সংযুক্ত আরব আমিরাতের উত্তর প্রদেশ রাস আল খাইমাহ—অসংখ্য বাংলাদেশি শ্রমজীবী মানুষের কর্মক্ষেত্র। কঠোর পরিশ্রম আর দুঃসাধ্য জীবনযুদ্ধের এই প্রবাসে প্রবাসীদের আপদে-বিপদে নির্ভরতার ঠিকানা হয়ে উঠেছে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ, রাস আল খাইমাহ প্রাদেশিক শাখা। দাওয়াতি কাজের পাশাপাশি মানবিক সহায়তামূলক কর্মকাণ্ডে এই শাখাটি ইতোমধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে আস্থার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রবাসী কোনো বাংলাদেশি ছোট-বড় দুর্ঘটনা, হঠাৎ অসুস্থতা বা আইনি জটিলতায় পড়লে প্রথমেই যে সংগঠনটির নাম আসে, তা হলো গাউসিয়া কমিটি। শ্রমিক, ড্রাইভার, টেকনিশিয়ান বা অফিস-সহকারী—সব পেশার মানুষই এখান থেকে পাচ্ছেন সমান সহযোগিতা।
স্বেচ্ছাসেবীরা দিন-রাত না দেখে আহতকে হাসপাতালে নেওয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পন্ন করা, আর্থিক সহায়তা দেওয়া, এমনকি রুম পরিবর্তন বা কর্মস্থলের সমস্যায় পরামর্শ দেওয়ার মতো নানা কাজে পা বাড়িয়ে দেন। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে একযোগে কাজ করে সংগঠনের কর্মী ও নেতারা দ্রুত সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন।
প্রবাসে কোনো মৃত্যু ঘটলে পুরো প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং ব্যয়বহুল। এমন পরিস্থিতিতে গাউসিয়া কমিটি রাস আল খাইমাহ শাখা মানবিকতায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মৃত ব্যক্তির কর্মস্থল, হাসপাতাল, পুলিশ স্টেশন, মরচুয়ারি ও দূতাবাস—সকল জায়গায় একযোগে যোগাযোগ করে দ্রুত কাগজপত্র সম্পন্ন করেন। আর্থিক সংকট থাকলে সংগঠনের পক্ষ থেকে তহবিল গঠন করা হয় এবং সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করে মরদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
অনেক পরিবার দেশে বসেই জানতে পারে—“গাউসিয়া কমিটি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছে”—যা অসহায় মুহূর্তে তাদের বড় এক মানসিক সাপোর্ট দেয়।
সংগঠনের রাস আল খাইমাহ প্রাদেশিক শাখার সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, “গাউসিয়া কমিটি শুধু সামাজিক সংগঠন নয়, এটি প্রবাসীদের জন্য মানবিক আশ্রয়স্থল। আমরা মনে করি, দেশের বাইরে এসে যে কষ্টের মধ্য দিয়ে সবাই জীবনযাপন করেন, সেখানে সামান্য সহযোগিতাও তাদের জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তাই আমরা চেষ্টা করি যেন কোনো প্রবাসী নিজেকে একা মনে না করে। মানবসেবা আমাদের ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব।”
প্রাদেশিক শাখার সেক্রেটারি মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো প্রবাসীরা। তাদের সুরক্ষা ও কল্যাণে পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য। ভবিষ্যতে জরুরি সেবা ইউনিট, চিকিৎসা সহায়তা সেল এবং আইনি পরামর্শ কেন্দ্র আরও সুসংগঠিতভাবে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা চাই, কোনো প্রবাসী বিপদে পড়লে প্রথমেই মনে করুক—‘গাউসিয়া কমিটি আছে।’”
মানবিক কাজের পাশাপাশি সংগঠনটি নিয়মিত আয়োজন করে মিলাদ, দোয়া-মাহফিল, ইসলামী আলোচনা, কোরআন শিক্ষা ও দাওয়াতি সেমিনার। প্রবাসের ব্যস্ততার মাঝেও এসব আয়োজন প্রবাসীদের মধ্যে মনোবল, ধর্মীয় চেতনা ও সামাজিক বন্ধনকে শক্তিশালী করে।
দুঃখ-সুখে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর এই পরিবেশ প্রবাসীদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।
বাংলাদেশে গাউসিয়া কমিটির বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রম রয়েছে—দুঃস্থ পরিবারের সহায়তা, শীতবস্ত্র বিতরণ, বন্যা–ত্রাণ, চিকিৎসা সহায়তা, দরিদ্র ছাত্রদের সহযোগিতা ইত্যাদি। রাস আল খাইমাহ শাখা নিয়মিতই এসব কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে।
প্রবাস জীবন কখনোই সহজ নয়। দূরদেশের মাটিতে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ আর অনিশ্চয়তার মধ্যেই দিন কাটে বাংলাদেশি প্রবাসীদের। এমন পরিস্থিতিতে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ–রাস আল খাইমাহ প্রাদেশিক শাখা হয়ে উঠেছে তাদের আস্থার বুকে এক উজ্জ্বল নাম।
মানবতার সেবা, দাওয়াতি কার্যক্রম এবং প্রবাসীদের সংকটে এগিয়ে আসা—সব মিলিয়ে সংগঠনটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে এক আত্মবিশ্বাস ও নিরাপত্তা তৈরি করেছে। প্রবাসে বিপদের দিনে প্রথম ভরসা—গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ, রাস আল খাইমাহ শাখা।