গাজীপুরের শ্রীপুরে মেয়েকে দীর্ঘদিন উত্ত্যক্ত করতে বাধা দেওয়ায় বখাটেদের হাতে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন।
গুরুতর আহত বাবাকে (৩৯) শ্রীপুর উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বখাটেদের অত্যাচার এবং বাড়ীতে হামলার পর টিন খুলে নেয়ায় নির্যাতিত পরিবারটি ভয়ে এখন শ্রীপুর সরকারি স্কুলের পাশে একটি ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস করছে।
মেয়েটিকে ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে স্কুলে যেতে হচ্ছে। মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। গত শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের পটকা ছাপড়া মসজিদের দক্ষিণে ব্রিজের নিকট এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্তরা হলো একই গ্রামের মমিন মিয়ার ছেলে বাঙ্গি (২৬), ছাপড়া মসজিদ এলাকার সুরুজ ড্রাইভারের ছেলে বিজয় (২৭) এবং ইয়াকুব আলীর ছেলে মামুন (২২)। বখাটেদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ করেন মেয়েটির পরিবার।
মেয়েটির পরিবার জানায়, দীর্ঘদিন যাবত মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করে আসছে স্থানীয় তিন বখাটে যুবক। সে এবছর নবম শ্রেণি থেকে বার্ষিক পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিন বখাটে গত প্রায় এক বছর ধরে মেয়েটিকে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে আপত্তিকর কথাবার্তা বলিয়া কু-প্রস্তাবসহ উত্ত্যক্ত করে আসছেন। মেয়েটির মা সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়েও এর প্রতিকার পাননি।
মেয়েটির বাবা একজন পোশাক শ্রমিক। মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি জেনে তিনি বখাটেদের অভিভাবকদের কাছে নালিশ করে কোনো সুরাহা পাননি। পরে বখাটেদেরে সাথে দেখা করে তার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতে নিষেধ করেন। অন্যথায় আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেন। এতে তিন বখাটে ক্ষুব্ধ হন এবং এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তারাও ছেড়ে দেবেন না বলে হুমকি দেন।
মেয়েটির বাবা বলেন, গত ০৮ আগস্ট ওই তিন বখাটেসহ অজ্ঞাতনামা তাদের ১০/১২ জন সহযোগী গোসিংগা ইউনিয়নের পটকা গ্রামের বাড়ীতে হামলা করে। তারা পরিবারের সকলকে মারধর করে তাদের ঘরে থাকা সকল মালামাল, আসবাবপত্র নিয়ে যায়।
একপর্যায়ে টিনের ঘর ভাংচুর করে টিন খুলে নিয়ে যায়। এসব ঘটনার পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শ্রীপুর থানা পুলিশে লিখিত অভিযোগ এবং তাদের কাছে দিনের পর দিন ধরণা দিয়েও কোনো ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি না। উল্টো পুলিশ পরামর্শ দিচ্ছে আদালতে গিয়ে মামলা করার জন্য। প্রায় বছরখানেক আগে থেকেই স্থানীয় কিছু বখাটে আমার মেয়েকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করে আসছে। বখাটেদের ভয়ে মেয়েটির লেখাপড়া এখন বন্ধ হওয়ার পথে।
মেয়েটির মা বলেন, চলতি মাসের ১৩ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) সন্ধ্যায় আমি, আমার স্বামী, স্কুল পড়–য়া মেয়ে, এবং ছোট ছেলেকে নিয়ে পায়ে হেঁটে শ্রীপুরের ভাড়া বাসা থেকে পটকা আত্মীয়ের বাড়ীতে যাচ্ছিলেন।
পটকা ছাপড়া মসজিদের দক্ষিণে ব্রিজের কাছে পৌছার পর ওই তিন বখাটের নেতৃত্বে তাদের ১০/১৫ জন সহযোগীসহ আমাদের পথরোধ করে। এসময় স্থানীয় কবির ও হারুনের নেতৃত্বে বখাটেরা মেয়ের বাবাকে মারধরসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এতে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করান। তারা আমাদের কাছ থেকে মোবাইল এবং টাকা ছিনিয়ে নেয়।
মেয়েটির বাবা সাংবাদিকদের বলেন, আমি মেয়ে ও ছেলেসহ পটকা আত্বীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। পথে কবির ও হারুনের নেতৃত্বে বাঙ্গি, বিজয় এবং মামুনসহ তাদের কয়েকজন সহযোগি আমার ওপর হামলা চালায়। তখন তারা বলছিল, আমি কেন মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করলাম।
মেয়েটি জানায়, অনেকদিন যাবত স্থানীয় তিন বখাটে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে তাকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছে। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বাবাকে মারধর করে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে তারা।
গোসিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান শাহীনের মোবাইল বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুর রহমান বলেন, আমরা হাসপাতালে আবেদন করেছি সার্টিফিকেটের জন্য। যদি সার্টিফিকেট আসে মামলা নেওয়ার মতো হয় তাহলে আমরা ওই অনুযায়ী মামলা নিব। আর যদি সার্টিফিকেট না আসে আইন অনুযায়াী প্রসিকিউসন দিব।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন বলেন, এ বিষয়ে আমি জানি না। ভুক্তভোগী পরিবারকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েন। পুলিশ অসহায় মানুষের পাশে আছে। মানুষের জানমাল রক্ষা ও নিরাপত্তায় পুলিশ সব সময় প্রস্তুত আছে।