বুধবার ৯ জুলাই ২০২৫ ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
বুধবার ৯ জুলাই ২০২৫
বর্তমান সরকার ও আসন্ন নির্বাচন
অধ্যাপক ড. নাসিম বানু
প্রকাশ: রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৩, ৩:৩১ PM
বাঙালি জাতির নন্দিত ‘আপা’ জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে আজ বিশ্বে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী অনুকরণীয় নেত্রী। দেশের বিরাজমান সামরিক শাসনের প্রতাপ এবং স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের দুর্দমনীয় উপস্থিতির মাঝে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় এবং বাঙালির আপা সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সামরিক শাসনের অবসান ঘটান এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনে মুখ্য ভূমিকা পলন করেন। ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী চক্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়। তবে জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম অব্যাহত রেখে জনমত সৃষ্টি করেন। শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসেন, দেশরত্ন শেখ হসিনা প্রথমবারের মতো সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যার দূরদর্শিতা ও বাস্তবমুখী নীতি-পরিকল্পনা গ্রহণে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। 

খাদ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে দেশকে খরামুক্ত ও শস্য উৎপাদন উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিকরণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি সম্পাদন করে রাষ্ট্রীয় অর্থের সাশ্রয়, অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা বিধান এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার শুরুর মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করে তিনি দেশে বিচারের সংস্কৃতি চালু করেন। তার বিচক্ষণ নেতৃত্বে গণতন্ত্রিক ধারায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা দেশ ও আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হলেও দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষার ভূমিকা নিয়ে শেখ হাসিনা বিদেশি শক্তির রোষানলে পড়েন। ফলে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে রাখতে সমর্থ হয়। তবে জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে পুনরায় দেশের প্রধানমন্ত্রী হন, পরবর্তী সময়ে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে জনসমর্থন নিয়ে অদ্যাবধি প্রধানমন্ত্রী আছেন। ২০০৯ সাল থেকে এই সময়টা তার জন্য কখনো নিষ্কণ্টক ছিল না। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি নানাভাবে শেখ হাসিনাকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করে আসছে; ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করার নামে বিরোধী শক্তি দেশে সহিংসতা করে জান ও মালের ক্ষতি সাধন করেছে এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রচেষ্টা নিয়েছে।

 শেখ হাসিনা সব বাধা অতিক্রম করে দেশের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছেন। তার শাসনামলে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষে বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে; স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় বিরোধীতাকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের কাজ সম্পন্ন হয়ে রায় কার্যকর হয়েছে; বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, দারিদ্র্যের হার প্রায় ২২ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের যারা দীর্ঘ ২১ বছর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী সুবিধাভোগকারীদের নির্যাতনের শিকার হয়েছে, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদার আসন ও বীরত্বের স্বীকৃতি ফিরিয়ে দেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, প্রকৃত সম্মান দিয়েছে; দুস্থ মহিলা, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ভাতা চালু হয়েছে; বিনা জামানতে কৃষক ও বর্গাচাষিদের ঋণ প্রদান, ভূমিহীনদের ভূমি ও গৃহ, আশ্রয়হীনদের আশ্রয় প্রদান; প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন হয়েছে। বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনা মূল্যে বই বিতরণ ও প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপিত হয়েছে।

সব আশঙ্কা ব্যর্থ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে, ঢাকা মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। পায়রা বন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ী বহুমুখী প্রকল্প এবং দেশব্যাপী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজের সমাপ্তি আসন্ন; দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ হয়েছে। শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতায় প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমার বিরোধ, বাংলাদেশ ভারতের মধ্যকার দীর্ঘ সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে। কোভিড সংকট মোকাবিলায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছিল তখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেই সংকট সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে, বিনা মূল্যে টিকাদান কর্মসূচি সফল করে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এবং বিভিন্ন প্রকারে আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে সক্ষম হয়েছেন; সব আশঙ্কা দূর করে কোভিড মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বে নজির স্থাপন করেছে, তার শাসনামলে বাংলাদেশে গড়ে প্রায় ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। শেখ হাসিনার সাফল্য তিনি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নতীকরণ করেছেন। বর্তমান বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব একটি চরম সমস্যা এবং বিশ্বনেতৃত্ব এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে সচেষ্ট রয়েছে। ১৭ কোটি লোকের বাংলদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের চরম ঝুঁকিতে, এ সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশই প্রথম উন্নয়নশীল দেশÑ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেন এবং বিশ্বে প্রথম ভ্যন্তরীণ সম্পদে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেন। 

বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজনে পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে ২০১১ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে সংশোধনী আনা হয়। দূরদর্শিতা ও সচেতনতামূলক নেতৃত্বের কারণে শেখ হাসিনা আজ সারা বিশ্বে অনুকরণীয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন বিশ্বনেতা। বিশ্বের একজন শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন, বিশ্ব তাঁর মতাদর্শকে সম্মান করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন অসাম্প্রদায়িক, মানবিক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়েছে, বাংলাদেশ আজ চতুর্থ বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত ও ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে স্বপ্ন দেখছেন, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন, দেশবাসীকে স্বপ্ন দেখতে শেখাচ্ছেন ও স্বপ্ন পূরণে দেশবাসীকে সহযোদ্ধা হিসেবে চলতে শেখাচ্ছেন। বাঙালি জাতি যদি স্মার্ট বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়, সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় দেশের জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চায়, তাহলে বাঙালি জাতির মনে রাখতে হবে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই ।


শেখ হসিনার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি বিশ্ব দরবারে আজ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত, দেশ সমৃদ্ধির পথে দ্রুত অগ্রসরমান। কিন্তু তাই বলে স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী চক্র বসে নেই, তারা যেকোনো মূল্যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার সামষ্টিক প্রয়াসে লিপ্ত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ এবং নির্বাচনের পথ পরিহার করে অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের চেষ্টা বাঙালি জাতি কখনই সফল হতে দেবে না। সাংবিধানিক ধারায় নির্বাচন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাঙালি জাতি অবশ্যই শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় দেখতে চায়। তাই সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার কাণ্ডারি শেখ হাসিনাকে বিগত নির্বাচনগুলোর মতো জয়ী করার কোনো বিকল্প নেই। সজাগ থাকতে হবে কোনো কচুরিপোনা যেন নৌকার চলমান গতিপথ রোধ করতে না পারে।

লেখক : প্রো-উপাচার্য বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত