শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫ ২১ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫
বগুড়ায় অবৈধ অটোরিকশায় যানজটে নাকাল নগরবাসী
বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫, ৬:৫৩ PM
বগুড়া শহর এখন যেন অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার রাজত্বে পরিণত হয়েছে। শহরের প্রতিটি রাস্তায়ই ছয় আসনের চিকন বা মোটা চাকার ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত রিকশা অবাধে চলাচল করছে, যার বেশির ভাগই নিবন্ধনবিহীন। ফলে প্রতিদিনই শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে দেখা দিচ্ছে ভয়াবহ যানজট।

ফুলবাড়ী মহিলা কলেজ থেকে কলোনী, চেলোপাড়া থেকে বাদুরতলা, সাতমাথা থেকে খান্দারসহ শহরের প্রধান রাস্তাগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজটে অচল হয়ে পড়ছে জনজীবন। সপ্তাহের বিশেষ করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অফিসগামী মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও জরুরি কাজে আসা নাগরিকেরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

বিভিন্ন সূত্র এবং প্রশাসনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বগুড়া ছোট্ট এই নগরে যানজটের পেছনে একাধিক কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এ শহরে অনুমোদিত রিকশা আর চোখেই পড়ে না। অনুমোদিত অবৈধ রিকশায়  চেয়ে গেছে গোটা বগুড়া। এগুলোর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।

হকার এবং দোকানদাররা ফুটপাত ও রাস্তার বড় অংশ দখল করে ব্যবসা চালাচ্ছেন, যা পথচারীদের সড়কে নামতে বাধ্য করছে। শহরের মাঝ দিয়ে রেললাইন যাওয়ার পাশাপাশি বড়গোলা মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে ট্রাক আনলোডের কারণে যানজট প্রকট হচ্ছে। শহরে নেই কার্যকর কোনো নগর পরিকল্পনা। ফলে যানজট নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।

সচেতন মহল মনে করছে, শুধুমাত্র প্রশাসনিক উদ্যোগ নয়, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এই সমস্যা দূর করা সম্ভব নয়।

সিনিয়র সাংবাদিক রতন রায় বলেন, “শুধু লোক দেখানো অভিযান দিয়ে হবে না। শহর পরিকল্পনা ও অবৈধ যান নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি।”

তরুণ রাজনীতিবিদ ও গণমাধ্যম কর্মী আজিজ আহম্মেদ রুবেল বলেন, পৌর আইন প্রয়োগে প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে দ্রুত যানজট কিছুটা হলেও নিরসন সম্ভব। বিশেষ করে বাইপাস সড়কে যানবাহন সরিয়ে নিলে শহর কিছুটা স্বস্তি পাবে।”

অন্যদিকে বগুড়া জেলা প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশের যৌথ উদ্যোগে শহরের যানজট নিরসনে নানা গুরুতপূর্ন পদক্ষেপ ইতোমধ্যে গ্রহন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আতোয়ার রহমান। এরমধ্য রিকশার সংখ্যা নির্ধারণ, রংভিত্তিক চলাচল ব্যবস্থা, ফুটপাত উচ্ছেদ এবং লিংক রোড চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সম্ভাব্য প্রতিকার সমস্যা প্রতিকার
অবৈধ রিকশা নিবন্ধন বাধ্যতামূলক ও সংখ্যাগত নিয়ন্ত্রণ (জোড়-বিজোড় ভিত্তিক চলাচল) ফুটপাত দখল স্থায়ী পুনর্বাসন ও নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা রেললাইন বাইপাস সড়কে স্থানান্তরের উদ্যোগ ট্রাক চলাচল নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ ও শহরের বাইরে আনলোডিং জোন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জনবল বৃদ্ধি ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

বগুড়া শহরের যানজট এখন আর শুধুমাত্র প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, এটি নাগরিক জীবনের প্রতিদিনের যন্ত্রণা। অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ফুটপাত দখল, রেললাইন ও ট্রাক চলাচল সব মিলিয়ে শহর যেন হাঁসফাঁস করছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমন্বিত উদ্যোগেই কেবল এই সমস্যা দূর করা সম্ভব।

সবকিছুই শেষ পর্যায়ে, অচিরেই বগুড়া পৌরসভা সিটি কর্পোরেশন হতে যাচ্ছে। এখনই যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে আগামী সিটি কর্পোরেশনে যানজটের প্রভাব আরও ভয়াবহ হতে পারে, এমন আশঙ্কা করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত