সোমবার ৩০ জুন ২০২৫ ১৬ আষাঢ় ১৪৩২
সোমবার ৩০ জুন ২০২৫
সেতুর কাজ বন্ধে দুর্ভোগে চার গ্রামের মানুষ
দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১২:১৩ PM
দশমিনায় আদমপুরা খালের ওপর নিমার্ণাধীন সেতুটির কাজ সময়সীমা শেষ হওয়ার পর এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। দুই ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় সড়কের সেতুর কাজ শুরু করার সময় একটি কাঠের অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করে দেওয়া হয়। সেই কাঠের সেতুও নড়বড়ে হয়ে গেছে।

এদিকে, সেতু নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় পন্যবাহী ছোটবড় যানবাহনগুলো দ্বিগুন পথঘুরে চলাচল করছে। খালে বাঁধ দেওয়ায় বর্ষায় জলাবদ্ধতা ও শুকনো মৌসুমে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। দুই ইউনিয়নের চার গ্রামের মানুষ নানা  দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানায়, উপজেলার বহরমপুর ইউনিয়ন ও বেতাগিসানকিপুর ইউনিয়নের সংযোগ সড়কটি ১০কিলোমিটার। এই সড়কের সীমান্তবর্তী মোল্লাবাজার এলাকায় আদমপুরা খালের ওপর পুরোনো লোহার সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়লে সেই খালের ওপর নতুন গার্ডার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়ে) আওয়ায় এই সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২২সালের ১৫মার্চ। ১০৫ফুট লম্বা ১৮ফুট প্রস্থের এই সেতু নির্মাণে ব্যয়ে চুক্তিমূল্য ছিল ৪কোটি ১৭লাখ ৫৬হাজার টাকা। সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩সালের ১৮ফেব্রুয়ারি। 
 
স্থানীয়রা জানায়, একসময় বহরমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা এই সেতু পেরিয়ে বেতাগী সানকিপুর হয়ে জেলা শহরে থেকে পন্য নিয়ে আসা-যাওয়া করতো। এটি ছিল তাদের সহজ পথ। কিন্তু সেতু না থাকায়  তাদের প্রায় দ্বিগুন পথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। এছাড়াও সেতু না থাকায় প্রতিদিন চার গ্রামের অন্তত এক হাজারেরও বেশি মানুষ চলাচলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেতু নির্মাণের জন্য খালের দুই পাশে সেতুর দুটি পাকা পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। সেখান দিয়ে রড বেরিয়ে আছে।  সেতুটির পাশে অস্থায়ীভাবে নির্মিত কাঠের পাটাতনের  সেতু দিয়ে স্থানীয় লোকজন চলাচল করছে। সেতু দিয়ে কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারছেনা। তবে মোটরসাইল নিয়ে সেতুর ওপর উঠলে বোঝা যায়, সেতুটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। সেতুর কিছু কিছু স্থানে কাঠের পাটাতন ভেঙে রয়েছে। এদিকে সেতুস্থানের খালে পানি নেই। মাঠ দিয়ে অনেকে হেঁটে পার হয়ে যেতে দেখা গেছে। 

এবিষয়ে সেতু এলাকার বাসিন্দা এ্যাডভোকেট এনামুল হক রতন বলেন, আগে তাদের এখানে লোহার সেতু ছিল। কিন্তু জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় তারা  সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সেতুর কাজ শুরু হওয়ায় তাঁরা খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সেতুর কোনো কাজ হয় না।

এবিষয়ে বহরমপুর ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন মৃধা  বলেন, সেতুর পশ্চিমপাড়ে দক্ষিন আদমপুর, পশ্চিম আদমপুর ও পূর্ব আদমপুর গ্রাম, আর পূর্বপাড়ে উত্তর আদমপুর গ্রাম। এই চার গ্রামের কৃষিকাজে আদমপুর খালের পানি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সেতু নির্মাণের সময় খালে বাঁধ দেওয়ায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা  ও শুকনো মৌসুমে পানি সংকটে পড়তে হচ্ছে তাদের।  

সেতুর পূর্বপাড়ের বাসিন্দা মোর্শেদা বেগম জানান, আগে লোহার জরাজীর্ন সেতু পাড় হয়ে তাদের চার গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা দক্ষিন আদমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়েসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতো। এখন বিকল্প কাঠের নড়বড়ে সেতু ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীসহ এলাকার লোকজনকে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

এবিষয়ে বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়ান পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান ঝন্টু বলেন, দুই ইউনিয়নের সহজ সড়ক যোগাযোগ এই ইউনিয়ন সংযোগ সড়ক। কিন্তু সেতু নির্মাণ শেষ না হওয়ায় সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও খালের দুই পাড়ের  চার গ্রামের ফসলী খেতে শুস্ক মৌসুমে পানি সংকট ও বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও সেতু না হওয়ায় দুই ইউনিয়নের পন্যবাহী যানবাহনগুলো প্রায় দ্বিগুন পথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। যদি এই সেতুর কাজ ঠিক সময়ে শেষ হতো, তাহলে চার গ্রামের মানুষের অনেক সুবিধা হতো। সুবিধা হতো পন্যবাহী ছোট ছোট যানবাহনগুলোর চলাচলে।  

এবিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রতিনিধি ইকবাল মাহামুদ বলেন, ইতিমধ্যে সেতুর মূল কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন সেতুর পাটাতন করতে হবে। নির্মাণ শ্রমিক সংকটের কারনে সেতু নির্মাণ শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে। দ্রæত সেতুর বাকি কাজ শেষ করা হবে। এজন্য ২০২৪ সালের ৩০এপ্রিল পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে।

এবিষয়ে এলজিইডির দশমিনা উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী মো. মকবুল হোসেন বলেন, সেতু নির্মাণকাজের ৭০শতাংশ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ বন্ধ রেখেছে। সেতু নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। তবে দ্রæত ঠিকাদার কাজ শেষ করবেন বলে তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত