রবিবার ৬ জুলাই ২০২৫ ২২ আষাঢ় ১৪৩২
রবিবার ৬ জুলাই ২০২৫
দই বেচে একুশে পদক
প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে উচ্ছ্বসিত জিয়াউল হক
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৮:৩৫ PM
একুশে পদকপ্রাপ্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের দই বিক্রেতা মো. জিয়াউল হকের পাঠাগারের জন্য জমি এবং ভবন তৈরি করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তার স্কুলটিকে সরকারিকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে জিয়াউল হক খুবই খুশি। জিয়াউল হক মুঠোফোনে জানান, ‌আজ আমি পৃথিবীর একজন সুখী মানুষ। আজ আমার মনটা ভরে গেছে। মনে হচ্ছে, অনুষ্ঠানটি আমারই ছিল। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমিই বেশি গুরুত্ব পেয়েছি।

তিনি আরো জানান, ‌স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি, একটু বড় পরিসরে আমার পাঠাগারটি হবে। অনেক মানুষ আসবে, বই পড়বে, জ্ঞান চর্চা হবে। এলাকা আলোকিত হবে। সমাজ ভালো হবে। আমার বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা বেড়ে গেছে। মানুষের জন্য আরও কাজ করার ইচ্ছা জাগছে।

এর আগে অমর একুশে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জিয়াউল হকসহ ২১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে ‘একুশে পদক-২০২৪’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেলা সাড়ে ১১টায় এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’ তুলে দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে জিয়াউল হক সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‌‘দারিদ্রের কারণে নিজে লেখাপড়া করতে পারেননি। এটা নিয়ে তার ভেতরে একটা দুঃখ যন্ত্রণা ছিল। কিন্তু তিনি থেমে যাননি। সাধারণ কাজ করে, দই বিক্রির ছোট্ট দোকান দিয়ে তিনি নিজের জীবন জীবিকা এবং সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন। পাশাপাশি অন্যের মাঝে জ্ঞানের আলো বিতরণ করবার জন্য তিনি পাঠাগার তৈরি করেন এবং সাধারণ মানুষকে পড়াশোনার সুযোগ করে দেন। তিনি একটি স্কুল তৈরি করেছেন।’
 
জিয়াউল হককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, তাকে এই পুরস্কার তুলে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত এই কারণে যে, সারাদেশে যদি আমরা খোঁজ করি এরকম বহু গুণীজন পাবো। হয়তো দারিদ্র্য কিংবা সামাজিক কারণে তারা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাননি; কিন্তু সমাজকে কিছু তারা দিয়েছেন। তিনি যে পাঠাগারটা করেছেন তার জন্য আমার কাছে কিছুদিন আগে বললেন যে, একটা স্থায়ী ভূমি এবং একটা বিল্ডিং দরকার। আমি করে দেব। শুধু তাই না, যে স্কুলটা করেছেন সেটাও তিনি চান যেনো সরকারিকরণ করা হয়। আমি স্কুলটার খোঁজ-খবর নেবো এবং যথাযথভাবে এটা করে দেব। কেন করে দেব? যে মানুষটা জীবনে এত বড় ত্যাগ স্বীকার করতে পারে তাদের জন্য করা আমার দায়িত্ব। আমি শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বলছি না, আমি জাতির পিতার কন্যা হিসেবে বলছি। আমি যদি প্রধানমন্ত্রী নাও থাকতাম এবং আগে এই তথ্যটা পেতাম তাহলে আমরা নিজেরাই চেষ্টা করতাম।

এর আগে অনুষ্ঠান মঞ্চে পদক গ্রহণের জন্য জিয়াউল হকের নাম ঘোষণার সময় উপস্থিত অতিথিরা দাঁড়িয়ে এবং করতালি দিয়ে সম্মান জানান।

এ সময় তার সম্পর্কে বলা হয়, মোঃ জিয়াউল হক একজন অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব। জন্মসূত্রে অত্যন্ত মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে ছোটবেলা থেকেই স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে জীবনসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য হন। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। শুরু করেন দইয়ের ব্যবসা। এরপর সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা ফিরে এলে দই বিক্রির লভ্যাংশের টাকা দিয়ে গরিব, অসহায় ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি গরিব, অসহায় শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৬৯ সাল থেকে তিনি তিল তিল করে গড়ে তোলেন তার পারিবারিক লাইব্রেরি। একজন সাধারণ মানুষ হয়েও নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও মানবসেবায় ব্রতী হয়ে যে সাধারণ চিন্তা করেছেন তা এই সমাজে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

জিয়াউল হকের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার চামামুশরীভুজা গ্রামে। দই বেচে তিনি এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে গৌরব অর্জন করেছেন। ‘বেচি দই, কিনি বই’ স্লোগানের রূপকার এ মানুষটি কেবল শিক্ষার আলো ছড়ানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, তিনি ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েন সমাজসেবায়।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত