গরমজনিত সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর হলো হিটস্ট্রোক। দীর্ঘসময় প্রচণ্ড গরমে থাকার ফলে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে হিটস্ট্রোক হয়।
দেশে প্রতিদিনই ভাঙছে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। দুর্বিষহ গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। অতি মাত্রার তাপদাহে সারাদেশে হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। দীর্ঘসময় ধরে গরম আবহাওয়াতে থাকার ফলে হিটস্ট্রোক হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়।
গরম পরিবেশে থাকার কারণে দেহের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলেই হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে না পরলে মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, বৃক্ক ও পেশির ক্ষতি হয়। আর যত দেরি হবে চিকিৎসা নিতে ততই মৃত্যু ঝুঁকি বাড়বে।
হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ
দেহে সার্বিক তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে চলে যাওয়া।
গরমে মানসিকভাবে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়া, উল্টাপাল্টা কথা বলা, প্রলাপ বকা, খিঁচুনি ও অজ্ঞান হওয়া।
গরমে অসুস্থ হয়ে বমিভাব বা বমি করা।
দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াতে চামড়ার রং পরিবর্তিত হয়ে লালচে হওয়া।
ঘনঘন শ্বাস নেওয়া।
হৃদপিণ্ডের গতি বাড়া। কারণ দেহ ঠাণ্ডা করতে হৃদযন্ত্র বেশি মাত্রায় কাজ করা শুরু করে।
মাথাব্যথা হওয়া। মনে হবে মাথার ভেতর দপদপ করছে।
প্রতিকার
আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ছায়াতে আনতে হবে।
অতিরিক্ত জামাকাপড় সরিয়ে দিতে হবে।
যে কোনোভাবে দেহ ঠাণ্ডা করার ব্যবস্থা করতে হবে। হতে পারে ঠাণ্ডা পানি ঢালা, গোসল করানো, পানি খাওয়ানো, পানি ছিটানো, ফ্যান বা এসির মধ্যে রাখা। ভেজা কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে মাথা, ঘাড়, বাহুমূল অর্থাৎ শরীরের সমস্ত ভাঁজের জায়গা ভালো মতো মুছে দেওয়া বা পানি ঢালা।
হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার নানান কারণ
প্রচণ্ড গরমের মধ্যে থাকা ছাড়াও আরও কারণে মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত কাপড় পরা। যা শরীরের ঘাম হয়ে উবে যাওয়া রোধ করে। ফলে দেহ ঠাণ্ডা হতে পারে না।
মদ্যপান করলেও দেহের তাপমাত্রা বাড়ে। যা থেকে হিটস্ট্রোক হতে পারে।
পানিশূন্যতা থেকেও হিটস্ট্রোক হয়। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে ঘাম ও প্রস্রাবের কারণে দেহ আর্দ্রতা হারায়।
ঝুঁকি এড়াতে
পরতে হবে হালকাপাতলা ঢিলাঢালা পোশাক। বেশি বা আঁটসাঁট কাপড় দেহকে ঠাণ্ডা হওয়া থেকে প্রতিহত করে।
রোদপোড়া বা ‘সানবার্ন’ দেহের শীতল প্রক্রিয়াকে ব্যহত করে। তাই রোদপোড়া রোধে সানগ্লাস, টুপি পরতে হবে। দুই ঘণ্টা পরপর মাখতে হবে বোর্ড-স্পেকট্রাম-যুক্ত সানস্ক্রিন; যেগুলোর এসপিএফ হতে হবে অন্তত ১৫।
পার্ক করা গাড়িতে কাউকে অপেক্ষায় রেখে যাওয়া যাবে না। কারণ রোদের মধ্যে গাড়ি দাঁড়ানো অবস্থায়, গাড়ির ভেতরের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রির মতো বেড়ে যায় ১০ মিনিটেই।
দিনের সবচেয়ে গরমের ক্ষণটায় পরিশ্রমের কাজ এড়াতে হবে। এই সময় ছায়াতে থাকতে হবে। বেশি পানি পান করতে হবে। ব্যায়াম করার অভ্যাস থাকলে গরম আবহাওয়াতে শারীরিক কসরত করা যাবে না। সন্ধ্যার পর তাপমাত্রা কমলে করা যেতে পারে।
ঝুঁকি বেশি যাদের
যেকোনো বয়সের মানুষের হিটস্ট্রোক হতে পারে। তবে সাধারণত ৪ বছরের কম বয়সী শিশু ও ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি, অর্থাৎ যাঁদের গরম সহ্যের ক্ষমতা কম, তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
যাদের শরীর খুব দুর্বল, তাঁরাও হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন।
কিডনি, হার্ট, লিভার ও ডায়াবেটিসের রোগীর হিটস্ট্রোক হতে পারে।
ক্রীড়াবিদ, ব্যায়ামবিদ ও প্রচণ্ড রোদে কাজ করেন, এমন ব্যক্তিদেরও হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
পরিশ্রম: প্রচণ্ড গরমে দীর্ঘক্ষণ শারীরিক পরিশ্রমের কাজ যারা করে তাদের ঝুঁকি বেশি।
হঠাৎ গরম আবহাওয়া: সাধারণ গ্রীষ্মকাল এক বিষয়। আর গরমকালে ‘হিটওয়েভ’ শুরু হওয়া আরেক বিষয়। আবহাওয়ার এরকম পরিবর্তন দেহ সইতে পারে না। এছাড়া ঠাণ্ডা পরিবেশ থেকে গরমে যাওয়ার কারণেও হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
ওষুধ ও স্বাস্থ্যসমস্যা: প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ায়, ‘অ্যান্টিডিপ্রেসমেন্ট’ ও রক্তচাপের ওষুধ যারা খান তাদের বেশি সাবধান থাকতে হবে। এছাড়া হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ, ডায়াবেটিস- এরকম দীর্ঘমেয়াদি রোগে যারা ভুগছেন তাদের হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।