রবিবার ১৭ আগস্ট ২০২৫ ২ ভাদ্র ১৪৩২
রবিবার ১৭ আগস্ট ২০২৫
অপ্রয়োজনীয় টেস্ট না দিতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান আইন উপদেষ্টার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫, ৫:৫৮ PM
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, রোগীদের অপ্রয়োজনীয় ও অযথা স্বাস্থ্য পরীক্ষা দিয়ে অতিরিক্ত অর্থলাভের প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। 

তিনি বলেন, রাষ্ট্রের প্রাথমিক যে দায়িত্ব সেখানে দুইটি কথা বলা হয়েছে। একটা হচ্ছে নিউট্রিশনের মান ক্রমানয়ে উন্নত করা, আরেকটা হচ্ছে জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যের কথা বলা আছে। এছাড়া নাগরিকদের ৫টি মৌলিক অধিকার তারমধ্যেও রয়েছে নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা। আমরা যেটা করতে পারি নাই সেটা বেসরকারি খাতে অনেক ভালোভাবে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। 

শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর মিন্টু রোডে অবস্থিত শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে দেশের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএইচসিডিওএ) এর নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।

দেশের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএইচসিডিওএ) এর  নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন ভূঁইয়া ডাম্বেল।

আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশের কোন মানুষটা বিদেশে যেতে চায়। দেশে সেবা পেলে কেন বিদেশে যাবে। আমার অনুরোধ এখন আপনারা যে লাভ করেন সেখান থেকে ১০ শতাংশ লাভ কম করেন। সেই টাকা হাসপাতাল, নার্সসহ অন্যান্য কর্মচারীদের মন ভালো করতে ব্যয় করুন।

তিনি বলেন, দেশে চিকিৎসা নিয়েই ভালো সেবা পেয়েছি—কারণ মানুষ আমাকে চেনে। কিন্তু সাধারণ মানুষ কি একই সেবা পাচ্ছেন? রোগীর কথা শোনার বদলে ডাক্তাররা অনেক সময় ১৪-১৫টি টেস্ট ধরিয়ে দেন, নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ কিনতে বলেন। এসব বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ডাক্তারদের পৃথিবীর কোন দেশে বেসরকারি হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়া থাকে? ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির দালাল? দেশের বড় বড় ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির মধ্যস্বত্বভোগী? কোন জায়গায় নামিয়েছেন নিজেদের? এ ছাড়া ডাক্তাররা অভিযোগ করে টেস্টের রেজাল্ট ভুল।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায়সঙ্গত মুনাফা নিশ্চিতে নীতিমালা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, অন্যায় মুনাফা কাম্য নয়, স্বাস্থ্য খাতে এটি বন্ধ করা হবে।

অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান আরও বলেন, অর্থনৈতিক বৈষম্যের পরেই সবচেয়ে বড় হচ্ছে স্বাস্থ্যখাতের বৈষম্য। এজন্য স্বাস্থ্যখাতের পুনর্গঠন কর্মকাণ্ডে এটিকে আমরা জাতীয় স্বাস্থ্যখাত বলছি, সরকারি না। সরকারি-বেসরকারিসহ লাভজনক-অলাভজনক প্রতিষ্ঠান—সবাই মিলে ১৮ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য একটি রূপান্তর প্রক্রিয়া চলমান। এই প্রক্রিয়ায় যার যার অবস্থান থেকে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, মুনাফার জন্য স্বাস্থ্যখাত, অ-মুনাফার জন্য স্বাস্থ্যখাত এবং সেবার জন্য স্বাস্থ্যখাত—এই তিনটি খাতের মধ্যে একটি যথাযথ সমন্বয় বাংলাদেশকে একটি জাতীয় স্বাস্থ্যখাতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। দেশের সকল বিশেষজ্ঞের মত নিয়ে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে একটি মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া, এই রূপান্তরই হচ্ছে আমাদের অঙ্গীকার।

তিনি আরও বলেন, সরকারিহাসপাতালগুলোতে  ১০-১২ হাজার রুগী শয্যা ছাড়া ফ্লোরে সেবা নিচ্ছেন। এই সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত মানুষের ক্ষোভ প্রশমন সম্ভব না। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একই মানে নিয়ে আসার উদ্যোগ চলমান উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন বিশেষ সহকারী।

তিনি বলেন, অনেক স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে একজন নার্স ১২ হাজার টাকায় চাকরি করেন জানিয়ে অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, এটি কাম্য নয়। বেসরকারি পর্যায়ে  কোনো বেতন কাঠামো নেই। এখানে বৈষম্য দূর করতে একটি বেতন বোর্ড গঠন করা হবে। স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে হামলা ও চিকিৎসক নিগ্রহের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকল নির্যাতনই অন্যায়। তবে নারী নির্যাতন নিশ্চয় বড় অন্যায়। একইভাবে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় বড় ধরনের শাস্তির বিধান রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে সারাদেশে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার অভিযোগে চিকিৎসক বা হাসপাতালে মালিকদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা বা গ্রেফতার না করার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রাইভেট হসপিটাল, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএইচসিডিওএ) সাধারণ সম্পাদক ও ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম।

ডা. এ এম শামীম আরও বলেন, ভুল চিকিৎসার অভিযোগে তদন্ত ছাড়া কাউকে গ্রেফতার না করতে অনুরোধ করছি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে। তিনি এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন। সেবা দিতে গেলে কিছু অভিযোগ থাকবে। তবে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিলে আমার কোনো আপত্তি নেই। 

তিনি আরও  বলেন, আগামী এক বছর পঁচিশ থেকে একশ কোটির টাকার ইন্স্যুরেন্সের আওতায় দরিদ্র রোগীদের সেবা নিশ্চিত করা হবে। আগামী এক বছর পঁচিশ থেকে একশ কোটির টাকার ইন্স্যুরেন্সের আওতায় দরিদ্র রোগীদের সেবা নিশ্চিত করা হবে।

সভায় জানানো হয়, বছরে ৪-৫ বিলিয়ন ডলার চিকিৎসা বাবদ দেশের বাইরে চলে যায়। এই ব্যয় নিয়ন্ত্রণে এবং দেশের স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান বৃদ্ধিতে সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগ জোরদার করতে হবে।  

দেশে তিন ভাগের দুই ভাগ স্বাস্থ্যসেবা বেসরকারি পর্যায়ে হচ্ছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সেবা নিশ্চিত হচ্ছে। দেশে ৯৯ শতাংশ বিশেষায়িত সেবা দেশেই সম্ভব হবে।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত