগণের দুর্ভোগ ছাড়া কিছুই আদায় করতে পারেনি এই বিএনপি। বিএনপি-জামায়াতের ইতিহাস মূলত আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াওয়ের ইতিহাস।

জাতীয় নির্বাচনকালে নির্দলীয় সরকার আদায়ের দাবিতে 'আন্দোলন' চলাকালে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পুরো জাতিকে অবাক করেছিল। এছাড়াও ওয়ান-ইলেভেনের আগে রাজধানীর পল্টনে দুপক্ষে যে হানাহানি হয়েছিল এবারকার ঘটনাবলী কিন্তু সেখানে সীমাবদ্ধ থাকেনি। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এটা। প্রত্যন্ত মফস্বলেও একপক্ষের  লোক অপরপক্ষের কাউকে গিয়ে পিটিয়ে বা কুপিয়ে হত্যা করেছে। তাই শুধু নয়, নিরীহ অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে পেট্রোল বোমা বা ককটেল ছুড়ে। আন্দোলনের নামে এমন জ্বালাও-পোড়াও কর্মকাণ্ড বিএনপি-জামায়াত করায় টাকায় কেন ভাড়াটে লোকজন দিয়ে। এসব আন্দোলনের নামে বিএনপি মূলত জনগণের অর্থে তৈরি রাস্তা কেটে ধ্বংস করছে, ব্রিজের পাটাতন সরিয়ে নিচ্ছে, সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে ব্যারিকেড দিচ্ছে,  রেললাইন উপড়ে যাত্রীহত্যার ব্যবস্থা করছে, স্কুলঘর পোড়াচ্ছে। আন্দোলনের নামে তাদের এই কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় দেশে গৃহযুদ্ধ বেঁধে গেছে একটা কিংবা কোনো সন্ত্রাসবাদী দল বিরাট কোনো পরিবর্তন আনার লড়াইয়ে নেমেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে যেখানে এই অক্টোবরে বাংলাদেশের চারদিকে উন্নয়নের সুবাতাস বইছে সেখানে জনসমর্থনহীন এই সন্ত্রাসী বিএনপি দলটি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকার পতনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করে বাংলাদেশের উন্নয়নকে ব্যাহত ও জনসাধারণের জীবনকে ধ্বংস করে দিতে মরণফাঁদ তৈরি করছে। জনসাধারণের সমর্থন হারিয়ে এই বিএনপি আন্দোলন, ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকের মাধ্যমে পিছনের দরজা দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসীন হতে মরিয়া। এজন্য তারা জ্বালাও-পোড়াও করে জনগণের মাঝে ত্রাসের সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।

কিন্তু সাহসী বাঙালিরা সবসময়ই অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং আপসহীন। বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় বিশ্বাসী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে। বাংলাদেশের প্রায় ৭০ ভাগ জণগণ চাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক। বরাবরের মতো বিএনপি তাদের এই জ্বালাও-পোড়াও নীতির ফলে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অস্তিত্ব বিলীন হবে; উন্নয়ন ও অগতিতে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগকে এদেশের মানুষ বিপুল ভোটে নির্বাচিত করে বাংলাদেশের উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে বলে প্রত্যাশা করছি।      

লেখক : ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাবু/এ.এস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত