ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা একটি বেসরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬টি পদে নিয়োগ নিয়ে অবৈধ টাকা লেনদেনের অভিযোগে তোপের মুখে পালিয়ে গেছেন প্রধান শিক্ষক।
পরীক্ষা নিতে বাধাঁ প্রদান করায় ৪ জনকে আটক করেছে আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনী। প্রধান শিক্ষককে বরখাস্তসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও। দুই ঘন্টা পর সেনা হস্তক্ষেপে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। শনিবার উপজেলার কান্দিগাঁও গ্রামে নজরুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা জানান, সহকারী প্রধান শিক্ষক, অফিস সহায়ক, কম্পিউটার অপারেটর, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। শনিবার সকাল ১০টায় নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য আবেদনকারীদের ডাকা হয়। কিন্তু এর আগেই কয়েকজন প্রার্থীর পক্ষ থেকে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। তাদের অভিযোগ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মলয় কুমার চন্দ কারও কারও কাছ থেকে নিয়োগের জন্য ঘুষ হিসেবে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন। এখন টাকা নেওয়া প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে না বুঝতে পেরে প্রধান শিক্ষক পালিয়ে গেছেন।
ফলে পরীক্ষা স্বচ্ছ হবে না অভিযোগ করে স্থানীয় লোকজন নিয়ে তারা পরীক্ষা বাতিলের দাবীতে হড্ডগোল শুরু করে। এক পর্যায়ে অবৈধ নিয়োগ পরীক্ষা মানিনা বলে স্লোগান দিয়ে মিছিল করতে থাকে স্থানীয় কিছু লোক।
এদিকে অবস্থা আঁচ করতে পেরে প্রধান শিক্ষক পরীক্ষার দিন বিদ্যালয়ে হাজির না হয়ে পালিয়ে যান। একাধিক প্রার্থী ও স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষক পছন্দের প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন।
বিদ্যালয়ের দায়িত্বরত সভাপতি ও মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরীক্ষা এবং নিয়োগ সম্পূর্ণ স্বচ্ছ্ব প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলেও কিছু লোক তা অগ্রাহ্য করে চরম হড্ডগোল করতে থাকে। ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
এক পর্যায়ে ইউএনও সেনাবাহিনীকে অবহিত করলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে সেখান থেকে নিয়োগ পরীক্ষায় বাঁধা প্রদানের অভিযোগে ৪জনকে আটক করে থানা পুলিশে সোপর্দ করে। আটককৃতরা হচ্ছেন, কান্দিগাঁও এলাকার কামরুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, হিমেল ও ফিরোজ খলিফা।
পরে বেলা ১২টার দিকে সেনা সহাযোগিতায় ৪টি পদে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। বাকি সহকারী প্রধান শিক্ষক ও আয়া পদে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রার্থী না থাকায় নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়।
প্রধান শিক্ষকের পালিয়ে থাকার বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তাকে প্রাথমিকভাবে বরখাস্ত করার কথাও জানান তিনি। সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত থেকে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। পরীক্ষায় বাঁধা প্রধান করলে ৪জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ৪টি পদে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। বাকি দুটি পদে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রার্থী না থাকায় ওই দুইটি পদের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
মুক্তাগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কামাল হোসেন জানান, ৪জনকে আটক করে থানায় আনা হয়। পরে ভ্রাম্যমান আদালতে প্রত্যেককে এক হাজার টাকা করে অর্থদন্ড দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মলয় কুমার চন্দকে মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।