গতকাল রোববার মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। সেই ফলাফলে ভালো ফল করায় সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উল্লাস করেছে শিক্ষার্থীরা।
ড্রামের তালে তালে সাফল্যের ক্ষণ উদ্যাপন করেছে তারা। সন্তানেরা ভালো ফল করায় অনেক অভিভাবক আনন্দিত হয়ে মিষ্টিমুখ করান শিক্ষার্থীদের। সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর সেলফি তুলেছে অনেকেই।
তারই ধারাবাহিকতায় নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীটে এসএসসি পরীক্ষা ২০২৪-এ ৪৯জন শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে ৪৮ জনই জিপিএ-৫ পাওয়ায় বাঁধনহারা আনন্দ উল্লাস ভাগাভাগি করেন শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীট পরিবার।
সেই গৌরবের খুশিতে বাঁধনহারা আনন্দ ভাগাভাগি করতে স্কুলে এসেছিলেন, কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার,স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ লুৎফর রহমান, সাংবাদিক সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, মামুনুর রশীদ মামুন,জিয়াউর রহমান জীবন, কামরুল কবীর ভূঁইয়া পল্টু, স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দ,জিপিএ-প্রাপ্ত শিক্ষার্থীবৃন্দসহ বর্তমান শিক্ষাথীরা প্রমূখ।
সোমবার (১৩ মে) স্কুলের উদ্দোগ্যে সকল শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্কুল প্রাঙ্গণে নেত্রকোনা জেলায় সেরা রেজাল্ট করায় র্যালি,কেক কাটা,আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কোন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদাল তালুকদার।
এসময় ইউএনও সাথে কথা হলে তিনি জানান,এপ্রতিষ্ঠানটি এসএসসি পরীক্ষায় নেত্রকোনা জেলায় সেরা হওয়ায় কেন্দুয়া উপজেলা প্রশাসন গর্ববোধ করছে পাশাপাশি যারা এই গর্ববোধ করার কাজটি করেছে সেই প্রিয় শিক্ষার্থীদের উত্তর উত্তর সফলতা কামনা করেন তিনি।
প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এবছর এসএসসি পরীক্ষায় মোট ৪৯ জন ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়। পরীক্ষার্থীরা সবাই উত্তীর্ণ হওয়ায় ও ৪৮ পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করে উপজেলা,জেলায় সেরা হওয়াসহ ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে ৭ম স্থান অর্জন করায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, প্রয়াত ড.হুমায়ুন আহমেদ স্যারের সহধর্মিণী নাট্যজন ব্যক্তিত্ব মেহের আফরোজ শাওনের সঠিক দিক নির্দেশনায় ও সকলের সার্বিক প্রচেষ্টার ফলে আমরা এবারো শতভাগ সফলতা ধরে রাখতে পেরেছি।
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ী ইউনিয়নে প্রয়াত হুমায়ুন স্যারের নিজ গ্রাম কুতুবপুরে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীটটি প্রতিষ্ঠিত। এবছর প্রতিষ্ঠানটির ৪৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই উত্তীর্ণ হয়েছে। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৮ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ২৬জন ছেলে ও ২২জন মেয়ে রয়েছেন।
এব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.সাইফুল আলম বলেন,শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীট বরাবরই ভাল রেজাল্ট করে। এবছরও তারা ভাল রেজাল্ট করেছে। আমরা কেন্দুয়া উপজেলা প্রশাসন এরেজাল্টের জন্য গর্ববোধ করছি পাশাপাশি তাদের জন্য দোয়া ও শুভ কামনা জানাচ্ছি।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া রাইয়ানা শ্রুতি বলল, "পিতা-মাতা ও শিক্ষকদের পরিশ্রমের ফসল আমাদের এই ভাল ফলাফল। এর পরের পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করে বুয়েটে ভর্তি হওয়া আমার মূল লক্ষ্য।"
আনন্দ যে শুধু হাসির মাধ্যমে প্রকাশ পায় না, কান্নার মাধ্যমেও প্রকাশ পায়- সেটি প্রমাণ করল ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্র হামজা মিয়া । তার চোখে জল আর মুখে হাসি। অনাবিল আনন্দে ঝিলমিলিয়ে উঠে বলল, "জীবনে প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি। তাই ভালো ফলাফলে কী খুশি যে লাগছে তা মুখে প্রকাশ করতে পারব না। আল্লাহ, পিতা-মাতা আর শিক্ষকদের সাহায্যে আমি জিপিএ-৫ পেয়েছি।``
শুধু ছাত্র-শিক্ষক নয়, আনন্দ ভাগাভাগি করছেন অভিভাবকরাও। সন্তানের ভাল ফলাফলের আনন্দে অনেকে কাঁদছেনও। তেমনি একজন অভিভাবক আনোয়ারুল হক সোহেল বলেন, "বাচ্চাকে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এই স্কুলে নিয়ে এসেছি যার কারণে আমরা সার্থক হয়েছি। "
প্রসঙ্গতঃ নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলাধীন রোয়াইলবাড়ী আমতলা ইউনিয়নে গ্রামীণ প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে অবহেলিত শিক্ষা বঞ্চিত বিশাল জনঅধ্যসিত এলাকায় শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ ১৯৯৬ সালে অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এবং ২০০৬ সাল(মাধ্যমিক) থেকে পূর্ণঙ্গ ভাবে চালু হয়ে শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে । ৩০ কাঠা জমির উপর এক কোটি টাকার অধিক ব্যায়ে নির্মিত স্কুলটি অত্যাধুনিক স্থাপত্য নকশায় সুরম্য ভবন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য নির্মিত অত্যাধুনিক শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক অসামন্য গ্রন্থাগার; যার নাম শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ পাঠাগার । এতে রয়েছে ৪ হাজারেরও বেশি বই, মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ আলোকচিত্র, দলিল পত্র এবং বই পড়ার সু- ব্যবস্থা । রয়েছে সুপরিসর খেলার মাঠ, আধুনিক শিক্ষোপকরণ ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম।