জোর করে নেত্রকোনার কেন্দুয়ার গড়াডোবা ইউনিয়নের বাশাঁটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.আবুল কালাম আজাদকে কিছু উশৃংখল ছাত্র-জনতা জোর করে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার গত ২২আগষ্ট এই ঘটনার জন্য কেন্দুয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজ জান্নাতকে প্রধান করে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজারকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।
গত মঙ্গলবার (৩সেপ্টম্বর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার বাঁশাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে কেন্দুয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মিজ জান্নাতের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত স্কুল সংশ্লিষ্ট সকলের বক্তব্য নেওয়ার পর তাদের তদন্ত কাজ শেষ করেন। এসময় তারা ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্থানীয় এলাকাবাসী বক্তব্য নেন।
এসময় তদন্ত কমিটির আহবায়ক সহকারী কমিশনার মিজ জান্নাতকে তদন্ত শেষে তদন্তের ফলাফল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলার বাশঁহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে বিরাজমান ঘটনার প্রেক্ষিতে তদন্তে প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করার পিছনে এলাকার কিছু উশৃংখল ছাত্র-জনতা এর জন্য দায়ী বলে প্রমাণিত হয়।
তারপর তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র,শিক্ষক ও অভিভাবকগণ তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে প্রধান শিক্ষকের সাথে এরকম আচরণের জন্য ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে প্রধান শিক্ষককে কর্মস্থলে ফিরে শিক্ষা সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলা জন্য অনুরোধ করেন তদন্ত কমিটির কাছে।
পরক্ষনই সকল শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকগণ প্রধান শিক্ষককে ফুল দিয়ে বরণ করে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ তদন্ত চলাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের প্রিয় প্রধান শিক্ষক স্যারকে তাঁর স্বপদে বহাল রাখার জন্য তদন্ত কমিটির নিকট জোরালো দাবি জানায়।
অপরদিকে তদন্ত শেষে একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে প্রধান শিক্ষকের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ভুল করেছি। স্যার আমাদের অভিভাবক। অভিভাবক মানে পিতা। স্যারের কাছে আমরা সকল শিক্ষার্থীরা মাফ চেয়েছি পাশাপাশি ভবিষ্যতে আর এরকম কোন অন্যায় কাজ হবে না বলে তারা প্রতিশ্রুতি দেন।
উল্লেখ্য উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নের বাঁশহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে সেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ করেন এলাকার কিছু উশৃংখল ছাত্র-জনতা। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২০আগস্ট তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই পদত্যাগ নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রক্রিয়া ও উত্তেজনা চলছিল।
পদত্যাগের বিষয় জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, আমি সেচ্ছায় পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করেননি। এলাকার উশৃংখল কিছু জনতা ও কয়েকজন ছাত্র তার কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নেন। বিষয়টি আমি উপজেলা প্রশাসনকে ২১আগষ্ট এবং জেলা প্রশাসককে ২২আগষ্ট লিখিতভাবে জানিয়েছি।
শিক্ষার্থীরা ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়ার পর প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, কিছু অনাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আমি কষ্ট পেয়েছিলাম কিন্তু পরক্ষণেই তারা তাদের ভুল বুঝে আমাকে আমার প্রিয় শিক্ষার্থীরা এবং এলাকাবাসী যে সম্মান দেখিয়েছে তা ভুলবার নয়।
আজ শিক্ষক হিসেবে আমি স্বার্থক ও গর্বিত। গড়াডোবা বাঁশাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়াশোনাসহ সকল কার্যক্রম সঠিক এবং নিয়মমাফিক যাতে করতে পারি,সেজন্যে সকলের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।