বুধবার ১৮ জুন ২০২৫ ৪ আষাঢ় ১৪৩২
বুধবার ১৮ জুন ২০২৫
এমপি পদপ্রার্থী হিসেবে আলোচনায় যারা
রাজনৈতিক শিষ্টাচারের রোষানলে যশোর -৪
যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫, ১০:৩১ PM
যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনটি একসময় আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও দীর্ঘকাল ধরে এখানে বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব মানুষের সেবা করে আসছেন। একসময় দলের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করায় এই আসনে তার বিকল্প ভাবা হতো না। তবে, সাম্প্রতিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিএনপি এখন এই আসন নিয়ে নতুন করে ভাবছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্র জানায়, টিএস আইয়ুবের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পর থেকে বেশ কিছু সাংগঠনিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে তাকে সাংগঠনিক পদে রাখতে চাইলেও এমপির টিকিট থেকে বিরত রাখা হতে পারে, যা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। জানা গেছে, ৫ আগস্টের আগে ও পরে আইয়ুব দম্পতি রাজনৈতিক নয়, দুর্নীতির মামলায় জেলে ছিলেন। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি রাতারাতি কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ উঠেছে, যেখানে তিনি আগে অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছিলেন। অভিযোগ মতে, তিনি টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করছেন এবং রাজনৈতিক পরিচয় না থাকা সত্ত্বেও নিজ স্ত্রীকে থানা বিএনপির সভাপতি করেছেন। এ কারণে ৫ আগস্টের রাজপথে থাকা একাধিক বিএনপি নেতা তার ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

আইয়ুব তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বুঝতে পেরে দলের সকল কমিটি রদবদলের চেষ্টা করেন এবং যোগ্যতার চেয়ে অযোগ্যদের বেশি দায়িত্ব দেন। এতে দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা পদবঞ্চিত হন। অভিযোগ উঠেছে, তিনি ৫ আগস্টের আন্দোলনে মাঠে না থেকেও দুর্নীতির মামলায় খালাস পেয়েছেন এবং বন্যার্তদের সহযোগিতার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও, তিনি সহজ-সরল নেতাকর্মীদের জিম্মি করে ও তাদের মাধ্যমে দলীয় কর্মসূচির নামে চাঁদাবাজি করে নিজের পকেট ভারী করেছেন। মির্জা আব্বাস তাকে ডেকে নিয়ে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন এবং ভবিষ্যতে এমন কর্মকাণ্ড না করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

দলীয় সূত্র ও অভিযোগের তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পর আইয়ুব দলকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করছেন এবং রাজপথের নেতাকর্মীদের পাত্তা দিচ্ছেন না। তাই যশোর-৪ আসন থেকে বিএনপি ক্লিন ইমেজের নেতাকে সামনে আনতে চাইছে। সম্প্রতি তারেক রহমানের কাছে আইয়ুবের বিরুদ্ধে কিছু আলামত জমা পড়েছে। আইয়ুব টাকার জোরে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

আইয়ুব যে কোনো মূল্যে নিজে বা তার স্ত্রীকে এমপি করতে মরিয়া। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন এবং রাজপথের নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ রয়েছে। স্ত্রীর যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তাকে জোরপূর্বক দলের শীর্ষ পদে বসানোয় তিনি সমালোচিত হচ্ছেন।

এই আসনে স্বাধীনতার পর থেকে ১২টি নির্বাচনের মধ্যে ৮টিতে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ভোটের সমীকরণ পাল্টে গেছে। বিএনপি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হতে চায়, পিছিয়ে নেই জামায়াতে ইসলামীও।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় অন্তত ৫ জনের নাম শোনা যাচ্ছে: ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, মসিয়ুর রহমান (বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক), ফারাজী মতিয়ার রহমান (অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি), আবদুল হাই মনা (বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি) এবং অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ (জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক)।

টিএস আইয়ুব দীর্ঘদিন ধরে কাজ করলেও ৫ আগস্টের আন্দোলনে তার ভূমিকা নিষ্ক্রিয় ছিল এবং তার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে নেতাকর্মীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও, আওয়ামী লীগের এমপি রণজিত কুমারের কাছ থেকে গোপনে টাকা নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।

অন্যদিকে, মসিয়ুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। তার বিরুদ্ধে প্রায় ৩০টি মামলা রয়েছে এবং তিনি ৬ বার কারাবরণ করেছেন। ৫ আগস্টের আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা তাকে তারেক রহমানের সুনজরে এনেছে। তিনি ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসেবে পরিচিত এবং তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।

অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীরাও মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন যশোর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসূল। এছাড়াও জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি, ইসলামী আন্দোলন এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থীরাও আলোচনায় রয়েছেন।

সাধারণ মানুষ মনে করেন, আইয়ুবের পরিবর্তে মসিয়ুর মনোনয়ন পেলে তিনি একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবেন, কারণ ৫ আগস্টের আন্দোলনের পর তিনি চুরি, ডাকাতি, লুটপাট ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিলেন এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য কমিটি গঠন করেছিলেন।

যশোর-৪ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৪ জন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে টিএস আইয়ুব মাত্র ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনেও পরাজিত হন। এবারও তিনি সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো তার মনোনয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা হতে পারে।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত