মঙ্গলবার ১ জুলাই ২০২৫ ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
মঙ্গলবার ১ জুলাই ২০২৫
শিশু বর্ষা হত্যা মামলার চার্জশিট দুবছরেও পৌঁছেনি আদালতে
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪, ৪:৫৮ PM
চট্টগ্রামে দুই বছরেও চাঞ্চল্যকর শিশু মারজানা হক বর্ষা (৭) হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) আদালতে পৌঁছেনি। এমন পরিস্থিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেছেন বিজ্ঞ আদালত। 

মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান গতকাল (বুধবার) বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিতে আনলে আদালত এ নির্দেশনা দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ডিএনএ প্রতিবেদন হাতে না পাওয়ায় শিশু বর্ষা হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বিলম্ব হচ্ছে।

২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর নগরীর কোতোয়ালী থানাধিন জামালখান এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় শিশু বর্ষা। নিখোঁজের তিনদিন পর (২৭ অক্টোবর ২০২২) জামালখান সিকদার হোটেলের পেছনে বড় নালা থেকে বস্তাভর্তি বর্ষার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। 

হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে এলাকার এক দোকান কর্মচারী লক্ষণ দাশ (৩০) কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে লক্ষণ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। 

নিহত বর্ষার মা ঝর্ণা বেগম গণমাধ্যমকে জানান, তার মেয়ে হত্যার প্রধান আসামি লক্ষণ দাশ এখনো কারাবন্দি রয়েছে। যে কোন সময় সে জামিনে বের হয়ে যেতে পারে। লক্ষণ ভয়ংকর প্রকৃতির। জামিনে বের হলে প্রতিশোধ নিতে তাদের উপর ফের হামলা করতে পারে। 

শিশু বর্ষা হত্যা মামলার আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, শিশু বর্ষার পরিবার আর্থিকভাবে দুর্বল। তাদেরকে আমরা সম্পূর্ণ বিনা খরচে যাবতীয় আইনি সহায়তা দিচ্ছি। শিশু বর্ষা হত্যার দুই বছর পার হলেও তদন্ত কর্মকর্তা এখনো মামলার চার্জশিট দিতে পারেনি। বিষয়টি আমরা বুধবার বিজ্ঞ আদালতের দৃষ্টিতে আনি। আদালত মামলার পরবর্তী ধার্য্য তারিখে তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে শুনানির আদেশ দিয়েছেন। 

আইনজীবী জিয়া হাবীব আরো বলেন, এর আগেও গত কয়েকমাস আগে তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালত তলব করেছিলেন। তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, মামলার তদন্ত কাজ শেষ পর্যায়ে। শুধুমাত্র ডিএনএ প্রতিবেদন না পাওয়ার কারণে তিনি চার্জশিট দিতে পারছেন না।

কুসুম কুমারি স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা নগরীর মাছুয়া ঝর্ণা এলাকার মৃত আবদুল হাকের মেয়ে। ২০১৮ সালে বর্ষার বাবা আবদুল হক মারা যান। আবদুল হকের মোমিন রোডে ইকো প্যাকেজিং নামে একটি প্রেস ছিল। স্বামী মারা যাওয়ার পর বর্ষার মা ঝর্ণা বেগম ২য় বিয়ে করেন। 

বর্ষা তার সৎ বাবা ইউসুফ আলী ও মা ঝর্ণা বেগমের সাথে জামালখান সিকদার হোটেলের পাশের সিড়ির গোড়াস্থ গলির শাওন ভবনের নিচ তলায় বসবাস করতো। ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর বিকেল চারটায় মায়ের কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হয় বর্ষা। এরপর গলির মুখে সিকদার হোটেলের পাশের আজাদ স্টোর থেকে চিপস ও বিস্কুট কিনে বাসায় যাবার পথে নিখোঁজ হয়। পরে তাকে খুঁজতে বের হয় বাসার লোকজন। আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। 

বিষয়টি প্রথমে স্থানীয় কাউন্সিলরকে ও পরে কোতোয়ালী থানায় অবহিত করা হয়। বর্ষাকে খুঁজে পেতে নগরজুড়ে মাইকিংও করা হয়। নিখোঁজের তিনদিন পর সন্ধ্যা সাড়ে পাচটায় জামালখান সিকদার হোটেলের পিছনের একটি নালা থেকে বস্তাভর্তি শিশু মারজানা হক বর্ষার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

বর্ষা হত্যায় জড়িত থাকার অপরাধে ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর বাসার গলির মুখে শ্যামল স্টোরের কর্মচারী লক্ষণ দাশকে (৩০) গ্রেপ্তার করেন। লক্ষণ দাশ লোহাগাড়ার উত্তর পুদয়া তিন নম্বর ওয়ার্ডের মনি মিস্ত্রির বাড়ির ফেলোরাম দাশের ছেলে। সিকদার হোটেলের পেছনের গোপাল মুহুরী গলির একেএম জামাল উদ্দিনের ভবনের নিচতলায় শ্যামল স্টোরের গোডাউনে থাকতেন। বর্ষার মৃতদেহ যখন বস্তা থেকে বের করা হয় তখন বস্তার গায়ে টিসিবির সিল দেখতে পাওয়া যায়। পুলিশ মালামাল বিক্রয়ের দোকান ও আশেপাশের বিভিন্ন রেস্তোরাঁর গোডাউনে টিসিবির সিলযুক্ত বস্তা খুঁজতে থাকে। পরে শ্যামল স্টোরের গোডাউনে একই ধরনের বস্তা খুঁজে পায়। ঘটনাস্থলের আশেপাশের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে লক্ষণ দাশকে শনাক্ত করা হয়।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লক্ষণ দাশ জানিয়েছিলেন, তিনি বিভিন্ন সময় শিশুটিকে দোকান থেকে চিপস, চকলেট দিতেন। ঘটনার দিন বিকেল পৌনে পাঁচটায় ১০০ টাকার লোভ দেখিয়ে শিশু বর্ষাকে গোডাউনে নিয়ে যান। নেওয়ার পর নাক, মুখ চেপে ধরে শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের ফলে রক্তপাত হওয়ায় লক্ষণ দাশ ভয় পেয়ে যান। একপর্যায়ে তিনি শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন এবং গোডাউনে রাখা টিসিবি’র সিলযুক্ত প্লাস্টিকের বস্তার ভেতরে মৃতদেহটি ভরে নালায় ফেলে দেন।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত