সোমবার ১০ নভেম্বর ২০২৫ ২৬ কার্তিক ১৪৩২
সোমবার ১০ নভেম্বর ২০২৫
সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি কমতে শুরু হওয়ায় দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন
সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:০২ AM
যমুনা নদীর আচরণ বড়ই বিচিত্র এসব জানে নদী পাড়ের মানুষ। একুল ভাঙ্গেতো ওকুল গড়ে এটাই নদীর খেলা। এ বছর তেমন বড় বন্যা হয়নি যমুনা নদীতে একটু পানি বেড়েছিলো তার মাঝে কিছু এলাকায় নদী ভাঙ্গছে। কিন্তু এখন কমে গেছে যমুনার পানি। পানি কমতেই বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। এতে আতঙ্কে দিন কাটছে নদী পারের মানুষেরা।

সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের চরঘাগুয়া উওর টেংরাকুরা নামক স্থানে নদীর ভাঙনের পরিমাণ বেশি বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বগুড়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিষয়টির খোঁজখবর রাখছেন তাঁরা। ভাঙ্গন রোধের বরাদ্দের জন্য এরই মধ্যে বিষয়টি পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, গত পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ বিঘা আবাদী জমি নদী গর্ভ বিলীন হয়ে গেছে। অতীতে অনেক সময় কিছুটা ভাঙলেও বর্তমানের মতো এভাবে নদীভাঙনের দৃশ্য দেখা যায়নি। যমুনা নদী হয়ে বন্যার পানি তীব্র স্রোতে নামা ও নদীর মাঝে চর জাগার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, বর্তমানে ওই এলাকায় নদীভাঙনের ঝুঁকিতে আছে অর্ধশতাধিক পরিবারসহ কৃষিজমি। দ্রুতই ভাঙন রোধ করা না গেলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে কয়েকটি গ্রাম সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এ নিয়ে নদীপারের মানুষের নির্ঘুম রাত কাটছে।

স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা কালাম মন্ডল বলেন, চর ঘাগুয়ায় আবাদী জমি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। এভাবে আর কিছুদিন ভাঙ্গতে থাকলে নদীর তীরবর্তী ঘরবাড়ি ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। গত কয়েক দিনে অনেকে আবাদী জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। নদীর তীরবর্তী পরিবার গুলো নদীভাঙনের আতঙ্কে রাত জেগে থাকছে।

কাজলা ইউনিয়ন ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ আনিছ মোল্লা বলেন, যেভাবে নদী ভাঙছে, এতে আরও অনেক বাড়িঘরে খুব কাছাকাছি নদী এসে গেছে।  দ্রুত ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে নতুন করে ভাঙন শুরু হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এসে এগুলো দেখে গেছে। তারপরেও বর্তমানে পরিবার নিয়ে খুব আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।

কাজলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, চরঘাগুয়া যে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে অতি দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বসতি স্থাপনা গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ যমুনা নদীর যে চরগুলো জেগে ওঠে তার বেশির ভাগই হচ্ছে শুধু বালু আট বালু। এছাড়াও এসব এলাকা ধান, মরিচ, মাষকলাই,কাউন, খেরাচী, মসুর, ভুট্টাসহ নানা ফসলের চাষ হতো। কৃষিজ উৎপাদনের পাশাপাশি পশুপালন ও হাঁস-মুরগি লালন করে স্থানীয়রা জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক ভাঙনে জীবিকার সব উৎস ধ্বংস হয়ে গেছে। ইউনিয়নের যমুনা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি এবং ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

এ বিষয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.আতিকুর রহমান বলেন, যমুনা ভাঙ্গণরোধে ব্যবস্থা নিতে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। তারা আজকে এসেছিলো সরেজমিনে দেখে গিয়েছে। যেসব ব্যাবস্হা গ্রহন করা দরকার ভাঙনরোধে তা নেওয়া হবে অতিদ্রুত। এছাড়া ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে জরুরি প্রয়োজনে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে ত্রান সহায়তা বিতরণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন,আমরা এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখছি। এরই মধ্যে নদীর পাড়ের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।  নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. আশরাফ আলী
কর্তৃক এইচবি টাওয়ার (লেভেল ৫), রোড-২৩, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল : ০১৪০৪-৪০৮০৫২, ০১৪০৪-৪০৮০৫৫, ই-মেইল : thebdbulletin@gmail.com.
কপিরাইট © বাংলাদেশ বুলেটিন সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত