বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে হামলায় আহত ৪৫৯ জন আন্দোলনকারীকে চিকিৎসা দিয়েছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। এছাড়া এ হাসপাতালে মারা গেছেন ১২ আন্দোলনকারী।
সোমবার (১৯ আগস্ট) বাংলাদেশ বুলেটিনকে এ তথ্য জানিয়েছেন কুর্মিটোলা হাসপাতালের সহকারী পরিচালক কর্নেল ডা. সাব্বির।
এদিকে হাসপাতালের ৪র্থ তলায় অর্থো-বিভাগের পুরুষ বেডে গিয়ে দেখা যায় এ পর্যন্ত ৪৫৯ জন আহতাবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ভর্তি হয়েছে ৫৪ জন। ভর্তি হওয়াদের মধ্যে মেজর অপারেশন হয়েছে ২৬ জনের। এছাড়া ১১ জন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
মেডিকেলের ২৬ নম্বর ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রত্যেক বেডেই আহতদের চিকিৎসা চলছে। যাদের প্রায় সবাই গুলিবিদ্ধ। কারও বুকে, কারও পিঠে, কারও হাতে গুলি লেগেছে। কারও কারও একাধিক গুলিও লেগেছে।
বাংলাদেশ বুলেটিনের টিম সরজমিনে রোগীদের সাথে কথা বলেন। তারা বিস্তারিত জানতে পারেন, গত ১৭ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুলিবিদ্ধদের বেশ কয়েজন এখানে ভর্তি আছেন এবং চিকিৎসা নিচ্ছেন। ৫ আগস্ট বিকেল ৫টায় আনন্দ মিছিল দেখতে বের হন আবু হানিফ আরিয়ান (২৫) নামের এক ছাত্র। তার পেটে ব্যান্ডেজ করা।
তিনি জানান, মিছিল দেখে ভিডিও করতে বের হন মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায় বাসার সামনে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি বুলেট এসে তার পেটবিদ্ধ করে বেরিয়ে যায়।
তারপর তিনি এক বন্ধুকে ফোন করে জানান, তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন- তখন প্রাথমিকভাবে একটি হাসপাতালে গেলে কর্তৃপক্ষ তাকে না রেখে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে রেফার করে। সেখানে তিনি ১৪ দিন যাবত চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বুলেটিন টিম আরিয়ানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, পুলিশ আত্মরক্ষার জন্যই এই নারকীয় তাণ্ডব চালায়, এলোপাতাড়ি গুলি করতে করতে থানা থেকে বেরিয়ে যায়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সমন্নয়ক সারজিস আলম এসেছিলেন তাদের খোঁজখবর নিতে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে চিকিৎসার খরচ সরকার বহন করবে এবং নগদ আর্থিক অনুদানও দিয়েছেন। রোগীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি কোনো ধরনের টাকা বা অর্থ দাবি করছেন কি না। সেসময় তারা জানান, সারজিস আসার আগে চাইলেও এখন আর চাওয়া হচ্ছে না।
বুলেটিন টিম এমন আরো কয়েকজন গুলিবিদ্ধ ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে। ফরিদপুর থেকে আসা এক ছাত্র জানান, তিনি আনন্দমিছিলে ছিলেন। তখন একটি বুলেট তার বুক বিদ্ধ করে বের হয়ে যায়।
আরও এক ছাত্র জানান, তিনি মাদ্রাসায় পড়েন। ৫ আগস্ট তিনি মিরপুর-১০ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। এখনো সেই গুলি পেটে নিয়েই হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। পেটে গুলি ঢুকে তার নাড়ি-ভুঁড়িতে আটকে গেছে। এ কারণে গুলিটি বের করতে পারছেন না চিকিৎসকরা। ফলে এক সপ্তাহ ধরে পেটে গুলি নিয়েই হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে কিশোর অলি উল্লাহ (১৪)।
এদিকে গতকাল সারজিস আলম হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে বলেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার এতদিন বলে আসছিল আন্দোলনকারীদের ওপর শুধু রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে। হাসপাতালের বেডগুলোতে ঘুরে যান, এই বেডগুলোতে কারা অবস্থান করছে। শরীরের একপাশ দিয়ে বুলেট ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে আরেকজনকে আঘাত করেছে। এ ধরনের বুলেট ব্যবহার করেছে ফ্যাসিস্টরা। আমরা এর বিচার চাই।
গত জুলাই মাসের শুরু থেকে কোটা আন্দোলন শুরু হয়। ওই আন্দোলনের জেরে গত ১৫ জুলাই, ১৭ জুলাই, ১৮ জুলাই, ১৯ জুলাই, ২০ জুলাই ও ২১ জুলাই ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে অনেকই হতাহত হয়েছে।