শষ্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার আলু চাষিরা এবার আলু নিয়ে পড়েছে চরম বিপাকে। কারণ কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়া ও হিমাগারে আলু রাখতে পারছে না তারা। আলু তুলে দিনের পর দিন এভাবেই রাস্তায় ফেলে রেখেছে কৃষকরা।
কৃষি অধিদপ্তর বলছে এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নন্দীগ্রাম উপজেলায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে চওড়া মূল্যে বীজ ক্রয় করে আলুর আবাদ করেছিলেন কৃষকরা দাম না থাকায় কৃষকের সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে।
একদিকে আলুর বাজারে ধস, অন্যদিকে হিমাগার মালিকরা আলু সংরক্ষণ চার্য বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে আলু নিয়ে একপ্রকার বড় বিপদে পড়েছে এই উপজেলার কৃষকরা। এভাবে চললে আলু উৎপাদনে কৃষকরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে। লাভ তো দুরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠছে না। ফলে লোকসানে দেখা দিয়েছে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ। আলু উৎপাদনে বেশ এগিয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষকরা। লাভের আশায় বর্তমানে উপজেলার মাঠজুড়ে ব্যাপক আলুর আবাদ হয়েছে।
১নং বুড়ইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, এ উপজেলায় এবারে ব্যাপক আলুর আবাদ হয়েছে। কিন্তু নায্য দাম না পেয়ে কৃষকেরা দিশেহারা। বীজ ও সারের দাম বেশি হওয়ায় আলু চাষে খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথম দিকে আলুর দাম কিছুটা ভালো ছিল। তবে ধীরে ধীরে তা কমে গেছে। কৃষকরা জানান, আলুর ফলন বিঘাপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ মন হচ্ছে। কিন্তু দাম কম থাকায় তারা লোকসানের মুখে পড়ছেন। এক বিঘা জমিতে আলু উৎপাদন করতে কৃষকদের ৫০ হাজার টাকা খরচ হলেও দাম না থাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে অর্ধেক দামে। এভাবে দাম কমলে কৃষকরা বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন।
উপজেলার ১নং বুড়ইল ইউনিয়নের রিধইল গ্রামের কৃষক জয়নাল উদ্দীন বলেন, আমি ধার দেনা করে লাভের আশায় এবার ১০০ টাকা কেজি দরে আলু ক্রয় করে ৩বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। বাজারে দাম না থাকায় বর্তমানে তা পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আলুর সঠিক দামও পাচ্ছিনা বাজারে ভালো দাম পেলে ধারদেনা শোধ করতে পারতাম। স্টোর মালিকরা একদিকে স্টোরে আলু রাখার দাম বাড়িয়েছে অন্যদিকে স্টোরেও আলু নিচ্ছেনা সব মিলিয়ে আলু নিয়ে কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা।
উপজেলার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে খুচরা বাজারে ১০টাকা থেকে ১৫ টাকায় আলু বিক্রি হচ্ছে। আর জমিতে তা কৃষকদের ১০ থেকে ১১ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। যে আলুর আবাদে কৃষকরা চড়া দামে আলুর বীজ ও কিটনাশক, সার ও শ্রমিক খরচ বিনিয়োগ করেছিল। এখন সেই আলু তুলে তাদের গোলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ উপজেলার আরেক কৃষক এনামুল বলেন, ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি, কিন্তু দাম এতটা কম হবে ভাবিনি। তাই ৭০দিন বয়সী আলু তুলেছি। ফলন হয়েছে ১২০ মণ করে। দাম কম হওয়ায় উৎপাদন খরচই উঠবেনা। এবার আলু চাষে অনেক টাকা লোকসান গুনতে হবে।
নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা গাজীউল হক বলেন, চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করেছে কৃষক। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাই এবছরে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।