‘সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের’ দাবিতে চলা আন্দোলন চলাকালে গতবছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগের বিষয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের (তথ্যানুসন্ধান দল) প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
স্বাধীন এই তদন্তের তথ্যানুসন্ধান দল ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ প্রমাণ পেয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময়ে সাবেক সরকার এবং তার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী, আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট সহিংস গোষ্ঠীগুলো একসঙ্গে পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত।আন্দোলন চলাকালে ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় সরকার বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী বল প্রয়োগের’ জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে অনুমতি দিয়েছিল বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দফতর (ওএইচসিএইচআর)২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশজুড়ে সংঘটিত ব্যাপক বিক্ষোভ এবং তার পরবর্তী সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপব্যবহারের অভিযোগ সম্পর্কে একটি স্বাধীন ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং তদন্ত’ পরিচালনা করে।জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর তদন্ত শুরু করে এবং পাঁচ মাস পরে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হলো।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জেনেভায় প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন। এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ওএইচসিএইচআর-এর এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রোরি মানগোভেন। এছাড়া হাইকমিশনার অফিসের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানিও উপস্থিত ছিলেন।
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ মিলেছে
তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ বা এক্সিকিউটিভ সামারিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমন্ত্রণে ওএইচসিএইচআর ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশজুড়ে সংঘটিত ব্যাপক বিক্ষোভ এবং তার পরবর্তী সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপব্যবহারের অভিযোগ সম্পর্কে একটি স্বাধীন ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং তদন্ত’ পরিচালনা করেছে। এতে সংগৃহীত সব তথ্যের পুঙ্খানুপুঙ্খু ও স্বাধীন মূল্যায়নের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, সাবেক সরকার এবং তার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী, আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট সহিংস গোষ্ঠীগুলো সম্মিলিতভাবে পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত।
এসময় শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যা, হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর গুরুতর আহত হওয়াসহ বলপ্রয়োগের অপব্যবহার, ব্যাপকভাবে নির্বিচারে গ্রেফতার ও আটক এবং নির্যাতন ও অন্যান্য ধরনের দুর্ব্যবহারসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে নিয়মতান্ত্রিকভাবে জড়িত ছিল বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে বলে মনে করছে ওএইচসিএইচআর।
সংস্থাটি আরও বিশ্বাস করে, বিক্ষোভ এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত ভিন্নমত প্রকাশ দমন করার কৌশল অনুসরণ করে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং নিরাপত্তা খাতের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, সমন্বয় ও নির্দেশনার মাধ্যমে এই লঙ্ঘনগুলো সংঘটিত হয়েছে। এই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের দৃষ্টিকোণ থেকেও উদ্বেগের বিষয়। ফলে এগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধ ও নির্যাতন (একটি স্বতন্ত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ) এবং দেশীয় আইনে গুরুতর অপরাধ কিনা তা নির্ধারণের জন্য আরও ফৌজদারি তদন্ত প্রয়োজন।