বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫ ২৬ আষাঢ় ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
শিক্ষকের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম
কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪, ৫:০৫ PM
নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় ৯২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই, সহকারি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৩৮টি। সহকারি শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে কিংবা চলতি দায়িত্বে থাকায় ওই সব বিদ্যালয়ে পড়াশোনা চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। 

প্রশাসনিক কাজেও বাড়ছে জটিলতা। যত দ্রুত সম্ভব ওই সব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বিদ্যালয়ে পড়াশোনা পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন সহকারী শিক্ষক, পরিচালনা কমিটি ও অভিভাবকরা। 

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়,  উপজেলায় ১৮২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ৯২টি বিদ্যালয়ে পূর্ণ মর্যাদার প্রধান শিক্ষক নেই।  সহকারি শিক্ষকের ৩৮টি পদও শূন্য রয়েছে। ৯২টি প্রধান শিক্ষক না থাকায় সহকারী শিক্ষকগণকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও চলতি দায়িত্ব দিয়ে একইসঙ্গে দুই দায়িত্ব পালন করছেন তারা। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। 

৯২টি বিদ্যালয়ের বেশির ভাগই ৪/৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন চলতি দায়িত্বে কিংবা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ায় অন্য সহকারি শিক্ষক দিয়েই ক্লাস চালানো কারণে পড়াশোনা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও সহকারি শিক্ষকদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করায় তাঁদের মানতে চান না অন্য সহকারি শিক্ষকরা। ফলে অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হচ্ছে। 

২০১৮ সাল থেকে উপজেলার রোয়াইলবাড়ী ইউনিয়নে চাপুরী কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেই। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে ৩০২ শিক্ষার্থী রয়েছে। আর চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষকসহ ছয় জন রয়েছে। বিদ্যালয়টির চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষক মো.রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাকে মাসের ৮ থেকে ১০ দিন দাপ্তরিক কাজের জন্য উপজেলা সদরে যেতে হয়। অন্য শিক্ষকরা সব ক্লাস নিতে হয়। এতে ঠিকঠাক মতো ক্লাস না হওয়ায় শিক্ষার মান দূর্বল হচ্ছে। 

চাপুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রের অভিভাবক মো.আহসানুজ্জামান বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনেক বেশি। প্রধান শিক্ষক প্রায় সময়ই স্কুলের কাজে উপজেলায় যাইতে হয়। প্রধান শিক্ষকসহ স্কুলে পর্যাপ্ত সহকারি শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। 

অপরদিকে উপজেলা শিক্ষা অফিসে ১৩টি পদের মধ্যে ৭টি পদই শূন্য । কেবলমাত্র ১জন প্রাথমিক শিক্ষা  অফিসার, ২জন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, ১জন ইডিএ, ১জন অফিস সহকারী ও ১জন হিসাব সহকারী  জোড়াতালি দিয়ে কোনোভাবে চালাচ্ছেন অফিস। এতে করে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে  শিক্ষা কার্যক্রম। তাই শিক্ষা ব্যবস্থা গতিশীল করার স্বার্থে সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা ও অফিস ষ্টাফের পদ পূরণ করা দরকার মনে করছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস আরো জানায়, কেন্দুয়া উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ১৮২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে । প্রাথমিকে  ৯২টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে । ৫২টি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষককে চলতি দায়িত্ব দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কাজ চালানো হচ্ছে আর ৪০টি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ৩৮ সহকারী শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। সহকারী শিক্ষা অফিসারের সংকট থাকায় ৭টি ক্লাস্টারের কার্যক্রম ও ব্যাহত হচ্ছে।

কেন্দুয়া প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও পূর্বরায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষক শফিকুর রহমান জানান, সহকারি শিক্ষা অফিসার,  প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় বিদ্যালয়ে পাঠদান ও অফিসের কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিগগিরই এসব পদ পূরণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।

কেন্দুয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাকী জানান, গত বছর স্কুলের প্রধান শিক্ষক অবসরের পর থেকে আমি চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছি । সহকারী শিক্ষক পদ থেকে চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক হওয়ায় অনেক কাজই বুঝতে সমস্যা হয় পাশাপাশি স্কুলের কার্যক্রমে অনেক চাপ বেড়ে গেছে বলে তিনি মনে করেন। 

কেন্দুয়া উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মীর্জা মোহাম্মদ জানান, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পদ শূন্য হওয়ায় আমাদের কাজ করতে অনেক বেগ পুহাতে হচ্ছে। যার ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তারপরও শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে সম্মিলিত নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

৯২টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকাসহ স্টাফ ও সহকারি শিক্ষক সংকটে প্রশাসনিক সকল কার্যক্রমে ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে কেন্দুয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.মনিরুল ইসলাম বলেন, নানা জটিলতার কারণে পদোন্নতি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সমস্যাটি প্রকট আকার ধারন করেছে।  পদোন্নতির মাধ্যমে ৬৫ শতাংশ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হয়ে থাকে। যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক নেই সেগুলোর একটি তালিকা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের পাঠানো হয়েছে। আর শিক্ষক পদোন্নতির নিয়োগের মাধ্যমে এসমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করছি। 

উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে পাশাপাশি 

এভাবে চললে শিক্ষার গুণগতমান ক্ষুণ্ন হবে। এশূন্য পদগুলো দ্রুততম সময়ে পূরণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত