একের পর নানান ভুল রিপোর্ট, আট বছর আগে মারা যাওয়া চিকিৎসকের নামে রিপোর্ট সরবরাহ, বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা আদায় ও মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট (স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ব্যবহৃত রাসায়নিক মিশ্রণ) ব্যবহারের মতো ভয়াবহ অভিযোগ রয়েছে চট্টগ্রামের নামি দামি ডায়াগনস্টিক সেন্টার শেভরণের বিরুদ্ধে। এই প্রতিষ্ঠানটির একাধিক অভিযোগ চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জমা পড়লেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিয়ে সফল হয়নি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। ক্ষমতা ব্যবহার করে বরারবই থেকেছে অধরা হয়ে।
২০২৩ সালে নানা অনিয়মের কারণে চট্টগ্রামে শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরির লাইসেন্স স্থগিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের জন্য ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে অধিদপ্তর থেকে। ২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. হাবিবুল আহসান তালুকদার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে এসব নির্দেশ আর নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কার্যক্রম চালু রেখেছিল শেভরণ৷ পরে উপর মহলকে ম্যানেজ করে পুরোদমে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে শেভরণ ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি।
সর্বশেষ নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন প্রবর্তক এলাকায় শেভরনেরই বিশেষায়িত হাসপাতালের ২য় ও ৬ষ্ঠ তলায় থাকা দুটি ফার্মেসিতে পাওয়া গেছে বিপুল পরিমান মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ।
মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় ও চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা পাঁচলাইশ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযান সূত্রে জানা যায়, শেভরণ ভবনটির ২য় তলায় মেসার্স শেভরন ফার্মেসিতে অতিরিক্ত মূল্যে ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ করা হয়। ক্রেতাদের ধোকা দিতে মেয়াদোত্তীর্ণ এসব ওষুধ মেয়াদ আছে এমন ওষুধের সাথে একই বক্সে রাখা হয়েছে।
এমন গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই ফার্মেসিতে মূল্য বেশি নেওয়া সংক্রান্ত এক লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযোগ নিষ্পত্তিতে ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় যার ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ১০০০ টাকা প্রণোদনা হিসেবে অভিযোগকারী পাবেন।
এখানেই শেষ নয়, শেভরন হাসপাতালেরই ৬ষ্ঠ তলায় ফার্মেসিতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া যায়। এর মধ্যে কাশির ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক ও ডায়াবেটিসের ওষুধও রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আরও ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় শেভরণ প্রতিষ্ঠানটিকে।
দুটি ফার্মেসির কর্তৃপক্ষকে মোট ২ লাখ ৪ হাজার টাকা জরিমানা করে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ না করতে সতর্ক করা হয়। যদিও উপস্থিত একাধিক রোগী ও তাদের স্বজনদের দাবি এই প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা আয় করে তাকে কয়েক লাখ টাকা জরিমানা করলে তাতে শেভরণের কিছুই আসে যায় না৷ তাই তো তারা বারং বার এসব অপকর্ম করেই যাচ্ছে৷ এবারের অভিযান পরিচালনায় ছিলেন উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ, সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার ও রানা দেবনাথ। অভিযানে থাকা উপ-পরিচালক বলেন, জনস্বার্থে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এ তদারকি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান তারা।
এসকল অভিযোগের বিষয়ে শেভরন ক্লিনিকের ল্যাবরেটরি লিমিটেডের জিএম পুলক পারিয়াল বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, ‘আমরা এসব ফার্মেসি ভাড়া দিয়েছি। তবে তাদের এমন কাজের জন্য তাদের ডাকিয়েছি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এসব বিষয়ে তাদেরকে বার বার সতর্ক করেছি৷ গতকালের অভিযানের পর তাদের সঙ্গে আবারও মিটিং করে তাদেরকে ফের সতর্ক করা হয়েছে। ’ শেভরণ হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক ও ডায়াবেটিসের ওষুধ দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বিকার করেন।