মঙ্গলবার ১৫ অক্টোবর ২০২৪ ৩০ আশ্বিন ১৪৩১
মঙ্গলবার ১৫ অক্টোবর ২০২৪
যৌথ অভিযানে আটক দু’জনের নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ: বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৫:৪৯ PM আপডেট: ১১.০৯.২০২৪ ৭:২১ PM
সাঘাটায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের সময় নির্যাতনে আটক দুজন মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা। পুলিশের দাবি, অভিযানের সময় অসুস্থতার কারণে তারা মারা গেছেন।

গত সোমবার গভীর রাতে অভিযানের পর মঙ্গলবার দুপুরে পৃথক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দুজনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া এ ঘটনায় আরও তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মৃত ব্যক্তিরা হলেন সাঘাটা ইউনিয়নের গোবিন্দী গ্রামের সোহরাব হোসেন ওরফে আপেল (৩৫) ও শফিকুল ইসলাম (৪৫)। 

এদের মধ্যে সোহরাব গতকাল দুপুরে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে এবং শফিকুল ইসলাম বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে মারা যান। 

আহত তিনজনের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারায় গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ওরফে সুইট (৫৫) ও একই ইউনিয়নের বাঁশহাটা গ্রামের শাহাদত হোসেন (২৮) এবং উত্তর সাতালিয়া গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রিয়াজুল আওয়ামী লীগ নেতা মোশাররফ হোসেনের গাড়িচালক।
হাসপাতালের আরএমও মোহাম্মদ আসিফ বলেন, গতকাল সকালে পুলিশ তিনজনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। দুপুরে সোহরাব হোসেন নামের একজন মারা যান। বাকি দুজন চিকিৎসাধীন। 

নির্যাতনে মৃত সোহরাবের চাচা মো. সুজাউদৌলা বলেন, সোমবার দিবাগত রাতে বাড়ির দোতলা থেকে দেখি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৮ থেকে ১০টি গাড়ি বাড়ির চারদিক ঘিরে ফেলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা হঠাৎ চেয়ারম্যানের বাড়ির গেটে এসে ডাকতে থাকেন। দরজা খুলে দেওয়ার পর চেয়ারম্যানের ঘরে ঢোকেন। এসময় তারা চেয়ারম্যানের গাড়িচালক রিয়াজুল ইসলাম ও কাজের লোক শফিকুলকে মারধর করেন। পরে চেয়ারম্যানকে নিচ থেকে দোতলায় নিয়ে তাকেও মারধর করেন। 

৫ মিনিট রেস্ট দিলে ১০ মিনিট পিটায়
নিহতদের মধ্যে সোহরাব হোসেন আপেল গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে মারা যান। শফিকুল ইসলাম মারা যান বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সদর হাসপাতালে আপেলের স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়। 

মোশারফ হোসেন সুইটসহ অন্যরাও চিকিৎসাধীন রয়েছেন সেখানে। তারা জানান, সোমবার রাত ১২ টার দিকে তাদের বাড়িতে অভিযানে যায় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে অভিযানকারীরা কিছু পায়নি বলে দাবি করেন মোশাররফ হোসেন সুইট। যদিও গ্রেফতারের পর তোলা ছবিতে কয়েকটি রামদা দেখা যায়।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন সাহাদত হোসেন। তিনি জানান, স্থানীয় বাজার থেকে তাকে আটক করা হয়। নিয়ে আসা হয় ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে। এনেই পেছনে থেকে পিটানি শুরু করছে। বলে- 'তোরা চেয়ারম্যানের ক্যাডার'... পাঁচ মিনিট যদি রেস্ট দেয়, দশ মিনিট পিটায়- বলছিলেন সাহাদত হোসেন।
নিহত সোহরাব হোসেন আপেলের স্ত্রীর দাবি, পরিবারের সবাইকে একটা রুমে আটকে রেখে আপেলকে মারধর করা হয়। আমার স্বামীর কাছে কোন অস্ত্র ছিল না। সে তড়পাচ্ছিল- যোগ করেন তিনি।

প্রশাসন যে একটা লোককে মারতে মারতে মাইরে ফেলায় দিবে, এটা আমাদের জানা ছিল না- বলছিলেন সোহরাব হোসেন আপেলের স্ত্রীর চাচাতো ভাই মো. বিপ্লব।

মোশাররফ হোসেন সুইট বলেন, ভোর পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হয়েছি। রাত ১২ টা থেকে মাইর শুরু করছে ভোর ছয়টা পর্যন্ত মারছে।

গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) ইবনে মিজান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের সময় অসুস্থার কারণে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। অভিযানে কতজনকে আটক করা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি।

এ বিষয়ে সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







সোস্যাল নেটওয়ার্ক

  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক আউয়াল সেন্টার (লেভেল ১২), ৩৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত