সোমবার ৭ জুলাই ২০২৫ ২৩ আষাঢ় ১৪৩২
সোমবার ৭ জুলাই ২০২৫
আজ ‘শহীদ সাগর’ গণহত্যা দিবস
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: রবিবার, ৫ মে, ২০২৪, ৪:২২ PM আপডেট: ০৫.০৫.২০২৪ ৪:৫০ PM
আজ ৫ মে লালপুর উপজেলার গোপালপুর নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে ‘শহীদ সাগর’গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকহানাদার বাহিনী নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল অবরুদ্ধ করে মিলের তৎকালীন প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজিমসহ ৪২ জন কর্মকর্তা, শ্রমিক-কর্মচারীদের ব্রাশফায়ার করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে তাদেরকে পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়। 

শহীদদের স্মরণে দিবসটি ‘শহীদ সাগর’ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ওই পুকুরটির নামকরণ করা হয় ‘শহীদ সাগর’।

জানা যায়, ১৯৭১ সালে ৩১ মার্চ ভোরে মশারি ও শাড়ি পরে পালানোর সময় মেজর রাজা আসলাম খান, হায়দার খান, সুবেদার গুলবাহার খানসহ আরও চারজনকে ধরে ফেলে মুক্তিকামী ও নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের তৎকালীন নিরাপত্তা পরিদর্শক হামিদুল হক চৌধুরী (বাবু)। পরে তাদের মিলের তৎকালীন প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজিমের বাংলোতে কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। 

ওইদিন মিলের জিপ গাড়িতে করে তাদের লালপুর শ্রী সুন্দরী স্কুল মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে হাজারও জনতার মধ্যে মিলের তৎকালীন নিরাপত্তা পরিদর্শক হামিদুল হক চৌধুরী (বাবু) গুলি করে তাদের হত্যা করেন বিষটি ছড়িয়ে পড়লে প্রতিশোধ নিতে হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালে ৫ মে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে অতর্কিত হামলা চালায় এবং মিলের সবগুলো প্রবেশপথের দরজা বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে মিলের তৎকালীন প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজিমসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে গোপাল পুকুরের পাড়ের (বর্তমান শহীদ সাগর) সামনে তাদেরকে সারি করে চোখ বেঁধে দাঁড় করানো  হয়এ সময় হানাদার বাহিনীর সদস্যরা মিলের তৎকালীন প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজিমকে ধমক দিয়ে বলে মেজর রাজা আসলামসহ তার সহকারীদের কারা হত্যা করেছে? আনোয়ারুল আজিম বলেন, তোমরা আমাকে গুলি করে হত্যা কর। 

মিলের কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে হত্যা করো না। পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা তার কথা শোনেনি। পরে ওই পুকুরপাড়ে মিলের তৎকালীন প্রশাসক আনোয়ারুল আজিমসহ মুক্তিকামী ৪১ জন বাঙালি কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়।৪২ শহীদের স্মরণে স্বাধীনতার পরে ওই পুকুরটি ‘শহীদ সাগর’ নামকরণ করা হয় এবং সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য একটি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। আর হানাদার বাহিনীর বুলেটের আঘাতের চিহ্ন পুকুরের সিঁড়িতে কালের সাক্ষী হয়ে আজও রয়ে গেছে। এ ছাড়া শহীদ সাগরে অবস্থিত স্মৃতিস্তম্ভে মিলের তৎকালীন প্রশাসক শহীদ লে. আনোয়ারুল আজিমসহ মুক্তিকামী ৪২ বাঙালি শহীদ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নামের তালিকা সাক্ষী হয়ে আজও রয়েছে। 

শহীদের কয়েকজন হলেন- লে. আনোয়ারুল আজিম, সহিদুল্লাহ, গোলজার হোসেন তালুকদার, সাইফুদ্দিন আহমদ, আবুল হোসেন, আবদুর রউফ, মান্নান ভূইয়া, গোলাম কিবরিয়া, নূরুল হক, আজহার আলী, মকবুল হোসেন, আবুল বাসার, মনসুর, রহমান, সাজেদুর রহমান, ইসমাইল হোসেন, হাবিবুর রহমান, মোসাদ্দারুল হক, মোকসেদুল আলম, আ. রহমান আমিন, মো. আলী, মোজাম্মেল হক, আব্দুল মান্নান, ফিরোজ মিয়া, আক্তার উদ্দিন, সোহরাব আলী, আনোয়ারুল ইসলাম, পরেশ উল্লাহ, আ. মান্নান, কামাল উদ্দিন, আবুল কাসেম, আব্দুর রব, শামসুল হক, আব্দুল মজিদ, আবুল কালাম, নজরুল ইসলাম, আয়েজ উদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল, মোসলেম উদ্দিন, জহির উদ্দিন, শহীদুল্লাহ, মো. আলী প্রমুখ। 

এছাড়া আর শহীদদের নাম পাওয়া যায়নিএ ছাড়াও সেদিন যারা সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন তারা হলেন- মেহমান আলী, নওসাদ আলী, খন্দকার ইমাদ উদ্দিন আহম্মেদ, আব্দুল জলিল সিকদার, তোফাজ্জল হোসেন, আজের আলী প্রমুখ। 

শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শহীদ সাগর চত্বরে স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মিত হয়েছে। ১৯৭৩ সালের ৫ মে মিলের প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজিমের স্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার শহীদ সাগর চত্বরে স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করেন। তার নাম অনুসারে গোপালপুর রেল স্টেশনের নামকরণ হয় আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশন। 
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত