আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসন থেকে শেরে বাংলার নাতি এ কে ফাইয়াজুল হক রাজু আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার বিকাল দুইটায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফাইয়াজুল হক রাজুর পক্ষে তার ছেলে ফারদিন হক মনোনয়নপত্র জমা দেন।
বরিশাল-২ সংসদীয় এলাকা বানারীপাড়া-উজিরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। বরিশালের এ আসনটি ইতিহাস-ঐতিহ্যগতভাবে একটি গুরত্বপূর্ণ আসন। এক সময় দেশি-বিদেশি রাজনীতিবিদসহ সাধারণ মানুষ এ আসনে এসে ঘুরে যেত, রাজনীতির বিভিন্ন দীক্ষা নেওয়ার জন্য এখানে আসত অনেকেই। কিন্তু এ আসনে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত নেতৃত্বের শক্ত কোনো ভিত তৈরি হয়নি। শুধু ব্যক্তিস্বার্থে এখানের রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে। তাই এ আসনে পর পর মেয়াদে দুই বার কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি।
জানা যায়- উপমহাদেশের রাজনীতির কিংবদন্তি ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের অসংবাদিত নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের পুণ্যভূমি বানারীপাড়ার চাখারে। উপমহাদেশের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বাতিঘর শের-ই-বাংলার পুণ্যভূমিতে এমন নেতৃত্বের দন্য দশা হবে- তা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছে না স্থানীয় জনগণ। এ নিয়ে স্থানীয় জনগণ বার বার ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
সরেজমিনে ঘুরে এবং স্থানীয় অনেক প্রবীণদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলার সাধারণ মানুষ ভাগ্য বিতাড়িত। তারা শেরে বাংলার স্মৃতিচারণ করেন। বঙ্গবন্ধু ও শেরে বাংলার মধ্যে যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল তা নিয়ে এখানের মানুষ গর্ববোধ করেন। শেরে বাংলার লাহোর প্রস্তাব থেকে বঙ্গবন্ধু ছয়দফা এখানের জনসাধারণের মধ্যে গভীরভাবে গেঁথে আছে। এ আসনের সাধারণ মানুষ রাজনীতির এ দুই কিংবদন্তিকে এক অভিন্ন চেতনার বাতিঘর হিসেবে ভাবেন, বঙ্গবন্ধু ও শেরে বাংলা একে অপরের সঙ্গে যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল- তা নিয়ে তারা আজো গল্প করেন। এ ঐতিহাসিক পরম্পরা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেন এখানকার শেরে বাংলা ভক্তরা।
এখানকার প্রবীণরা আরো জানান, এ সংসদীয় আসনে শেরে বাংলা একটি আবেগের নাম। সামনের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে জিততে হলে শেরে বাংলার এ আবেগ কাজে লাগাতে হবে। কোনোক্রমেই এখানকার মানুষ এ আবেগ বিসর্জন দিবেন না। কেউ এ আবেগের বিপরীতে চললে তাও বরদাস্ত করবে না স্থানীয় জনসাধারণ।
সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয় তরুণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানকার তরুণদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও শেরে বাংলার আবেগ অনেক বেশি কাজ করে। তারা এ পুণ্যভূমির সন্তান হিসেবে নিজেরা গর্ববোধ করে। আবার এ আসনের নেতৃত্বশূন্যতা দেখেও হতাশা ব্যক্ত করেন অনেকে। তবে শেরে বাংলার আবেগকে কাজে লাগাতে পারলে এ আসনে আওয়ামী বিশাল ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজিত করতে পারবেন- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তরুণ সমাজ।
বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বলেন, শেরে বাংলার পুণ্যভূমির সন্তান হিসেবে আমি গর্ববোধ করি। তাছাড়া শেরে বাংলার পিতৃভূমিতে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান হতে পেরে আমার জীবন অনেকটা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে।
সাবেক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতা হাবিব খান জানান, শেরে বাংলা আমাদের এ মাটির সন্তান। তাঁর রাজনীতি আমাকে রাজনীতি করার অনুপ্রেরণা দেয়েছে। জীবন সায়হ্নে এসে আমি বলতে পারি, আমার এ রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধু ও শেরে বাংলা আমাকে সাহসিকতা শিখিয়েছে, আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে শিখেয়েছে। আমার এ দেহ বঙ্গবন্ধু ও শেরে বাংলার দ্বৈত সান্নিধ্য ও চেতনায় গঠিত। কিন্তু আজ কষ্ট লাগে শেরে বাংলার এ চারণভূমিতে নেতৃত্বশূন্যতা দেখে। শেরে বাংলা এ পলল ভূমিতে দক্ষ নেতৃত্বের ভিত তৈরি হবে- এমনটা আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
শেরে বাংলার উত্তরসূরি এ কে ফাইয়াজুল হক রাজু বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ শেরে বাংলাকে এখনো এত ভালোবাসেন- তা দেখে সত্যিই আমি অভিভূত হই, বিস্মিত হই। এ প্রজন্মের কাছে শেরে বাংলা এখনো এতটা প্রিয় তা দেখে আমি গর্ববোধ করি। আমার পিতা এ কে ফায়জুল হক এ আসনে সংসদ সদস্য হয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনি অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে এ আসনের মানুষের জন্য নির্মোহভাবে কাজ করে গেছেন। নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি এ আসনের সাধারণ মানুষের জন্য নির্মোহ ও নিরলসভাবে কাজ করতে চাই। আমার বাবা ও দাদার রেখে যাওয়া স্রোতধারায় আমি আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সবসময় অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট থাকব।