গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বন্যপ্রাণী শিয়ালের সঙ্গে মানুষের গড়ে উঠেছে ব্যতিক্রমী ভালবাসা। এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কাপাসিয়া সদর ইউনিয়নের সু্র্য্যনারায়নপুর কাওলারটেক গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের সাথে। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর, কিন্তু প্রাণীপ্রেম থেকেই শুরু করেন এই অদ্ভুত শখের পালন।
এই অনন্য উদ্যোগ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই বলছেন— মানুষ যদি ভালোবাসা দেয়, বন্য হিংস্র প্রাণীও হতে পারে মানুষের বন্ধু।
শনিবার বিকালে গিয়াসউদ্দিন বাংলাদেশ বুলেটিনকে জানান, বছর খানেক আগে বনে আহত অবস্থায় দুই মাস বয়সী একটি শিয়ালছানা দেখতে পায় তিনি। সেটিকে বাড়ীতে নিয়ে আসেন এবং খাবার পানি দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। এরপর থেকেই শিয়ালটিকে তিনি নিজের পালিত প্রাণীর সাথে সহাবস্থানে রাখতে শুরু করেন।
তিনি বলেন, “প্রথমে শিয়ালটি খুব ভয় পেত, কিন্তু এখন একদম অভ্যস্ত হয়ে গেছে। মোরগ, ছাগলের মতোই খাবার দিই—মাছ, মাংস যা পায় তাই খায়। এখন সে আমাকে চিনে ফেলেছে, আয় বলে ডাকলে সাড়া দেয়।”
স্থানীয়রা প্রথমে অবাক হলেও এখন নিয়মিত শিয়ালটি দেখতে আসেন অনেকে। বাড়িতে ভিড় জমায় এই “পোষা শিয়াল” দেখার জন্য।
কাপাসিয়া-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে দুই কিলোমিটার অদূরে তার বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টিতে ভিজে তিনি কলা বাগানে কাজ করছেন। তার সাথে শিয়ালটি ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
গিয়াসউদ্দিন বলেন, “আমি কোনো ব্যবসার জন্য শিয়াল পালন করছি না। ওকে আমি সন্তানসম ভালোবাসা দিয়ে থাকি। আমি এটাকে জঙ্গলে দিয়ে আসলেও সে দৌড়ে বাড়ীতে চলে আসে। বর্তমানে সমস্যা হলো আমি যেদিকে যাই সে সেদিকে যেতে চায়। আমি বাজারে গেলে সে বাজারে যেতে চায়। আমি মানুষের বাড়িতে কাজে গেলে সে আমার সাথে যেতে চায়। সে চাইলেও আমি তাকে নিয়ে যেতে পারি না। অনেক সময় রাতে বাড়িতে আসতে আমার দেরি হয়ে গেলে সে বাড়ির এককোনে বসে অপেক্ষা করতে থাকে।
গিয়াস উদ্দিন আরো বলেন, মানুষকে খাওয়ালে পড়াইলে একটু ভুল করলে সেই মানুষ রাগ করবে কিন্তু এই শিয়াল আমার সাথে কখনো রাগ করে না। শিয়ালের সাথে আমার একটা মায়া জন্মে গেছে। তবে তার খাবারের জন্য কিছুটা খরচ হয়। কেউ গরু ছাগল জবাই করলে সেখান থেকে অল্প মাংস এবং মাঝে মাঝে মাছ কিনে আনতে হয়। । মানুষ আমাকে অনেক সময় পাগল বলে, আসলে আমি পাগল না, আমি দিনমজুর। মানুষের বাড়িতে কাজ করে খাই। সে আমার ছাগল, মোরগ, গরুর সাথে হাঁটাহাঁটি করে। গরু-ছাগলের ঘাস খাওয়া শেষ হলে শিয়াল তাঁদের সন্ধ্যার আগে বাড়ীতে নিয়ে আসে। বাড়ির মোরগগুলো দেখাশোনা করে রাখে। গভীর জঙ্গলের ভিতরে আমার বাড়ি। অন্য কোনো প্রানী যাতে আক্রমণ করতে না পারে সেই খেয়ালও রাখে সে। প্রতিবেশীর কোন ক্ষতি করে না। তবে এলাকার মানুষজন মাঝে মাঝে অনেক সমালোচনা করে থাকে। ভালো কিছু করতে চাইলে মানুষ সমালোচনা করবে তাতে আমি কিছুই মনে করিনা।
পার্শ্ববর্তী পাবুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মালেকের ছেলে লিটন মিয়া (৪২) বলেন, কয়েক মাস আগে শুনেছি গিয়াস উদ্দিন শিয়াল পালন করে। তার পালিত শিয়াল মানুষের কোন ক্ষতি করে না। মোরগ ছাগল দেখাশোনা করে রাখে। গিয়াসউদ্দিনের বাড়িতে গিয়াস উদ্দিন ছাড়া অন্য আর কেউ থাকেনা।
শরীফ মোমতাজ উদ্দিন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও প্রাণী বিশেষজ্ঞ তাজ উদ্দীন আহমদ বলেন, শিয়াল সাধারণত বন্য প্রাণী হওয়ায় ঘরে পালন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। দুই কারণে শিয়াল মানুষের সংস্পর্শে আসতে পারে। খাদ্য সংকট ও অন্য প্রজাতির দ্বন্দ্বে। তবে যদি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে যথাযথ যত্ন ও খাদ্য সরবরাহ করা হয়, তাহলে বন্যপ্রাণী শিয়ালও মানুষের সান্নিধ্যে থাকতে পারে।
কাপাসিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের ভেটেরিনারি সার্জন ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এটা হিংস্র প্রাণী ও বন্যপ্রাণী। এটা লালন পালন করতে হলে প্রাণীটিকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। তাছাড়া অবশ্যই বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন মানতে হবে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে খোঁজ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।