সারা বছরের অপেক্ষা, শরৎ এলেই সাজ সাজ রব। অবশেষে দুয়ারে পা ফেললেন দেবী, ঢাকেও কাঠি পড়ল।
আজ ৯ অক্টোবর বুধবার ষষ্ঠীর বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
সব জায়গায় প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। রংতুলির শেষ কাজে দেবীকে মূর্ত করে তুলছে কারিগররা। ঈশ্বরদীতে এবার ৩২টি পূজামন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। এবছর সাহাপুর গোলচত্বর মন্দিরে পূজা না হলেও অরোনকোলাতে প্রথমবার পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় পূজা মন্ডপের সংখ্যা কমেনি আবার বাড়েনি।
উপজেলা সদরের মন্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, দুর্গোৎসবকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে চলছে ব্যাপক সাজসজ্জা। মন্ডপগুলো ঘিরে নানা বয়সী মানুষ উৎসুক চোখে দেখছে প্রতিমা। প্রতিটি মন্ডপে প্রতিমাশিল্পীদের রংতুলির আঁচড়ে ফুটে উঠছে দেবী দুর্গার মুখাবয়ব।
সঙ্গে দেবী সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশের মূর্তিতেও চলছে রংতুলির আঁচড়। রং করা হচ্ছে মহিষাসুর, দেবীর বাহন সিংহ, হাঁস, প্যাঁচা, ইঁদুর, ময়ূরও। চলছে নানা রঙের আলোকসজ্জার বাতি-যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজও।
দেবী দুর্গা, কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, লক্ষ্মীসহ সব প্রতিমায় চলছে রংতুলির আঁচড়। মঙ্গলবার বিকেলে দাশুড়িয়া বারোয়ারী দেবক্রিয়া মন্দিরের দুর্গামন্দিরে দেবী দুর্গা, কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, লক্ষ্মীসহ সব প্রতিমায় চলছে রংতুলির শেষ আঁচড়। এলাকার দুর্গামন্দিরে প্রতিমা গড়ার কাজ করছেন তরুণ শিল্পী আদিত্য সরকার (২০)। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমি নিজে দুইটি প্রতিমা তৈরির কাজের অর্ডার পাইছি। প্রতিটি প্রতিমা তৈরি করে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পাই।
সরেজমিনে আরামবাড়ীয়া রায়পাড়া বারোয়ারী শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দির গিয়ে কারিগরদের কাজ করতে দেখা য়ায়। কথা বলার ফুরসত নেই তাঁদের।
নিভৃতে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় এখন চলছে রংতুলির আঁচড়। প্রতিমার কারিগর সজল কুমার পাল বলেন, ‘আমি ১২ বছর ধরে এই মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজে নিয়োজিত আছি। প্রতিবছর আমরা ৫ থেকে ৬টি প্রতিমা তৈরি করি। এসব তৈরি করে পারিশ্রমিক হিসেবে যে অর্থ উপার্জন করি এটা মোটামুটি। সব কটি মন্ডপে মাটির কাজ শেষ। এখন রংতুলির কাজ চলছে। তবে প্রতিমাশিল্পীরা আক্ষেপ করে বলেন, ‘দিন দিন সবকিছুর দাম বাড়লেও আমাগো দাম বাড়ে না। এ বছর প্রতিমা বানাইয়া যা পামু, তা দিয়া কোনোরকমে ছয় মাস কাটাতে পারব। তারপর অন্য কিছু কইরা সংসার চালাতে হইব।’
জানা যায়, সিংহবাহিনী দেবী দুর্গার আগমন এবার দোলায়। ০৯ অক্টোবর ষষ্ঠীবিহিত পূজার পর ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহাষ্টমী, ১২ অক্টোবর সন্ধিপূজা ও মহানবমী এবং বিজয়া দশমীর পূজা শেষে বিসর্জন। প্রতিদিন সকালে দেবীর অঞ্জলি ও সন্ধ্যায় আরতি দেওয়া হবে। আগামী শনিবার দশমীর বিসর্জনের পর ঘোটকে চেপে কৈলাসে ফিরবেন উমা।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের উপজেলা সভাপতি সুনিল কুমার চক্রবর্তি জানান, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পূজা অনুষ্ঠানে প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতারা তৎপর রয়েছে। ইতোপূর্বে ঈশ্বরদীতে কোনদিনই পূজায় বা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বা কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আশা করি সকলের সহযোগিতায় এবারেও এখানে কিছু ঘটবে না।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে পূজা উদযাপন সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেছি। পূজার সময় গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ বিভিন্ন এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া কন্ট্রোলরুম খোলা, সাইবার মনিটরিং, টহল পুলিশ দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাশ বলেন, আবহমান কাল থেকেই বাংলাদেশে শারদীয় দুর্গাপূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় উৎসব। ঈশ্বরদীর ৩২টি মন্ডপের মধ্যে ৭ টিতে সিসিটিভি ক্যামেরা আগে থেকেই ছিল। ২৫টি পূজা মন্ডপে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে স্থায়ীভাবে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং সরঞ্জামাদি ইতোমধ্যেই সরবরাহ করা হয়েছে। এগুলোতে পূজা উদযাপন হবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্ডপগুলো নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার স্বার্থে উপজেলা প্রশাসনের যৌথ প্রচেষ্টায় একটি মনিটরিং সেল থাকবে। পূজা মন্ডপে যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কাজ করবে এই টিম।