মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫ ৩১ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
মুজিব : একটি জাতির রূপকার
রাজনৈতিক দর্শন উপলব্ধির উপাখ্যান
এ কে ফাইয়াজুল হক রাজু
প্রকাশ: সোমবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৩, ৫:৩০ PM আপডেট: ৩০.১০.২০২৩ ৫:৪০ PM
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ (মুজিব : দ্য মেকিং অব এ নেশন) বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের মহানায়ককে শ্যাম বেনেগালের মতো একজন সফল পরিচালকের ক্যামেরায় চিত্রায়ন করা হয়েছে। জাতির পিতার জীবন ও রাজনৈতিক অভিযাত্রা চিত্রিত করে তৈরি বায়োপিক শ্যাম বেনেগালের ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’-এর মুক্তির মধ্য দিয়ে এ চলচ্চিত্রের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটছে।

ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক; একেবারে ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠা এবং একটি দেশের স্বাধীনতা অর্জন এর ওপর ভিত্তি করে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। মুজিব : একটি জাতির রূপকারÑ চলচ্চিত্রটি ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য উন্মোচন করবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পঁচাত্তরের পনের আগস্টের পিতৃহারা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দুই দেশ; ভারত ও বাংলাদেশ। আপনারা জানেন ভারত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল। তারাও রক্ত দিয়েছে এই স্বাধীনতার জন্য। বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশের মানুষ অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় এনেছে। এই বিজয়ের পথে যারা আমাদের সহযোগী হিসেবে ছিলেন তাদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। 

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়, এরপর থেকে ইতিহাস বিকৃত করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল কিন্তু ইতিহাস কথা বলে। ইতিহাসকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না। সেটা প্রমাণিত। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পরিচালক শ্যাম বেনেগাল এবং চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।

শ্যাম বেনেগাল ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ (মুজিব : দ্য মেকিং অব এ নেশন)  প্রসঙ্গে বলেছেন, ভালো লাগছে। আমার যা করার ছিল, তা আমি করেছি। এবার বাংলাদেশের দর্শক বলবেন তাঁদের কেমন লেগেছে। আমরা অনেক পরিশ্রম করে ছবিটি বানিয়েছি। আমাদের কাছে ছবিটি অবশ্যই ভালো। 
দুই.

যারা অভিনয় করেছেন বিভিন্ন চরিত্রে : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চরিত্রে আরিফিন এবং তরুণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চরিত্রে দিব্য জ্যোতি, রেনু (শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশা এবং তরুণী রেনু চরিত্রে প্রার্থনা ফারদিন দীঘি; শেখ হাসিনা চরিত্রে নুসরাত ফারিয়া এবং কিশোরী শেখ হাসিনা চরিত্রে ওয়ানিয়া জারিন আনভিতা (৮ থেকে ১২ বছর); শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক চরিত্রে শহীদুল আলম সাচ্চু, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী চরিত্রে দীপক অন্তানি, খন্দকার মোশতাক আহমেদ চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবু, আবদুল হামিদ খান ভাসানী চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদ, তাজউদ্দীন আহমদ চরিত্রে রিয়াজ, আবদুল হামিদ চরিত্রে গাজী রাকায়েত, মানিক মিয়া চরিত্রে তুষার খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো চরিত্রে রজিত কাপুর, পাকিস্তানি সেনা অফিসারের ভূমিকায় শতাব্দী ওয়াদুদ, বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফুর রহমান চরিত্রে খায়রুল আলম সবুজ (৬৫ থেকে ৯৪ বছর) এবং বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফুর রহমান চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী (৪৫ থেকে ৬৫ বছর), বঙ্গবন্ধুর মাতা সায়েরা খাতুন চরিত্রে দিলারা জামান, বঙ্গবন্ধুর মাতা সায়েরা খাতুন (তরুণী) চরিত্রে সঙ্গীতা চৌধুরী, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী চরিত্রে তৌকির আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম চরিত্রে দেওয়ান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সায়েম সামাদ, কামারুজ্জামান চরিত্রে সমু চৌধুরী, মনসুর আলী চরিত্রে খলিলুর রহমান কাদেরি, মেজর জেনারেল ওসমানী চরিত্রে খন্দকার হাফিজ, জেনারেল আইয়ুব খান চরিত্রে মিশা সওদাগর, শেখ রেহানা চরিত্রে সাবিলা নূর, কিশোরী শেখ রেহানা চরিত্রে সামান্তা রহমান, শেখ কামাল চরিত্রে কামরুল হাসান, কিশোর শেখ কামাল চরিত্রে ইশরাক তূর্য (৮ থেকে ১২ বছর), শিশু শেখ কামাল চরিত্রে তৌহিদ (৫ বছর), শেখ জামাল চরিত্রে শরীফ সিরাজ, প্রবীণ নারীর ভূমিকায় রোকেয়া প্রাচী, হক চরিত্রে সিয়াম আহমেদ, জেলার চরিত্রে আবুল কালাম আজাদ, সুলতানা কামাল খুকী চরিত্রে নাজিবা বাশার, জেনারেল টিক্কা খান চরিত্রে জায়েদ খান, মহিউদ্দিন আহমেদ চরিত্রে আশিউল ইসলাম, জিয়াউর রহমান চরিত্রে একে আজাদ সেতু, খালেদা জিয়া চরিত্রে এলিনা শাম্মী, তোফায়েল আহমেদ চরিত্রে সাব্বির হোসেন, পুলিশ চরিত্রে হাসান দ্বীপ এবং পুলিশ চরিত্রে সুদীপ সারাঙ্গী।







তিন.
শেখ হাসিনার ভূমিকায় কাজ করতে গিয়ে তার সম্পর্কে বিস্তরভাবে প্রধানমন্ত্রীকে জেনেছেন-বুঝেছেন নুসরাত ফারিয়া। সেই সুবাদেই ফারিয়া বললেন, আমাদের প্রত্যেকটা বাঙালি মেয়ের মধ্যে একটা করে হাসিনা রয়েছে। তার সরলতা, তার মিষ্টিভাব, তার ইনোসেন্স, পরিবারের প্রতি ভালোবাসা, সবকিছু মিলিয়ে প্রত্যেকটা বাঙালি মেয়ের মধ্যেই একটা করে হাসিনা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে তৈরি ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রটি দেখে কেঁদেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কেঁদেছেন দর্শকরা, কেঁদেছেন কলা-কুশলীরা। এমন সম্মিলিত আবেগ শুধু এ চলচ্চিত্রটিতেই দেখা গেছে; কেননা মুজিব বাঙালির সম্মিলিত আবেগকে ধারণ করে যে খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা, বিশ^নেতা হয়েছেনÑ তার পূর্ণাঙ্গ রূপটি এ চলচ্চিত্রে ফুটে উঠেছে।
তবে, সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিকটি ১৫ আগস্টের জাতির পিতার সপরিবারের নির্মম হত্যাকাণ্ড যা গ্রিক ট্র্যাজিডিকে হার মানায়। এ চলচ্চিত্রটিতে ক্যাথারসিস বা আবেগ প্রশমিত করার সুযোগ নেই। ক্যাথারসিস হল গ্রিক ট্র্যাজিডির এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে গভীর আবেগানুভূতিকে প্রশমিত করা হয়। কিন্তু ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’-এ আবেগ প্রশমনের কোনো জায়গা নেই। কারণ এ রক্ত বাঙালির মানসে, মননে, চিন্তা, চেতনায়, অবিনাশী আদর্শে এবং সর্বোপরি জাতিসত্তার শিরা-উপশিরায় এখনো বয়ে চলে।
অবশ্যই মুজিবের বায়োপিক একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে থাকবে এবং এটি বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শকে জনগণের কাছে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে অনেকাংশে অবদান রাখবে। প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এ চলচ্চিত্রটি যুগ যুগ ধরে বাঙালির মানসে চেতনাবোধ জাগ্রত করবে, অবিনাশী আদর্শ অটুট থাকবে আমাদের মানসকাঠামোতে। 

চার. 
আপনি যেকোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্ম, বর্ণ বা কর্মের হতে পারেন; কিন্তু বাংলাদেশের রূপকার যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান; এ বিষয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়। বঙ্গবন্ধু না থাকলে হয় তো আজকে স্বাধীন সার্বভৌম লাল-সবুজের বাংলাদেশের জন্মই হতো না। তাই এই মানুষটির জীবনের জানা-অজানা গল্প জানতে নতুন প্রজন্মকে অবশ্যই এ চলচ্চিত্রটি আগে দেখা উচিত। বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক দর্শনের মূল উপজীব্যকে বুঝতে হলে ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রটি দেখে আসুন।
লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা ও  চেয়ারম্যান শের-ই বাংলা ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত