খুলনাঞ্চল কৃষি ভান্ডার নামে খ্যাত। এই অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলার ১৪টি উপজেলায় নদী ও খালগুলো পলিজমে ভরাট হয়ে গেছে।
সার্বিক কৃষি উন্নয়নে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে পানি উন্নয়নের বোর্ডের ভেড়িবাঁধ ও পোল্ডার ভেঙ্গে প্রতিবছর লোকালয় লবণ পানি প্রবেশ করায় চাষের অভাবে ১লাখ ৭হাজার ৩৩৫হেক্টর জমি চাষের অভাবে পতিত থাকে। এই জমি চাষের আওতায় আসলে প্রতিবছর দুমৌসুমে অতিরিক্ত ৫হাজার ২০০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হবে।
অধিক ফসল উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণের লক্ষ্যে এই অঞ্চলের ভরাট হয়ে যাওয়া ৬১৫টি খাল খনন ও পুন:খনন করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় প্রেরণ করা হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রেরণ করা হয়। এতগুলো খান একবারে খনন করা নয় বলে বাছাই করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৬১টি খাল খনন ও পুন:খননের জন্য তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। এই খালগুলোর পাশে রয়েছে ১৬ হাজার ৯৮৭হেক্টর জমি।
খাল খনন ও পুন:খনন হলে ৪৬হাজার ৩২৬হেক্টর জমি আবাদের আওতায় আসবে। ফলে অতিরিক্ত ৬০হাজার ৩১৭লাখ টাকার ফসল উৎপাদন হবে। ৬১৫টি খালের আবাদকৃত জমির রয়েছে ১০০৫৫৪ হেক্টর। এই জমি থেকে ২১০২৪.০৯হাজার টাকার ফসল ফসল উৎপাদন হচ্ছে।
খালগুলো খনন ও পুন:খনন হলে ৬২১১০হেক্টর জমি বর্ধিত হবে এবং১৬৯৬৯৪.১৭লাখ টাকার ফসল উৎপাদন হবে। এই খালগুলোর মধ্যে ইজারা দেয়া রয়েছে ৫২টি। খালগুলোর মধ্যে রয়েছে খুলনা জেলায় ২৭২টি,সচল সুইচগেট ১১২টি,মেরামত যোগ্য ৯৭টি এবং একেবারে নেই ৩১টি।
বাগেরহাট ১৮৫টি, সচল সুইচগেট ৭৬টি, মেরামত যোগ্য ২০টি। সাতক্ষীরায় ১২৪টি, সচল সুইচগেট ৪৯টি, মেরামত যোগ্য ১৭টি এবং নড়াইল ৩৪টি, সচল সউইচগেট ৬টি ও মেরামত যোগ্য ১টি। তেরখাদা উপজেলা ও নড়াইলের কালিয়া উপজেলার অংশ বিশেষ নিয়ে ভুতিয়ার বিলের অবস্থান। এই বিলের মধ্যে রয়েছে কাঁচিকাটা খাল, নাচুনিয়া লাইলের খাল, মসুন্দিয়া খাল, বদোবদি খাল ও কড়রিয়া খাল। এই ৫টি খালের পাড়ে আবাদযোগ্য জমি রয়েছে ২০৯ হেক্টর। খনন করা হলে আবাদের আওতায় ১৩৪৮ হেক্টর। এতে অতিরিক্ত ১৩৫০.৬৮লাখ টাকার অতিরক্ত ফসল উৎপাদন হবে।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার হরিনদী, শ্রীনদী, হামকুড়া নদী, শোলমারী ও ভদ্রানদী পুন:খনন করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়েছে।
নদীগুলো খনন করা হলে বিশেষ করে কর্ষা মৌসুমে বিল ডাকাতিয়ার ৭৫০০হেক্টর ও পার্শবতী ১৪টি বিলের ৭৫০০হেক্টর জমির অতিরিক্ত পানি ৬৩টি খালের মাধ্যমে অপসারিত হয়ে ফসল উৎপাদনের প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। একই সাথে বর্ষার পানি সংরক্ষনের মাধ্যমে শুস্ক মৌসুমে অতিরিক্ত সেচ যোগ্য পানি সরবরাহ বৃদ্ধির ফলে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চল সূত্র জানায়, খুলনা কৃষি অঞ্চলের মধ্যে খনন ও পুন:খনন যোগ্য খালগুলোর মধ্যে রয়েছে ১১৮৫টি প্রাকৃতিক খাল। এগুলো ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে গেছে। ইজারা দেয়ার ফলে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এতে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এখন সচল প্রবাহমান খাল রয়েছে মাত্র ৫৭২টি।
মাছ চাষের কারণে কৃষক চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রবাহমান খালের লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ বন্ধ করলে ১৭০৫৫হেক্টর জমি আবাদ যোগ্য হবে। এতে ৪৩৩৯৩.২৩লাখ টাকার নানা প্রজাতির ফসল উৎপাদন হবে। এই অঞ্চলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধিন ৫১৫টি সুইইচগেট রয়েছে। এর মধ্যে সচল রয়েছে ৪৪৩টি, মেরামত যোগ্য ১৩৫টি এবং একেবারে নেই ৩৭টি। রয়েছে ৩৮টি পোল্ডার। খাল ও নদী খনন ও পুন:খনন এবং সুইচগেটগুলো সচল করলে ৭২লাখ কৃষক উপকৃত হবেন। এলাকায় সোনার ফসলে ভেরে উঠবে।
সূত্র জানান,কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের সদ্য বিদায়ী অতিরিক্ত পরিচালক মোহন কুমার ঘোষের নেতৃত্বে একটি টিম জেলায় সার্ভে করে এই তথ্য সংগ্রহ করেন। যদিও এটা তাদের কাজ নয়,তবুও কৃষকের স্বার্থে তারা এই সার্ভে করে কৃষি মন্ত্রণালয় এর প্রতিবেদন প্রেরণ করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, খুব শীর্ঘই এর সুফল পাওয়া যাবে। পানি উন্নয়নের বোর্ডের ভেড়িবাঁধ ও সুইচগেট অতি দ্রুত মেরামত করতে হবে। ভেড়িবাঁধ সুইচগেটগুলো বিপদ জনক। খাল ইজারা দেয়া বন্ধ করতে হবে। এতে পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
মাছ চাষের কারণে লবণ পানি প্রবেশ করে। ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। খাল ও নদীগুলো খনন করা হলে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে। বিএডিসির ৫০০কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রবি মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের মধ্যমে সেচ যোগ্য মিষ্টি পানির সরবরাহ বাড়বে।