কৃষিব্যবস্থার প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে মানবসমাজ সভ্যতার আলোয় আলোকিত হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন তথা স্বনির্ভরতা অর্জনে আবহমানকাল ধরে কৃষিখাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পুরোটাই জুড়ে ছিল কৃষি। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে শিল্প ও বাণিজ্য-সেবা খাতের উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটলেও দীর্ঘকাল পর্যন্ত এগুলোও ছিল কৃষির ওপর নির্ভরশীল। ফলে কৃষি হয়ে উঠেছে এ দেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি। আর এই সফলতা সম্ভব হয়েছে কৃষকদের শ্রম, কৃষি সম্প্রসারণবিদদের তদারকি, কৃষি বিজ্ঞানীদের গবেষণা ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। খাদ্য উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করা, পুষ্টিসম্পন্ন ফসল উৎপাদন, খাদ্যের অপচয় রোধ করে প্রতিটি মানুষের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন ধারার সূচনা করবে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময় এ দেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে সাত কোটি, যাদের সকলের জন্য খাদ্যের জোগান পর্যাপ্ত ছিল না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় সফল অভিযোজনের ফলে বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রেখে বিশ্বে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক লাগসই প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে দেড় শতাধিকেরও বেশি, যা দেশের সার্বিক কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিসহ দেশের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ করছে। এছাড়া বন্যা, খরা, লবণাক্ততা সহিষ্ণুতা ফসলের জাত উদ্ভাবনসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভাসমান চাষ, বৈচিত্র্যময় ফসল উৎপাদন, ট্রান্সজেনিক জাত উদ্ভাবন, পাটের জেনোম সিকোয়েন্স উম্মোচন ও মেধাস্বত্ব অর্জনে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে প্রতিনিয়ত কমে যাওয়া জমি থেকে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচগুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে দশগুণ। প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানোর ফলে জীবিকানির্ভর কৃষি থেকে বাংলাদেশের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ধান ও সবজি উৎপাদনে বিশ্বে ৩য়, পাট উৎপাদনে ২য়, আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম স্থানের পাশাপাশি ইলিশ উৎপাদনে ১ম ও মাছ উৎপাদনে ২য় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্তার দ্বারপ্রান্তে। বিশ্ব খাদ্য সংকটের এই ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশের এই অর্জন বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘসহ আর্ন্তজাতিক সংস্থাগুলো কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করায় বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বের জন্য উদাহরণ হিসেবে প্রচার করছে।
মোট দেশজ উৎপাদনের হিসেবে জিডিপিতে এখন কৃষিখাতের অবদান ১১.৫০ শতাংশ এবং কর্মসংস্থানে ৪০.৬ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৮৪ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ২৫ কোটি ৭৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২২ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি। প্রায় সব শিল্পই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মীপিছু কৃষি জিডিপি এক শতাংশ বাড়লে দারিদ্র্যের প্রকোপ কমে দশমিক ৩৯ শতাংশ। জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি ২০৩০, রূপকল্প ২০৪১ এবং ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০-এর আলোকে জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮ ও ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাসহ অন্যান্য সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চত করার লক্ষ্যে কৃষি নীতিতে নতুন করে ন্যানো প্রযুক্তির মতো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
পুষ্টিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য দেশের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সমূহের বিজ্ঞানীগণ তাদের ধারাবাহিক এবং নিরন্তর গবেষণার ফলে ধানসহ বিভিন্ন ফলদ ও শাকসবজির জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। ফলে সারা বছর শাকসবজি ও ফল ফলাদির চাষ হচ্ছে যা দেশের সার্বিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ ভাতের মাধ্যমে পুষ্টি সরবরাহের লক্ষ্যে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান (জিংক, আয়রন, প্রোটিন, মিনারেলসহ শরীরের অত্যাবশকীয় খাদ্যোপাদানগুলো) দেহের প্রয়োজন অনুসারে চালে সংযোজন, সরবরাহ বা পরিমাণ বৃদ্ধি এবং বিশ্বের সর্বাধুনিক বায়োফর্টিফিকেশন ও জিএম প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে, বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ গোল্ডেন রাইস এর গবেষণা চলমান রয়েছে। এছাড়া উচ্চফলনশীল ও পুষ্টিসমৃদ্ধ শাকসবজি, ফলমূল, গম, সবজী মেস্তা, তেলবীজ ফসল এবং ডালজাতীয় ফসলের বিভিন্ন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা আজ বহুলাংশে মিটানো সম্ভব হয়েছে।
কৃষি খাতে বায়োটেকনোলজির ব্যবহার, সম্বনিত বালাই ব্যবস্থাপনা, সুষম সার ব্যবস্থাপনা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, বায়োফর্টিফিকেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদান সমৃদ্ধ শস্য উৎপাদনে কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। দেশের রপ্তানি খাতকে সমৃদ্ধকরণে দেশব্যাপী ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। যার ফলে কৃষিপণ্য বা খাদ্যপণ্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করাসহ ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার কৃষি পুনর্বাসন ও প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ফসলের মাধ্যমে ২২ হাজার ৫২৮ দশমিক ৯৩ লাখ টাকা প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের কল্যাণে বরাদ্দ দিয়েছে। গবেষণাগার, অবকাঠামো, উচ্চতর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য গবেষণা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো ও বিভিন্ন প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনশীলতার বর্ধিষ্ণু ধারা অব্যাহত রাখার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সরকারের ডিজিটাল কর্মসূচির আওতায় ইন্টিগ্রেটেড ডিজিটাল সার্ভিস ট্যাবে ক্লিক করলেই মিলবে কৃষি মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ ১৭টি দপ্তর/সংস্থার ৪৫টি নাগরিক সেবা। ‘ই-কৃষি’ প্রবর্তনের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা জোরদার করা হয়েছে। দেশে মোট ৪৯৯টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র (এআইসিসি), কৃষি কল সেন্টার (১৬১২৩), এআইএসটিউব, কৃষি তথ্য বাতায়ন, কৃষক বন্ধু ফোন (৩৩৩১), ই-বুক, অনলাইন সার সুপারিশ, ই-সেচ সেবা, কৃষকের জানালা, কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানা, ডিজিটাল কৃষি ক্যালেন্ডার, বীজতলা বিক্রয়ে ই-সেবা, কমিউনিটি রেডিওসহ বিভিন্ন মোবাইল এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কৃষি-বিষয়ক তথ্যাদি দ্রুত আদান প্রদান ও সবার জন্য কৃষি তথ্য উম্মুক্ত করা হয়েছে। ফসল উপযোগিতা নিরূপণ ও ক্রপ জোনিংয়ের জন্য জিআইএস (জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম) প্রযুক্তি নির্ভর অনলাইন ক্রপ জোনিং ইনফরমেশন সিস্টেম সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে। তরুণ কৃষক ও উদ্যোক্তাদের তারুণ্যের অমিত শক্তির সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির এসব অপার সম্ভাবনায় আধুনিক কৃষি হবে আরো সমৃদ্ধশালী।
নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতসহ কৃষি পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। পূর্বাচলে দুই একর জমিতে স্থাপন করা হয়েছে আর্ন্তজাতিকমানের অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব ও আধুনিক প্যাকিং হাউজ। খাদ্য সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষকদের নিকট থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করে তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য প্যাডি সাইলো ও স্টিল সাইলো নির্মান করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ধানের উৎপাদন না কমিয়েই আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে চাহিদার শতকরা ৪০ ভাগ তেল উৎপাদন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। কৃষিকে ডিজিটাল করে আরো কৃষকবান্ধব করার জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমনকি মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসছে।
বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় জোয়ার-ভাটা এবং জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সমুদ্রের লোনা পানি কৃষি জমিতে প্রবেশ করায় আবাদি জমি ক্রমাগত লবণাক্ত হয়ে পড়ছে ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে। হাওড় তথা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা, বরেন্দ্র অঞ্চলে খরা এবং দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বাড়ার কারণে ধানের উৎপাদন সন্তোষজনক না হলে খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে মোট আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ১৪০ লাখ হেক্টর, যার মধ্যে বন্যাকবলিত জমির পরিমাণ ২৬ লাখ হেক্টর। এছাড়া প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ হেক্টর জমি বিভিন্ন পর্যায়ের খরায় আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশের ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৭০ ভাগ অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ মিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২০৫০ সাল নাগাদ ১ মিটার বাড়তে পারে। যার প্রভাবে প্রায় ৩০০০ মিলিয়ন হেক্টর জমি স্থায়ীভাবে হারিয়ে যেতে পারে এবং সার্বিক উৎপাদন শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ কমে যেতে পারে।
বিশ্বজুড়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাব বিস্তার করছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, কৃষির ফলন, পুষ্টি উপাদানে পরিবর্তন এবং উৎপাদনশীলতার উপর। বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরায়ন, শিল্পায়ন ও বাড়তি জনসংখ্যার বসতবাড়ি নির্মাণে প্রতিবছর প্রায় ০.৭ শতাংশ হারে আবাদি জমি হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে প্রতিবছর জনসংখ্যা বাড়ছে ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ হারে প্রায় ২৩ লাখ। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বহু দেশে অন্যতম প্রধান খাদ্যপণ্য গমজাতীয় খাদ্যের বাজার ও পরিশোধিত তেলের মূল্য বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহে নানা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গ্যাস ও জ্বালানি তেলনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা, রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য পণ্যের উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতার পরিধি সম্প্রসারিত করে বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য ও পুষ্টির যোগান দিতে উৎপাদনের বৈচিত্র্যতা আনয়ন ও খাদ্যব্যবস্থার সুষম বণ্টনে সকলকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অব্যাহত অগ্রগতি ও সফলতার ফলে দেশের খাদ্য পরিস্থিতি বর্তমানে সন্তোষজনক হলেও ভবিষ্যতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও কৃষিজমি কমে যাওয়ার চাপ সামলানো অধিকতর কঠিন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন ঘাটতি পূরণ হলেও পুষ্টিহীনতার কারণে অনেক মানুষ নানা ধরনের রোগের শিকার হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, জাতীয় কৃষিনীতি, জাতীয় বীজনীতি, জাতীয় খাদ্যনীতি ও এসডিজি এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের জনগনের পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যনিরাপত্তা বিধানকল্পে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, পশ্চাৎপদ নৃ-গোষ্ঠীর জন্য পাহাড়ি অঞ্চলে ফলের বাগান সৃজন ও সবজি আবাদের বিস্তার এবং অনুন্নত চর ও হাওড় অঞ্চলে সমন্বিত কৃষি সহায়ক প্রকল্পসহ বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহন করা দরকার। এক ও দুই ফসলি জমিগুলোকে চার ফসলি জমিতে পরিণত করে শস্যের নিবিড়তা উন্নীত করতে হবে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য উৎপাদনকালীন, বাজারজাতকালীন, প্রক্রিয়াজাতকালীন, রন্ধনকালীন ও পরিবেশনকালীন সময়ে খাদ্য নিরাপদ ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন রাখতে করণীয় বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
জনবহুল এ দেশের সীমিত চাষের জমি, জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে টেকসই কৃষি উন্নয়নে রয়েছে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সাফল্য অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও অধিক বিনিয়োগ ও অংশীদারিত্ব প্রয়োজন। দেশের আবাদযোগ্য প্রতি ইঞ্চি জমিতে উন্নত প্রযুক্তি অনুসরণ করে মৌসুমভিত্তিক বিভিন্ন ফসলের আবাদ নিশ্চিত করতে হবে। ফলশ্রুতিতে উৎপাদন দ্বিগুণ ও আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। আগামী একদশক বিশ্বের সকল দেশ টেকসই উন্নয়নের অভীষ্টগুলো বাস্তবায়নে কাজ করবে, যার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে জনগণের সকল ধরনের দারিদ্র্যের অবসান ঘটানো সম্ভব হবে। উন্নত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাপনার কৌশল প্রণয়ন, ই-কমার্স ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ এবং ক্ষুধামুক্ত পৃথিবীর গর্বিত অংশীদার।
লেখক : কৃষিবিদ ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, প্রজনন বিভাগ, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা