একদিন সবই ছিল সেলিম ভুঁইয়ার। কিন্ত এখন কিছুই নেই তার। একটি কাল রাত্রি এসে তার সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। বলতে গেলে এখন তিনি নি:স্ব হয়ে পড়েছেন। বুক ভার স্বপ্ন ছিল তার।
পরিবার পরিজন নিয়ে মাথা উঁচু করে দাড়াবে সমাজে। এ স্বপ্ন বুকে ধারণ করে এত সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করে আসছিলেন সেলিম ভুঁইয়ার। গেল বুধবার মধ্যরাতে সেলিম ভুঁইয়ার চোখের সামনে তার আধাপাকা তিন ঘর হাওড়া নদীর বাঁধ ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
ঘরে থাকা মালামাল কিছুই রক্ষা করতে পারেনি তিনি। চোখের সামনে এ ঘটনা দেখে তিনি নির্বাক হয়ে যান। বলছিলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামের সেলিম ভুইঁয়ার কথা। তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে পরিবারটির সুখেই কাটছিল দিন।
এখন সবকিছুই তাদের কাছে দুঃস্বপ্ন। পেশায় রাজমিস্ত্রী সেলিম ভুঁইয়া সহায়সম্বল হারিয়ে এক কাপড় নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশির বাড়িতে। একই অবস্থা সেলিম ভুইঁয়ার পাশের বাড়ি তার বড় ভাই আব্দুর রউফ ভুইঁয়ার বাড়িটির।
খলাপাড়া গ্রামে সেলিম ভুঁইয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তিনি জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে তৈরি করেছিলেন তিনটি আধাপাকা ঘর।
গত কয়দিন আগেও এখানে বাড়ি ছিল। এখন দেখে মনে হচ্ছে এখানে কিছুই ছিল না। জলাশয়ে পরিণত হয়েছে এক সময়ে বসত বাড়িটি। উজানের ঢলের পানি চলে গেলেও রেখে গেছে ক্ষতচিহৃ। খালি ভিটাতে বসে সেলিম ভুঁইয়া ও তার স্ত্রী আয়েশা বেগম চোখের জল ফেলছে আর বিলাপ করছে। আত্মীয় স্বজনরা এসে তাদের শান্ত¦না দিচ্ছে। এসব শান্তনাতেও সেলিম ভুঁইয়ার চোখের জল পড়া বন্ধ হচ্ছে না। তার দু’চোখ এখন শুধু গাড় অন্ধকার।
কথা হয় সেলিম ভূইয়ার সাথে। তিনি বলেন গত ২২ আগস্ট বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বাড়ির পাশে হাওড়া নদীর বাঁধের উপরে পানি উঠায় আমরা কয়েকজন মিলে বস্তা ভর্তি মাটি দিচ্ছিলাম।
পানির স্রোত বেড়ে যাওয়ায় বাধ ভেঙে যায়। পরে দেখি আমার ঘরগুলোতে পানি উঠে পানির তোড়ে ভেসে যায়। ঘরের কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। পরনে যা ছিল তাই। এক কাপড়ে হয়ে যায়। এখন কিছুই নেই। আমি এখন ফকির হয়ে গেলাম।
এসময় পাশে থাকা আয়েশা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমরা সবকিছু ভেঙে নিয়ে যায়। ঘরে আমরা জামাই বউ ছিলাম ঘরে। আমাদের তিনটা ঘরছিল। এখন কোন কিছু নেই। বাড়ির কোন চিহৃ নেই। কোন কাপড় চোপর নেই। মানুষে কাপড়চোপড় ও খানা দিতেছে।
সেলিম ভূইয়ার বড় ভাই আবদুর রউফ ভুইঁয়া বলেন, রাত আড়াইটার দিকে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। বাঁধে মাটি দেই আর বৃষ্টিতে মাটি কেটে যায়। পরে বাধ ভেঙে বাড়িতে পানি উঠে গরুবাছুর ঘরের মালাচামানা সব পানিতে ভেসে যায়।