লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা এম সজিব হত্যা মামলার প্রধান আসামি কাজী মামুনুর রশিদ বাবলুকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনার ৯ দিনেও সে গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের।
অভিযুক্ত কাজী বাবলু চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক এবং থানা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক।
তার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠলেও সংগঠনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝেও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল বাংলানিউজকে বলেন, কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু একটি হত্যা মামলার প্রধান আসামি। এ বিষয়টি আমি কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগকে অবহিত করেছি। দল থেকে তাকে অব্যাহতির বিষয়ে একটি সুপারিশপত্র পাঠানোর জন্য আমাকে বলেছে। পত্র পাঠিয়েছি। আশাকরি দুই-এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সজিব হত্যার বিচার ও প্রধান আসামি কাজী মামুনুর রশিদ বাবলুর বিচারের দাবি জানিয়ে রোববার (২১ এপ্রিল) বেলা ১১ দিকে চন্দ্রগঞ্জ বাজারে মানববন্ধন করে চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগ ও কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগ। এসময় থানা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাব, সহ-সভাপতি এম. ছাবির আহম্মেদ, চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, থানা কৃষকলীগের সভাপতি জাকির হোসেন জাহাঙ্গীর, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন লিটন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সোলায়মান, ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক সাহাব উদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জার রিংকু, থানা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রিয়াজ হোসেন জয়, থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু তালেব, সাধারণ সম্পাদক এম মাসুদুর রহমানসহ অনেকে।
চন্দ্রগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, হত্যাকারী বাবলুকে আইনের আওতায় আনতে আমি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এছাড়া তাকে দল থেকে বহিষ্কারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেন, হত্যাকারী ডাকাত বাবলুকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাব।
চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এম ছাবির আহম্মেদ বাবলু বাহিনীকে আইনের আওতায় আনতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, হত্যাকারীরা গ্রেপ্তার না হলে আমরা রাজপথ ছাড়বো না। বাবলু চন্দ্রগঞ্জ বাজারে ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছে। সে মিথ্যা মামলা দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। হামলা চালাচ্ছে। ডাকাত গোষ্ঠীকে চিরতরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার সজিব চন্দ্রগঞ্জ কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। তিনি চন্দ্রগঞ্জের পাঁচপাড়া গ্রামের মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে। গত ১২ এপ্রিল (শুক্রবার) রাতে চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন পাঁচপাড়া গ্রামের যৈদের পুকুরপাড় এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা সজিব, সাইফুল পাটোয়ারী, মো. রাফি ও সাইফুল ইসলাম জয়ের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। একপর্যায়ে সজিবকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এসময় তাকে বাঁচাতে গেলে অন্যদের ওপরও গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। পরে আহত অবস্থায় ওই চারজনকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য সজীব, সাইফুল ও রাফিকে ঢাকায় প্রেরণ করে।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত ২ টার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সজিবের মৃত্যু হয়। সজিবের মৃত্যুর পর উত্তপ্ত হয়ে উঠে চন্দ্রগঞ্জ এলাকা।
হামলার ঘটনায় গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাতে সজিবের মা বুলি বেগম বাদি হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু ও সদস্য সচিব তাজুল ইসলাম তাজু ভূঁইয়াসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছে। এতে ২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এ ঘটনার অভিযুক্ত তাজু ভূঁইয়া, ফারুক হোসেন, রেজাউল করিম বাবু ও ইব্রাহিমসহ ৫ জনকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করেছে চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ। তারা কারাগারে রয়েছেন।
সজিব হত্যা মামলাটি তদন্ত করছেন চন্দ্রগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহেদ আলম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, হত্যা মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। মামলার পাঁচজন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে।
প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, তাকেও গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান জোরদার করা হয়েছে।